জ্ঞানের ইসলামীকরণের পর্যালোচনা

মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব মূলত জ্ঞানগত

বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানিত জীব মানুষ।[1] এই সম্মান প্রথম লাভ করেন হযরত আদম (আ)। এই মহাসম্মান অর্জন করার কারণ হলো বিশ্বজগত সম্পর্কে তিনি অন্যদের চেয়ে বেশি জানতেন।[2] আল্লাহ তায়ালা আদমকে (আ) সর্বপ্রথম শিখিয়েছেন সমস্ত কিছুর নাম।[3] যেহেতু জ্ঞানের প্রথম স্তর বস্তুর নাম জানা ও পরিভাষা শেখা, তাই আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম আদমকে (আ) তা-ই শেখালেন। তিনি ইচ্ছা করলে আদমকে (আ) সর্বপ্রথম ধর্ম সম্পর্কিত জ্ঞান শেখাতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি, বরং আদমকে (আ) শিখিয়েছেন বিশ্বজগতের জ্ঞান। যার ফলে আদম (আ) ও তাঁর বংশধর হয়েছেন পৃথিবীতে সবচেয়ে সম্মানিত জীব।

মানবজাতির কাছে তখনো কোনো ধর্ম প্রকাশ হয়নি। কেবল বিশ্বজগতের জ্ঞান অর্জনের ফলেই আল্লাহ তায়ালা আদমকে (আ) পৃথিবীর খলিফা বানিয়ে দিলেন।[4] এবং ইবলিসের বিপরীতে আদম (আ) হলেন আল্লাহ তায়ালার একান্ত অনুগত বান্দা। লক্ষণীয় যে, আদমের (আ) বিশ্বজ্ঞান তাঁকে আল্লাহর অনুগত হবার ক্ষেত্রে কোনো বাধা সৃষ্টি করেনি; বরং আল্লাহ তায়ালার সঠিক পরিচয় জানার ক্ষেত্রে এই জ্ঞান তাঁকে সাহায্য করেছিল। অন্যদিকে, ইবলিস আল্লাহ তায়ালার আদেশ অমান্য করেছিল। এর প্রথম কারণ– সে আদমের (আ) মতো জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান ছিল না; দ্বিতীয়ত, ইবলিসের জ্ঞানের চেয়ে অহংকার ছিল বেশি। ফলে সে নিজ-জ্ঞানলব্ধ সত্যকে অস্বীকার করেছিল।[5]

আল্লাহ তায়ালা যদি পৃথিবীতে কোনো ব্যক্তি বা জনগোষ্ঠীকে মর্যাদা ও কল্যাণ দান করতে চান, তাহলে তিনি তাঁদেরকে জ্ঞান দান করেন।[6] জ্ঞান ও প্রজ্ঞার ফলেই মানবজাতির মধ্যে কেউ কেউ বিশ্বজগত ও প্রকৃতির ওপর নিজেদের রাজত্ব কায়েম করতে পারে। এবং সঠিকভাবে আল্লাহর দেয়া খিলাফতের দায়িত্ব পালন করতে পারে। হযরত দাউদ ও সোলায়মানকে (আ) আমরা উদাহরণ হিসাবে পেশ করতে পারি। আল্লাহ তায়ালা তাঁদের উভয়কে জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দিয়েছিলেন বলেই তাঁরা বিশ্বজগত ও প্রকৃতির ওপর নিজেদের রাজত্ব কায়েম করতে পেরেছিলেন।[7] তাঁরা কেবল মানুষের ভাষা বুঝতেন, মানুষের নেতৃত্ব দিতেন– তা নয়; তাঁরা পশু-পাখি এমনকি প্রকৃতিরও ভাষা বুঝতেন[8] এবং তাদের ওপরও রাজত্ব করতেন।

হযরত সোলায়মানের (আ) সাথে রানী বিলকীসের ঘটনাটি সবার জানা। হযরত সোলায়মান (আ) যখন তাঁর পরিষদবর্গকে বললেন, তোমাদের মধ্যে কে পারবে রানীর সিংহাসনটি এ মুহূর্তে আমার সামনে এনে দিতে?[9] সোলায়মানের (আ) এ কাজটি কেবল সেই সম্পাদন করতে পেরেছিল, যে ছিল পরিষদবর্গের মাঝে সবচেয়ে জ্ঞানী।[10] কোরআনে এ ধরনের অনেক ঘটনা আছে, যেগুলো স্বাভাবিকভাবে অলৌকিক মনে হতে পারে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার প্রতিটি কাজেরই জ্ঞানগত একটি কার্যকারণ বিদ্যমান থাকে। আমরা আমাদের জ্ঞানগত যোগ্যতানুযায়ী তা বুঝার সামর্থ্য অর্জন করি।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু সালামের (রা) ঘটনা

