মুসলিম ঐক্য: সমস্যা ও সম্ভাবনা
মুসলিম ঐক্যের ওপর ইসলামে সবিশেষে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আল কোরআনে বলা হয়েছে: “হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর যতটুকু ভয় করা উচিৎ এবং মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। তোমরা সম্মিলিতভাবে আল্লাহর রজ্জু শক্ত করে ধারণ কর, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।” বিদায় হজ্বের ভাষণে হযরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন: “হে ভ্রাতৃমন্ডলী, আমার বাণী মনোযোগ সহকারে অনুধাবন করতে চেষ্টা কর। জেনে রেখো, সকল মুসলমান পরস্পর ভাই ভাই। সবাই একই ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ। সমগ্র দুনিয়ার সকল মুসলমান একই অবিচ্ছেদ্য ভ্রাতৃসমাজ। স্মরণ রেখো, বাসভূমি ও বর্ণ নির্বিশেষে সকল মুসলমান সমান। আজ থেকে বংশগত কৌলিন্য প্রথা বিলুপ্ত হলো। পরস্পরের প্রাধান্যের একমাত্র মাপকাঠি হল খোদাভীতি বা সৎকর্ম। সে ব্যক্তিই তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে কুলীন, যে নিজ কার্য দ্বারা শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে।”[1] মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর্যুক্ত বাণী দ্বারা মুসলিম ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা, গুরুত্ব ও ঐক্যের ভিত্তি সম্পর্কে আমরা সম্যক ধারণা লাভ করতে পারি। কোনো সম্প্রদায়, সংগঠন কিংবা জাতির পক্ষে বড় কিছু অর্জন করতে হলে ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। এ কারণেই বলা হয় ঐক্যই শক্তি, অনৈক্যই দুর্বলতা।
আল্লাহই একমাত্র স্রষ্টা এবং হযরত মুহাম্মদ (সা) সর্বশ্রষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী– এ প্রত্যয়ে বিশ্বাসী ব্যক্তিবর্গকেই বর্তমানে মুসলিম বলে চিহ্নিত করা যায়। এখানে দেশ-কাল-পাত্রের কোনো ভেদাভেদ করা হয় না। আল্লাহর একত্ব এবং আল্লাহর প্রেরিত সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ (সা) এর মাধ্যমে প্রচারিত জীবনবিধান ইসলামকে অনুসরণের প্রচেষ্টাই মুসলিম হওয়ার নিশ্চয়তা বিধান করে। মুসলিম ঐক্য বলতে উপর্যুক্ত বিশ্বাসে বিশ্বাসী বিশ্বের সকল মুসলমানদের মধ্যে একতা, সম্প্রীতি ও সহমর্মিতার পরিবেশকে বোঝানো হয়ে থাকে।
আল কোরআন হচ্ছে ইসলামের মূল উৎস। ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্যে তাই মুসলমানদেরকে কোরআন অনুসারী ‘মুমীন’ হতে হবে। সত্যিকার ‘মুমীন’ তিনিই যিনি কোরআন নির্দেশিত এবং হযরত মুহাম্মদ (সা) প্রদর্শিত জীবনবিধান ইসলাম অনুসরণ করেন। এক কথায়, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ নিষেধ অনুযায়ী সামগ্রিক জীবন পরিচালনার মাধ্যমেই মুসলমানদের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। আল কোরআন ও রাসূল (সা) এর নির্দেশনা সকল মুসলমানদের পক্ষে সমরূপে অনুধাবনের অক্ষমতাই মুসলিম অনৈক্যের প্রধানতম কারণ বলে মনে করা হয়। কোরআনের ভাষা অত্যন্ত উঁচুমানের আরবী। অনারব ও অপ্রাজ্ঞ মুসলমানদের পক্ষে কোরআনের মর্মবাণী তেমনভাবে অনুধাবন সম্ভব নয়। এছাড়া কোরআনে এমন আয়াত রয়েছে (মুতাশাবিহাত) যেগুলোর মর্মার্থ মহান আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। এসব কারণে ইসলামের প্রথম যুগেই বিভিন্ন প্রশ্নে মুসলিম পণ্ডিতদের মধ্যেও মতানৈক্য দেখা দেয়। কাদারিয়া, জাবারিয়া, মুতাযিলা, আশারীয়া, সুফীবাদসহ ধর্ম, সমাজ ও রাজনীতি সংশ্লিষ্ট বহু প্রশ্নে মুসলমানদের মতান্তর ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। রাজনীতি ও নেতৃত্বের প্রশ্নে খ্যাতনামা সাহাবাগণের মধ্যে গুরুতর মতান্তরও ঘটেছিল।
ধর্মতত্ত্ব, ধর্মপালন পদ্ধতি, সমাজ ও রাজনীতির কিছু বিষয়সহ বিভিন্ন প্রশ্নে মুসলমানদের মধ্যে মতভেদ থাকলেও আল্লাহর একত্ব, সর্বশেষ নবী হিসেবে হযরত মুহাম্মদ (সা) এর শ্রেষ্ঠত্ব, কালিমা, নামাজ, রোজা, হজ্ব, জাকাত, পুনরুত্থান, পরকালীন শান্তি ও শাস্তি ইত্যাদি মৌলিক প্রশ্নে বিশ্বমুসলিমের মধ্যে ব্যাপক মতৈক্য রয়েছে। কিন্তু গৌণ বিষয় নিয়ে কিছু মতপার্থক্য যুগে যুগে মুসলিম ঐক্যকে নিদারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। মুসলমানরা নানা দল, উপদল, ফেরকায় বিভক্ত হয়েছে। মূলগত বিষয়ের ঐক্যের চেয়ে গৌণ বিষয়ের অনৈক্য মুসলিম জাহানকে করেছে ক্ষত-বিক্ষত। বিতর্কিত বিষয়াবলীতে সিদ্ধান্ত প্রদানের সর্বময় ক্ষমতাসম্পন্ন কোনো কেন্দ্রের অস্তিত্ব মুসলিম জাহানে নেই। এ কারণে কোরআন ও হাদীসের ব্যাখ্যা, সুন্নাহ, ইজমা, কিয়াস, ইজতিহাদলব্ধ জ্ঞান ইত্যাদি ক্ষেত্রে মুসলমানদের মধ্যে চূড়ান্ত মতৈক্য প্রতিষ্ঠা কখনও সম্ভব হয়নি। সম্ভবত কখনও সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে, মহান আল্লাহ ও তাঁর প্রেরিত রাসূল ব্যতীত অন্য কেউ অভ্রান্ত নন। এ কারণে কোরআন ও সর্বজন স্বীকৃত সহীহ হাদীসে বর্ণিত ধারণা ব্যতীত কোনো ধারণাই চূড়ান্ত এবং পূর্ণাঙ্গ নয়। মুসলিম ধর্মশাস্ত্রবিদ ও ধর্মীয় নেত্বত্ব এ বোধে স্বীকৃত হলে মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠা অনেক সহজ হবে বলে ধারণা করা যায়।
মুসলিম অনৈক্যের পেছনে অমুসলিমদের ষড়যন্ত্র একটি বড় কারণ বলে ধারণা করার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। ইসলামের আবির্ভাব পরবর্তীকাল থেকে মুসলমানদের সঙ্গে খ্রিষ্টান ও ইহুদী ধর্মাবলম্বীদের বৈরিতা চলে আসছে। উপমহাদেশসহ পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলে ইহুদী-খ্রিষ্টান ষড়যন্ত্রের বাইরে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের ষড়যন্ত্রও মুসলিম ঐক্যকে বিঘ্নিত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে চলেছে। মুসলমানদের বিভক্ত ও দাবিয়ে রাখার জন্যে অমুসলিম বৃহৎ শক্তিসমূহ মুসলমানদের ক্ষেত্রে এক নীতি এবং অমুসলিমদের ক্ষেত্রে ভিন্ন নীতি অনুসরণ করছে। কাশ্মীর ও পূর্ব-তিমুরের ক্ষেত্রে গৃহীত দ্বৈতনীতি তার এক প্রকৃষ্ট উদারহণ। ফিলিস্তিন, ইরাক, কসোভো, আফগানিস্তান, নাইজেরিয়া, আলজেরিয়া, সুদান ও ফিলিপাইনের ঘটনাবলী উপর্যুক্ত সত্যকে দিবালোকের মত স্পষ্ট করে। মুসলমানদের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কারণেই বর্তমান বিশ্বের উদ্বাস্তুদের ৯২ ভাগই মুসলমান।