মদীনায় ইহুদীদের মধ্যে সবচেয়ে জ্ঞানী ও বড় নেতা ছিলেন আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রা)। রাসূল (সা) মদীনায় হিজরতের পরপরই তিনি এসে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি রাসূলকে (সা) বলেন, “আমি ইহুদীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী এবং একজন বড় জ্ঞানী ইহুদীর সন্তান। আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি এ কথাটা জানাজানি হওয়ার আগে আপনি ইহুদী সম্প্রদায়কে ডাকুন, আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করুন এবং আমার সম্পর্কে তাদের ধারণা অবগত হউন। রাসূল (সা) ইহুদী সম্প্রদায়কে ডেকে পাঠালেন। তারা উপস্থিত হওয়ার পর রাসূল (সা) তাদের বললেন– তোমরা সেই আল্লাহকে ভয় করো, যিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তোমরা নিশ্চয়ই জানো যে, আমি সত্য রাসূল এবং সত্য নিয়েই তোমাদের নিকট এসেছি। সুতরাং তোমরা ইসলাম গ্রহণ করো। তারা জবাবে বলল– আমরা এসব জানি না। তারা বারবার নিজেদের অজ্ঞতা প্রকাশ করতে লাগলো। এবার রাসূল (সা) বললেন– তোমাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনু সালাম কেমন লোক? তারা বলল– তিনি আমাদের নেতা এবং নেতার সন্তান। তিনি আমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী এবং জ্ঞানীর সন্তান। রাসূল (সা) তখন বললেন– তিনি যদি ইসলাম গ্রহণ করেন তবে তোমাদের মতামত কী হবে? ইহুদীরা বলল– আল্লাহ হেফাজত করুন। তিনি ইসলাম গ্রহণ করবেন তা কিছুতেই হতে পারে না। রাসূল (সা) আবার বললেন– আচ্ছা বলো তো, আবদুল্লাহ ইবনু সালাম যদি সত্যিই মুসলিম হয়ে যান তবে তোমরা কী মনে করবে? তারা বলল– আল্লাহ রক্ষা করুক। তিনি মুসলিম হয়ে যাবেন এ কিছুতেই সম্ভব নয়। এবার রাসূল (সা) বললেন– হে ইবনু সালাম! তুমি এদের সামনে বের হয়ে আসো। ইবনু সালাম বের হয়ে আসলেন এবং বললেন– হে ইহুদী সম্প্রদায়! আল্লাহকে ভয় করো। ঐ আল্লাহর কসম, তিনি ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই। তোমরা নিশ্চয়ই জানো, তিনি সত্য রাসূল; সত্য নিয়েই তিনি আগমন করেছেন। ইহুদীরা এবার বলে উঠলো– আবদুল্লাহ ইবনু সালাম! তুমি মিথ্যাবাদী।[11]

জ্ঞান ও ঈমানের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য

কোরআন ও হাদীসের এ বর্ণনাগুলো থেকে একেবারেই স্পষ্ট হওয়া যায় যে, জ্ঞান মাত্রই মানুষকে ইসলামের পথে নিয়ে আসে। আর অজ্ঞতা বা স্বল্প জ্ঞান মানুষকে কুফরির পথে নিয়ে যায়। কোরআন-হাদীসের পাতায় পাতায় জ্ঞান ও জ্ঞানীর বর্ণনা দেয়া হয়েছে।[12] জ্ঞানের স্বভাব ও জ্ঞানীর বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে। কোরআনে বলা হয়েছে, জ্ঞানীরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে বিশ্বাস করে।[13] তারা আল্লাহকে ভয় করে।[14] ধন-সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে।[15] তারা বিশ্বাস করে পৃথিবীতে যা কিছু আছে সব আল্লাহর।[16] তারা জুমার দিনে আজানের পর বেচাকেনা বন্ধ করে দেয়।[17] একইভাবে কোরআনের দাবি হলো– জ্ঞানীরা বিশ্বজগত ও প্রকৃতি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে।[18] এখানে গুরুত্বের সাথে লক্ষণীয় একটি বিষয় হলো– পুরো কোরআনে একটিবারের জন্যেও জ্ঞান শব্দটিকে কিঞ্চিৎ নেতিবাচক অর্থে ব্যবহার করা হয়নি। কোরআনে যখনি জ্ঞান ও জ্ঞানী সম্পর্কিত কোনো কথা এসেছে, তখনি আল্লাহর কোনো না কোনো অনুগত বান্দার বৈশিষ্ট্য হিসাবে তা উল্লেখ করা হয়েছে।[19] বিশ্বজগৎ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন বা বিশ্বজগত নিয়ে চিন্তা-ভাবনাকে আল্লাহ তায়ালার পরিচয় লাভের উত্তম উপায় হিসাবে ইসলাম চিহ্নিত করেছে। একই সাথে কাফেরদের ভর্ৎসনা করা হয়েছে এই বলে যে তারা কি চিন্তা-ভাবনা করে না?[20] তারা কি জ্ঞান রাখে না?[21] তারা কি বিশ্বজগতের জ্ঞানকে অস্বীকার করে?[22] তারা কি দেশ-বিদেশে ভ্রমণ করে না?[23]