[2] মুসলমানদের স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে, বাইরের ষড়যন্ত্র অতীতে চলেছে, বর্তমানে চলছে এবং ভবিষ্যতেও চলবে। এ বিপদ সামনে রেখেই মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার শক্তি ও কৌশল অর্জন করতে হবে। মুসলমানদের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা ও ষড়যন্ত্র দূরীভূত করা সম্ভব হলে বহিঃষড়যন্ত্র মুসলিম শক্তি ও ঐক্যকে শত প্রচেষ্টা সত্বেও বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারবে না। এক্ষেত্রে মুসলমানদের পরকালীন জীবনের পাশাপাশি ইহকালীন জীবনের সুখ-সমৃদ্ধি ও গৌরব লাভের জন্যে শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে উৎকর্ষতা অর্জন, পরমত সহিষ্ণুতা, ছোটখাটো বিষয়ে মতানৈক্য পরিহার, বিভিন্ন মতের সমন্বয়, জনসমর্থনের উপর নির্ভরশীল বৈধ সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, জাতিরাষ্ট্রের সঙ্গে সঙ্গে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য প্রতিষ্ঠায় আন্তরিক হতে হবে।
ইসলাম ও রাজনীতির ঘনিষ্ট সম্পর্ক এবং ইসলামের রাজনৈতিক ব্যবহার মুসলিম ঐক্যের পথে একটি প্রধান অন্তরায় বলে অনেকে ধারণা পোষণ করে থাকেন। ইসলাম একটি ধর্ম, একটি জীবনবিধান। ইসলামের রাজনৈতিক তত্ত্ব এ ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত যে, ইসলামী সমাজ, রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থা ঐশ্বরিক বিধানমালা বা শরীয়ার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। তাই রাষ্ট্র ও সমাজ, ধর্ম ও রাজনীতি অথবা নৈতিকতা ও রাজনীতি আলাদা বিষয় নয়।[3] সমাজ নিয়ন্ত্রণে পৃথিবীর প্রায় সব বড় ধর্মকেই ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। ধর্ম বিশ্বাস মানুষের রাজনৈতিক চেতনাকে নানাভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।[4] সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মাবলম্বী মানুষের ধর্ম প্রভাবিত রাজনৈতিক চেতনা পৃথিবীর সব রাষ্ট্রের রাজনীতিকে কমবেশি প্রভাবিত করে থাকে। পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রমসূহও এ প্রভাবের একেবারে বাইরে নয়। তবে শিল্পায়ন, নগরায়ন, আধুনিকায়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে অনগ্রসর দেশের জনমানস ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ, উদারতাবাদ ইত্যাদি ধারণা দ্বারা খুব বেশি প্রভাবিত নয় বলে এসব দেশের রাজনীতিতে ধর্মের প্রভাব তুলানমূলকভাবে বেশি পরিলক্ষিত হয়। জে এস কোলম্যানের মতে, প্রায় সকল উন্নয়নশীল দেশের রাজনীতিতে ধর্ম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে বিবেচিত হয়। এসব দেশের নব্য সেক্যুলার এলিট গোষ্ঠীও তাই ধর্মের রাজনৈতিক শক্তিকে ব্যবহার করতে বাধ্য হয়।[5] এশিয়ার অনেক দেশে জাতীয়তাবাদ ও জাতিরাষ্ট্রের প্রেরণা ও যৌক্তিকতা প্রদর্শনেও ধর্ম উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে।[6]
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে দেখা যায় যে, শুধু ইসলাম নয়– অন্যান্য ধর্মও রাজনীতিতে ভূমিকা পালন করেছে, বর্তমানেও করছে। তবে ইসলাম সর্বশেষ ধর্ম, ইসলামকে একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান বলে মনে করা হয় এবং অধিকাংশ মুসলিমপ্রধান দেশ উন্নয়নশীল বিশ্বে অবস্থিত বিধায় ইসলাম ও রাজনীতির সম্পর্ক অন্তত খৃষ্টীয় জগতের তুলনায় বর্তমানে বেশি ঘনিষ্ঠ বলে ধারণা করা যায়। আধুনিক অর্থে রাজনীতিকে একটি ক্রীড়া এবং এখানে বস্তুত কোনো নীতি বা আদর্শ কাজ করে না বলে মনে অনেকে মনে করেন। এতদসত্ত্বেও আদর্শের প্রতি মানুষের স্বাভাবিক অনুরাগ থাকায় রাজনীতিকে একেবারে আদর্শমুক্ত করা কখনো সম্ভব হয়নি।[7] তবে ধর্মকে, বিশেষত ইসলামকে, রাজনৈতিক আদর্শ হিসেবে ব্যবহার প্রশ্নে মুসলিম পণ্ডিতরা ঐক্যমত্য পোষণ করেননি। সৈয়দ হোসায়েন নছরের মতে, ইসলাম ধর্মকে রাজনৈতিক আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করা হলে তাতে কোরআন ও সুন্নাহর আধ্যাত্মিক সৌন্দর্য, গভীরতা ও সনাতন ইসলামী গুণাবলীর ঘাটতি দেখা দিতে পারে। যে রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী ইসলামকে আদর্শ হিসেবে উপস্থাপিত করবে সে দল বা গোষ্ঠী তার স্বার্থ রক্ষার্থে একে ব্যবহার করতে চাইতে পারে। ইসলামকে আধুনিক করার প্রচেষ্টাও এরা করতে পারে।[8] এ কারণে ইসলামকে রাজনৈতিক আদর্শ হিসেবে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে মুসলমানদেরকে অত্যন্ত সচেতন ও সাবধান হতে হবে। ধর্মের রাজনৈতিক অপব্যবহার ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য হবে অত্যন্ত ক্ষতিকর। মুসলামনদের ধর্মনিষ্ঠা যাতে সাম্প্রাদায়িকতার দোষে দুষ্ট না হয় সে ব্যাপারেও হতে হবে সচেতন। স্মরণ রাখা দরকার যে, ইসলামে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই। বিদায় হজ্বের ভাষণে হযরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন: “সাবধান, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না, কেননা ধর্মে জোর জবরদস্তির ফলে তোমাদের পূর্ববর্তী বহু জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে।”
মুসলমানদের এক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে যে, রাজনীতিতে ইসলামের প্রভাব যাতে উন্নয়ন ও আধুনিকতার পথে অন্তরায় না হয়ে দাঁড়ায়। ঐক্যের স্বার্থেই মুসলমানদেরকে ইসলামী আন্তর্জাতিকতা এবং জাতীয়তাবাদের মধ্যে সমন্বয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জাতীয়তাবাদ ইসলামী আদর্শের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলেও ইসলামী আন্তর্জাতিকতা প্রতিষ্ঠার নানা বাস্তব অসুবিধার কারণে মুসলমানরা কার্যত বর্তমানে উদার জাতিরাষ্ট্র ব্যবস্থাকে মেনে নিয়েছে। এক্ষেত্রে বলা হয় যে, পবিত্র কোরআন ঐক্যের ভিত্তিরূপে বর্ণ, গোত্র, জাতিগত পরিচয়কে অনুমোদন না দিলেও স্বাভাবিক পরিচয় সূত্ররূপে এগুলোকে স্বীকৃতি দিয়েছে। মহান আল্লাহ প্রতিটি ‘কওম’-এর জন্যে নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। মদীনা সনদে যে ‘উম্মাহ’র কথা বলা হয়েছে তা জাতি সম্পর্কিত আধুনিক ধারণার কাছাকাছি। বর্তমান পৃথিবীর প্রায় সকল মুসলিমপ্রধান রাষ্ট্র জাতিরাষ্ট্র।[9] মুসলিম ঐক্যের স্বার্থে জাতিরাষ্ট্র কাঠামোতে আবদ্ধ মুসলিম নেতৃত্বকে উম্মাহর সামগ্রিক কল্যাণের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। সমগ্র বিশ্বের মুসলিমদের এ ঐক্য নিজেদের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা দূরীকরণ এবং বহিঃশত্রুর ষড়যন্ত্র ও আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষার হাতিয়ার হতে পারে।