জ্ঞান মাত্রই ভালো বা ইসলামিক

জ্ঞান মূলত মানুষকে প্রকৃতির স্বভাব জানতে সাহায্য করে এবং বিশ্বজগতের সাথে পরিচয় ঘটিয়ে দেয়। অন্যভাবে বললে, বিশ্ব-স্বভাব-প্রকৃতি জানার নামই জ্ঞান। ইসলাম সেই স্বভাব-প্রকৃতির ধর্ম। রাসূলের (সা) নীতি হচ্ছে– যে ‘জ্ঞান’ পৃথিবী ও বিশ্বজগতের নিয়মের বাইরে এবং মানব মনে সন্দেহ সৃষ্টি করে, তা মেনে নেয়া অন্যায় ও পাপ। অন্যদিকে, যে ‘জ্ঞান’ বিশ্বজগত বুঝতে সহায়ক এবং মানব মনে জেগে ওঠা প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব দেয়, তা ন্যায় এবং তাই পুণ্য।[24]

এ পর্যন্ত আলোচনার পর খুব সহজে একটি অনুসিদ্ধান্তে আসা যায় যে জ্ঞান মাত্রই ভালো বা ইসলামিক। তাই জ্ঞানকে ইসলামীকরণ করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু এরই সাথে আরেকটি প্রশ্ন ওঠা খুব স্বাভাবিক যে তাহলে পৃথিবীর বড় বড় সব জ্ঞানী কাফের বা নাস্তিক হয় কেনো? প্রবন্ধের পরবর্তী অংশে সে বিষটি আমরা বোঝার চেষ্টা করব।

জ্ঞান ও অহংকারের সম্পর্ক বিপরীতমুখী

আদম (আ) ও ইবলিসের আদি ঘটনাটির দিকে আবার দৃষ্টি ফেরানো যাক। আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে তাদের উভয়ের জ্ঞান ছিল সমান। কিন্তু আদম (আ) তাঁর জ্ঞানের কারণে আল্লাহ তায়ালার অনুগত বান্দা হতে পারলেও ইবলিস হয়েছে কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত। এর কারণ কী? জ্ঞান থাকা সত্বেও ইবলিশ কেনো কাফের হলো? তার দুটি জবাব হতে পারে। প্রথমত, আল্লাহ তায়ালা ইবলিশকে আদমের (আ) মতো বিশ্বজ্ঞান দান করেননি।[25] ফলে অল্পবিদ্যা তার জন্যে ভয়ংকর বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। দ্বিতীয়ত, অজ্ঞতাবশত সে অহংকার করে বসল। সূত্র হলো– জ্ঞান ও অহংকার একে অন্যের ব্যস্তানুপাতিক। জ্ঞান বাড়লে অহংকার কমে এবং অহংকার বাড়লে জ্ঞান কমে যায়। ইবলিশের যেহেতু অহংকার বেশি ছিল, তাই সে প্রকৃত জ্ঞানী হতে পারেনি। এ কারণেই সে আল্লাহর শত্রু বনে গেল। অল্পস্বল্প যে জ্ঞান ইবলিশের ছিল, তাও সে অস্বীকার করার ফলে কাফের হয়ে গেল।[26] অর্থাৎ জ্ঞানের অভাব ও অহংকারের প্রভাব– এ দুইয়ের ফলেই ইবলিস কাফের হলো।

জ্ঞানের কাঠামো ক্রমসোপানমূলক (hierarchical)