মুসলমানদেরকে মৌলবাদী-অমৌলবাদীরূপে বিভক্ত করে মুসলিম ঐক্য দুর্বলকরণের একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র দীর্ঘদিন থেকে চলে আসছে। যে কোনো ধরনের ইসলামী আন্দোলনকে মৌলবাদী রূপে চিহ্নিত করে সুকৌশলে একে হিংসাশ্রয়ীতার সঙ্গে একাত্ম করে ফেলা হয়েছে। পাশ্চাত্য শিক্ষিত মুসলমানদের একাংশ বর্তমানে মৌলবাদ ঠেকানোর নামে অমুসলিমদের সঙ্গেও গাঁটছড়া বাঁধতে দ্বিধা করছে না। মুসলমানদেরকে অনুধাব্ন করতে হবে যে, তারা বর্তমানে ভেতর ও বাইরে থেকে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র ও বৈরীতার শিকার। একারণে রাজনৈতিক সংগ্রামে তাদেরকে কৌশলী, নিয়মতান্ত্রিক এবং যথাসম্ভব বেশি জনমতনির্ভর হতে হবে। এক্ষেত্রে মুসলিম বিরোধীদের কপটাতা, দ্বিমুখী নীতি ইত্যাদি বিষয়ে জনমত জাগ্রত করতে ব্রতী হওয়াও প্রয়োজন।
পরিপূর্ণ ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা সম্ভব না হলেও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রগুলোর নানা ক্ষেত্রে ইসলামের প্রভাব থাকা স্বাভাবিক। এসব দেশের অনেকগুলোতে ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনও শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছে। এসব আন্দোলনের নেতৃত্বকে সার্বভৌমত্ব, নেতা নির্বাচন তথা গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অনুসরণ, অমুসলিমদের অবস্থান ও মর্যাদা, নারী নেতৃত্ব, জনপ্রশাসন, অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার, ক্রীড়া, সঙ্গীত, সংস্কৃতি প্রভৃতি বিষয়ে যুগোপযোগী সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার প্রয়াস চালাতে হবে। অন্যথায়, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে মুসলমানদের অনৈক্য আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
ইসলামের মূলভিত্তি অর্থাৎ যে বিষয়গুলোতে বিশ্বাস এবং কর্মগুলো না করলে একজন ব্যক্তি মুসলমান থাকেন না সে বিষয়গুলো ব্যতীত অন্যান্য সকল বিষয়ের মতানৈক্য বজায় রেখেও মুসলমানদের পক্ষে ব্যাপকভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে আরব, অনারব, মাজহাবপন্থী-মাজহাব বিরোধী, আহলে হাদীস, কেয়ামী, বেকেয়ামী, পীরবাদী-পীর বিরোধী, সুফীবাদী-সুফীবাদ বিরোধী, তাবলিগী-তাবলীগ বিরোধী, কট্টর শরীয়তপন্থী–কট্টর মারেফতপন্থী, মৌলবাদী-মৌলবাদ বিরোধী ইত্যাদি পরিচয়ের সঙ্গে যে অমৌলিক বিরোধের প্রশ্ন জড়িত রয়েছে তা বজায় রেখেও মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারে। ব্যক্তি ও গৌষ্ঠী স্বার্থের ঊর্ধ্বে ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থ বিবেচনা করা হলেও উপর্যুক্ত প্রশ্নে মতপার্থক্য কমিয়ে আনা সম্ভব। এক্ষেত্রে উদ্দেশ্যের সততাই একান্তভাবে প্রয়োজন। মুসলমানদেরকে স্মরণ রাখতে হবে যে, চিন্তা ও কর্মক্ষেত্রে পরিপূর্ণ ঐক্য অর্জন কখনো সম্ভব হবে না। এটি মানুষের সহজাত প্রবণতা বিরোধী এবং এ কারণে তা কাম্যও হতে পারে না। মুসলমানদের লক্ষ্য হবে একটি working unity অর্জন– যা দ্বারা তারা নিজেদের মধ্যকার অপ্রয়োজনীয় মতভেদ দূর করতে সক্ষম হবেন।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, মুসলিম জনগণের সেই অংশের মধ্যে অনৈক্য তত বেশি, ধর্মশাস্ত্র বিষয়ে যারা যত বেশি শিক্ষিত। বাংলাদেশের আলেমদের অনৈক্য ও দলাদলিতে হতাশা ব্যক্ত করে একজন খ্যাতনামা ধর্মীয় নেতৃত্ব একসময় মন্তব্য করেছিলেন: ‘বাংলাদেশের আলেমরা একটি বিষয়েই কেবল ঐক্যমত্য পোষণ করেন। সেটি হচ্ছে তারা কখনো ঐক্যবদ্ধ হবেন না।’ ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, সাধারণ মুসলিমরা কখনো অনৈক্যের কারণ হয়ে দাঁড়ায়নি। সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়ে মুসলিম পণ্ডিতরাই প্রথমে বিভক্ত হয়েছেন। এসব পণ্ডিতগণ পরবর্তীকালে সাধারণ মুসলমানদের একটি অংশকে নিজের মতানুসারী করে মুসলমানদেরকে নানা মত, পথ ও ফেরকায় বিভক্ত করেছেন। গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন সংগঠন। এসব বিশেষ মত ও পথের প্রবক্তা এবং সংগঠনের নেতৃত্বকে অনুধাবন করা দরকার, তারা যে মত, পথ ও কর্মসূচি অনুসরণ করছেন সেটি ইসলাম ও মুসলমানদের কল্যাণের লক্ষ্যে পরিচালিত আরো অনেক মত, পথ ও সংগঠনের মতোই একটি মাত্র; একমাত্র বা পূর্ণাঙ্গ নয়। আরো অনেকে একই লক্ষ্যে কাজ করছেন। সব ইসলামী সংগঠন এবং তার নেতৃত্ব এ বোধে চালিত হলে মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠা অনেক সহজতর হবে।[10] ইসলামের গভীর বিষয়গুলোতে খুব বেশি জ্ঞাত না হয়েও সাধারণ মুসলমানরা কেবল ইসলাম ও মুসলমানের নামে ব্যাপক কোরবানী দিতেও দ্বিধা করেনি। খেলাফত আন্দোলন, ফিলিস্তিনের মুক্তি আন্দোলন, কাশ্মীর, বসনিয়া, চেচনিয়া, রুশ আধিপত্যবাদবিরোধী আফগানদের সংগ্রাম, ইরাকের বিরুদ্ধে মার্কিন আগ্রাসন ইত্যাদি ঘটনার দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মুসলমানরা ব্যাপক ঐক্যের পরিচয় দিয়েছেন।
মুসলিম ধর্মশাস্ত্র বিশেষজ্ঞ ও নানা পর্যায়ের ধর্মীয় নেতৃত্বকে আর একটি বিষয়ে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। ইসলামের অনেক বিষয় বোঝার জন্যে গভীর অন্তর্দৃষ্টি ও দার্শনিক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। ইলমে মারেফাতের জটিল বিষয়সমূহ সাধারণ মুসলামনদের জ্ঞাত হওয়ার প্রয়োজনও নেই। এ বিষয়গুলো কেবলমাত্র জ্ঞানী লোকদের একাডেমিক আলোচনার বিষয় হওয়া উচিৎ। সাধারণ আলোচনায় এসব বিষয় এনে মুসলিম ঐক্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করা সঙ্গত কাজ হবে না।
ইতিহাস প্রমাণ করে যে, সাধারণ মুসলমানরা সাধারণত ঐক্যবদ্ধ থাকে। অসাধারণ মুসলমানরা ব্যক্তি, গোষ্ঠী, দল, মত ইত্যাদির নামে সাধারণ মুসলমানদেরকে বিভক্ত করে। এ জাতীয় অসাধারণ মুসলমানরা অর্থাৎ নানা ক্ষেত্রের মুসলিম নেতৃত্ব যদি ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থের প্রশ্নে সৎ হন, শিক্ষিত হন, প্রশিক্ষিত হন, আধুনিক হন, পরমত সহিষ্ণু হন, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন হন তাহলে ব্যাপক মুসলিম ঐক্য সময়সাপেক্ষ ও কষ্টসাধ্য হলেও অসাধ্য নয়। মুসলিম নেতৃত্বের দায়িত্ব হচ্ছে মুসলমানদের যোগ্য শিক্ষায় শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত করে তোলা। যাতে তারা ইহকালীন জীবনেও যে কোনো প্রতিযোগীতায় বিজয়ী হতে পারে। এক্ষেত্রে মুসলিম মানবসম্পদ উন্নয়নেরে আর কোনো বিকল্প নেই।