এবার মুসার (আ) একটি ঘটনা উল্লেখ করা যাক। তিনি একবার বনী ইসরাঈলের এক সমাবেশে ভাষণ দিতে দাঁড়ালেন।[27] লোকেরা তাঁকে তখন জিজ্ঞাস করল– কে সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী? মুসা (আ) বললেন– আমি সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী। আল্লাহ তায়ালা মুসার (আ) উত্তরে অসন্তুষ্ট হলেন এবং তাঁকে সতর্ক করে দিলেন।[28] কেননা তিনি জ্ঞানকে আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত করেননি। আল্লাহ তায়ালা মুসাকে (আ) তাঁর চেয়েও বড় একজন জ্ঞানী হযরত খিজিরের (আ) নিকট পাঠালেন,[29] যেন মুসা (আ) তাঁর জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কথা বুঝতে পারেন। যে কোনো জ্ঞানীর ওপর অন্য একজন জ্ঞানী থাকে।[30] জ্ঞান ও অহংকার একসাথে থাকতে পারে না। যখন কেউ নিজের জ্ঞানকেই একমাত্র জ্ঞান বলে প্রকাশ করে এবং অহংকার শুরু করে, তখন সে আর জ্ঞানী হবার যোগ্যতা রাখে না। এ জাতীয় মানুষগুলোকে সক্রেটিস বলতেন– গণ্ড মূর্খ। কেননা সে আসলে জানে না, সে কতটা বোকা।[31] পৃথিবীর যে কোনো জ্ঞানকে যদি সর্বশেষ ও একমাত্র জ্ঞান মনে করা না হয় এবং বাহ্যিক কার্যকারণের বাইরেও জ্ঞানের কিছু বিষয় অজানা থেকে যাবার সম্ভাবনাকে স্বীকার করা হয়, তাহলে সে জ্ঞান মানুষকে নিশ্চিত আল্লাহর দিকে নিয়ে যায়। কিন্তু মানুষ অহংকারবশত জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে না। ফলে সে হয়ে পড়ে অস্বীকারকারী বা কাফের। জ্ঞানের দ্বারা অর্জিত সত্যকে যে অস্বীকার করে, সেই কাফের। সুতরাং জ্ঞানের ইসলামীকরণের চেয়ে অধিক প্রয়োজন মনের ইসলামীকরণ।

জ্ঞানগত মতভেদের কারণ

উপরের কথাটি বুঝতে কারো বেগ পেতে হয় না। তবু আরেকটু সহজভাবে বলা যেতে পারে। জ্ঞান হচ্ছে বিভিন্ন উপাদানের সমষ্টি। যার কাছে এই উপাদানগুলো থাকে সে তার মতো ব্যবহার করে। কিন্তু জ্ঞানের উপযুক্ত ব্যবহার যারা করতে পারে, তারা কখনও বিপথে যেতে পারে না। অর্থাৎ জ্ঞান কখনো খারাপ হয় না। জ্ঞানকে ইসলামীকরণ করার প্রয়োজন পড়ে না; প্রয়োজন জ্ঞানের উপযুক্ত ও পূর্ণ ব্যবহার।

এখন আরও কিছু প্রশ্ন থেকে যায়। যেমন- জ্ঞান যদি মানুষকে সত্যিই আল্লাহর পথে নিয়ে যায়, তাহলে জ্ঞানীরা এত দলে-উপদলে বিভক্ত কেনো? তার মানে কি পৃথিবীতে অনেক প্রকারের জ্ঞান আছে? জ্ঞানের কি কোনো মৌলিক ও বৈশ্বিক ধারণা নেই? বিভিন্ন মানুষের কাছে জ্ঞান কি বিভিন্নভাবে ধরা দেয়? জ্ঞান মানুষের মাঝে কি ঐক্যের সৃষ্টি করে, নাকি ভিন্নতা তৈরি করে?— এ প্রশ্নগুলো জ্ঞানতাত্ত্বিকদের অনেকদিনের। তারা জানতে চায়– জ্ঞান আসলে কী!

জ্ঞান স্বভাবতই সমন্বয়ধর্মী

কোরআনের দাবি হলো– জ্ঞান ঐক্যের প্রতীক আর অজ্ঞতা বিভক্তির কারণ। জ্ঞানীরা গড়ে ঐক্য, মূর্খরা হয় বিভক্ত। জ্ঞান মানুষের মাঝে বিভেদ ঘটায় না, বিভেদ ঘটায় ‘জ্ঞানীদের’ পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ।[32] মনের কলুষতা, চিন্তার অপরিচ্ছন্নতা ও ভোগের চাহিদা ঘটায় মানুষে মানুষে মতভেদ। জ্ঞান কখনো মতভেদ ঘটায় না। জ্ঞান মানুষকে বিপথে নেয় না, মানুষকে বিপথে নেয় অহংকার ও অজ্ঞতা। অজ্ঞতা সকল অন্যায় ও অবিচারের মূল উৎস। তাই ইসলামের সংগ্রাম ছিল অজ্ঞতা বা জাহেলিয়াতের বিরুদ্ধে।

জ্ঞান ও ইসলামের সম্পর্ক অভিন্ন

ইসলাম এসেছে সত্যের জ্ঞান নিয়ে। তার প্রথম আদেশ– পড়।[33] ইসলামের সাথে জাহেলি বা মূর্খ যুগের প্রধান পার্থক্য হচ্ছে জ্ঞান। জাহেলি যুগে যিনি সর্বোত্তম ও শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি ছিলেন, ইসলামেও তাঁর মর্যাদা সর্বোত্তম ও শ্রেষ্ঠ। কেবল শর্ত হলো তাঁকে জ্ঞান অর্জন করতে হবে।[34] জ্ঞানশূন্য ইসলাম যেমন ইসলাম নয়, ইসলামশুন্য জ্ঞানও আসলে জ্ঞান নয়। জ্ঞান ও ইসলাম একে অপরের পরিপূরক, একটির অনুপস্থিতিতে অন্যটি হয়ে পড়ে নিষ্ক্রিয়। পৃথিবীর যে প্রান্তেই জ্ঞানের খনি থাকুক না কেনো তা প্রকৃত অর্থে ইসলামেরই হারানো সম্পদ। পৃথিবীর যে প্রান্তেই জ্ঞানের শব্দ শোনা যাক না কেনো তা প্রকারান্তরে ইসলামেরই শব্দ। অসম্পূর্ণ জ্ঞান মানুষকে নাস্তিকতার দিকে নিয়ে গেলেও পূর্ণ জ্ঞানপ্রাপ্তির পর মানুষ নিশ্চিত ঈমানের দিকে ফিরে আসে।

রেফারেন্স

[1] সূরা বনী ইসরাইল: ৭০

[2] সূরা বাকারা: ৩৩

[3] সূরা বাকারা: ৩১

[4] সূরা বাকারা: ৩০

[5] সূরা বাকারা: ৩৪

[6] হাদীস নং-৭১, জ্ঞান অধ্যায়, সহীহ বুখারী (ইফা),

[7] সূরা আন্বিয়া: ৭৯

[8] সূরা নামল: ১৫

[9] সূরা নামল: ৩৮

[10] সূরা নামল: ৪০

[11] হাদীস নং-৩৬৩০, আম্বিয়া অধ্যায়, সহীহ বুখারী (ইফা)

[12] সূরা রাহমান: ২। কিছু উদাহরণ– ২:১৮০, ২:১৮৪, ১৬:৯৫, ২১:৭, ২৩:১১৪, ২৩:৮৮, ২৩:৮৪, ৬১:১১; ৬২:৯, ৭১:৪,

[13] সূরা সফ: ১১

[14] সূরা ফাতির: ২৮

[15] সূরা তাওবা: ৪১

[16] সূরা মুমিনুন: ৮৪

[17] সূরা জুমা: ৯

[18] সূরা রাহমান: ১৩

[19] সূরা লোকমান: ১২

[20] সূরা আন্বিয়া: ১০

[21] সূরা আদিয়াত: ৯

[22] সূরা রাহমান: ১৩

[23] সূরা ইউছুফ: ১০৯

[24] হাদিস নং-২৭, ইমাম নববীর চল্লিশ হাদিস

[25] সূরা বাকারা: ৩৩

[26] সূরা বাকারা: ৩৪

[27] হাদীস নং-৩১৬২, আম্বিয়া অধ্যায়, সহীহ বুখারী (ইফা)

[28] হাদীস নং- ১২৪, জ্ঞান অধ্যায়, সহীহ বুখারী (ইফা)

[29] সূরা কাহাফ: ৬৫

[30] সূরা ইউছুফ: ৭৬

[31] সক্রেটিসের জবানবন্দি

[32] সূরা শূরা: ১৪

[33] সূরা আলাক: ১

[34] হাদীস নং- ৩১১৬, আম্বিয়া অধ্যায়, সহীহ বুখারী (ইফা)

জোবায়ের আল মাহমুদ
জোবায়ের আল মাহমুদ
ইসলামিক স্টাডিজে অনার্স করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বর্তমানে তুরস্কের উলুদাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজে (তাফসির) মাস্টার্সে অধ্যয়নরত।

সাম্প্রতিক

এ ধরনের আরো নিবন্ধ