উপরিউক্ত বিষয়াবলী ছাড়াও মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি পরিবেশ সৃষ্টি এবং কার্যকর ঐক্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিম্নোক্ত ব্যবস্থাবলী গ্রহণ করা যেতে পারে:
১) মুসলিম ধর্মীয় নেতৃত্ব ও ধর্মশাস্ত্র বিষয়ক পণ্ডিতগণ এ বিষয়ে ওয়াদাবদ্ধ হবেন যে, কোনো অবস্থাতেই তারা মুসলমানদের ঐক্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে এমন কোনো বিষয় সাধারণ্যে প্রকাশ করবেন না, প্রকাশ্য আলোচনায় আনবেন না।
২) বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়, কিন্তু মুসলমানদের ধর্মীয় ও জাগতিক জীবনকে প্রভাবিত করবে এমন বিষয় সম্পর্কে আলোচনা ও সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্যে বিভিন্ন দেশের আলেম ও জ্ঞানী ব্যক্তিগণ স্ব স্ব দেশে প্রতি বছর অন্তত একবার সম্মেলনে মিলিত হবেন। এ সম্মেলনে কোরআন, হাদীস ও অন্যান্য ইসলামসম্মত পদ্ধতি অনুসরণ করে এবং বাস্তব অবস্থাকে বিশেষ বিবেচনায় এনে বিতর্কিত বিষয়সমূহে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার প্রয়াস চালানো হবে।
৩) পালাক্রমে একই উদ্দেশ্যে বিভিন্ন মুসলিম দেশে মুসলিম পণ্ডিতদের আন্তার্জাতিক সম্মেলন আয়োজিত হবে।
৪) ইসলাম ও মুসলিম বিশ্বকে বিশ্ববাসীর সামনে যৌক্তিকভাবে উপস্থাপনের জন্যে ওআইসি বা এ জাতীয় কোনো সংস্থার উদ্যোগে একটি শক্তিশালী স্যাটেলাইট মিডিয়া সেন্টার এবং সংবাদ সংস্থা প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করতে হবে।
৫) জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা শাখায় মুসলিম গবেষকদেরকে ইসলামী পরিবেশে স্বাধীনভাবে গবেষণা করার সুযোগ দানের জন্যে ওআইসি’র উদ্যোগে বিভিন্ন মুসলিম দেশে গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।
৬) মুসলিম দেশসমূহের মধ্যে শিক্ষা, সংস্কৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সকল বিষয়ে যোগাযোগ সহজতর এবং বৃদ্ধি করতে হবে।
৭) মুসলিম দেশসমূহের মধ্যকার পারস্পরিক বিরোধ নিরসনকল্পে রাষ্ট্রীয় প্রচেষ্টার বাইরে মুসলিম পণ্ডিতগণেরও প্রয়াস চালানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৮) মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা পালনকারী ব্যক্তিত্বদেরকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেয়ার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র। বিশ্বের অন্য যে কোনো মুসলিমপ্রধান রাষ্ট্রের তুলনায় বাংলাদেশের মুসলমানদের পক্ষে কার্যকরভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়া সহজতর। এখানকার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের মধ্যে ধর্মের মৌলিক প্রশ্নে কোনো বিরোধ নেই। বেশিরভাগ মুসলিম একই ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী। বাংলাদেশের ধর্মীয় নেতৃত্ব সৎ ও আন্তরিক হলে এখানকার মুসলমানদের মধ্যে কেয়ামী-বেকেয়ামী, মাজারপন্থী-মাজার বিরোধী, ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সমর্থক ও কট্টর বিরোধী− এ সকল পক্ষের মধ্যে মতপার্থক্য অনেকখানি কমিয়ে এনে ব্যাপক ঐক্য প্রতিষ্ঠা মম্ভব। এক্ষেত্রে উদারতা ও পরমত সহিষ্ণুতা হবে প্রধান পাথেয়। বাংলাদেশসহ সমগ্র মুসলিম জাহানের বিভিন্ন মত, পথ ও পর্যায়ের নেতৃত্বকে অনুধাবন করতে হবে যে, ইসলাম ও মুসলমানরা আজ বিশ্বব্যাপী ব্যাপক, নির্যাতন, অবিচার ও ষড়যন্ত্র শিকার। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে নিজেদের গুণগতভাবে সমৃদ্ধ করতে হবে। হতে হবে ব্যাপকভাবে ঐক্যবদ্ধ। ঐক্য প্রতিষ্ঠার বিষয়ে একজন সৎ ও আন্তরিক মুসলমান এ কারণেই প্রত্যয়ী হতে পারেন যে, ধর্মের মৌল বিষয়ে অন্তত সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের মধ্যে কোনো ব্যাপক বিরোধ নেই। মুসলিম ধর্মীয় নেতৃত্ব ও ধর্মশাস্ত্র বিশেষজ্ঞগণ সৎ ও নিষ্ঠাবান হলে গৌণ বিষয়াবলীর বিরোধ পরিপূর্ণভাবে দূরীভূত করা সম্ভব না হলেও হ্রাস করতে অবশ্যই সক্ষম হবেন। এক্ষেত্রে বিভিন্ন মতের ঐক্য (Unity in Diversity) নীতি গ্রহণীয় হতে পারে। মুসলমানরা নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হতে চাইলে আল্লাহর সাহায্যও অবশ্যই লাভ করবে। কারণ “আল্লাহ তায়ালা কখনো কোনো জাতির অবস্থার পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে।” (আল কোরআন: ১৩:১১)
তথ্য নির্দেশ:
[1] ড. সৈয়দ মাহমুদুল হাসান, ইসলামের ইতিহাস (ঢাকা, গ্লোব লাইব্রেরি, ১৯৮০), পৃ: ১৩১-১৩২।
[2] দৈনিক ইনকিলাব, ৭ এপ্রিল, ২০০০
[3] A.K.S Lambton, ‘Islamic Political Thought’ in Joseph Schachat and C.E. Bosworth eds, The legacy of Islam (Oxford, Oxford University Press 1979, p.404.
[4] বিস্তারিত ধারণার জন্য দেখুন, J. Milton Yinger, Religion, Society and the Individual: An Introduction to the Society of Religion (New York, The Macmillan Company, 1967). Pp. 231-34.
[5] J.S. Coleman ‘The Political Systems of the Developing Areas’ in G.A. Almond and J.S. Coleman eds. The Politics of Developing Areas (New Jeerssey, Princeton University press, 1960), p.537.
[6] Robert E. Spencer, ‘Religion in Asian Societies’ in his ed., Religion and changes in contemporary Asia (Minneapolis, University of Minneasota Press, 1971). P. 11
[7] দেখুন, Edward Shills, The Intellectuals and the power and other Essays (Chicago, Chiagago University Press, 1983), pp. 40-41.
[8] Syed Hussein Nasr, “Present Tendincies: Future Trends” in Majorie Kelly ed. Islam: The Religion and Political life of World community (New York, pager, 1948) p. 283.
[9] জাতীয়তাবাদ, জাতিরাষ্ট্র প্রভৃতি সম্পর্কিত ইসলামের তত্ত্বগত ও বাস্তব ধারণা সম্পর্কে বিস্তারিত দেখুন, হাসান মোহাম্মদ, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ: নেতৃত্ব, সংগঠন ও আদর্শ (ঢাকা, একাডেমিক পাবলিশার্স, ১৯৯৩), পৃ: ১৩২-৩৪।
[10] এ বিষয়ে আরো ধারণার জন্য দেখুন, হাসান মোহাম্মদ, তাবলীগ আন্দোলন ও তাবলীগ জামায়াত, (ঢাকা, কওমী পাবলিকেশন্স, ২০০০), পৃ: ৮৩-৮৪।