ধর্ম ও রাজনীতির মিশ্রণ নিয়ে গুলেনের দৃষ্টিভঙ্গি
এডিটর’স নোট: গুলেন মুভমেন্টের অফিসিয়াল সাইটে প্রকাশিত What is Fethullah Gülen’s view on mixing politics and religion? শীর্ষক একটি নিবন্ধ রয়েছে। ধর্ম ও রাজনীতির মিশ্রণকে তুরস্কের গুলেন মুভমেন্টের নেতা ফেতুল্লাহ গুলেন কোন দৃষ্টিতে দেখেন, এই আর্টিকেলে তা ফুটে ওঠেছে। সিএসসিএস-এর পাঠকদের জন্য এটি অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক।
*****
ধর্মের রাজনীতিকরণ সব সময়ই একটি নেতিবাচক প্রবণতা। এটি সৃষ্টিকর্তার সাথে মানুষের আধ্যাত্মিক সম্পর্ককে এক ধরনের মতবাদ বিশেষে পর্যবসিত করে (turns the mysterious relationship between humanity and the Divine into an ideology)। এ সম্পর্কে গুলেন বলেন, “ধর্ম হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার সাথে মানুষের সম্পর্ক। ধর্মানুভূতি মানুষের অন্তরের গভীরে প্রোথিত থাকে। … আপনি যদি এটিকে কোনো বিশেষ ব্যবস্থার আদলে দৃশ্যমান করার চেষ্টা করেন তাহলে আপনি একে ধ্বংস করলেন। ধর্মের রাজনীতিকরণ বিশেষ কোন সরকার ব্যবস্থার যতটা ক্ষতি করে তারচেয়ে তা ধর্মেরই ক্ষতি করে বেশি।” তিনি আরও বলেন, “ধর্ম মূলত মানব জীবন ও অস্তিত্বের চিরন্তন দিকসমূহের ওপর আলোকপাত করে। অপরদিকে, রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বা মতবাদগুলো শুধুমাত্র কতিপয় জাগতিক ও পরিবর্তনীয় দিকের সাথে সংশ্লিষ্ট।
ধর্মের সাথে রাজনীতি না মেশানোর অর্থ এই নয় যে, ধার্মিক ব্যক্তিবর্গ জনপরিমণ্ডল (public sphere), রাজনীতি বা অর্থনৈতিক বৈষম্যের ব্যাপারে বেখবর থাকবেন। ধার্মিক বা আধ্যাত্মিক ব্যক্তিবর্গের উচিত রাজনীতি থেকে দূরে থাকা বা রাজনীতিতে জড়ানো হতে বেঁচে থাকা– ফতেউল্লা গুলেন এ ধরনের কোনো দাবী করছেন না। এ ধরনের প্রস্তাবনা মূলত চুপ মেরে যাওয়ার (quietism) চেয়ে ভালো কিছু নয়। বরং তা হবে নাগরিক দায়বদ্ধতা ও সামাজিক অংশগ্রহণের দিক থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়ার শামিল। রাজনীতিতে সম্পৃক্ততার মানে পক্ষপাতিত্ব এবং দলীয় আনুগত্য নয়। মানবিক মর্যাদা ও কল্যাণ, পরিবেশ উন্নয়ন, সামাজিক ন্যায়নিষ্ঠা এবং শান্তির ওপর প্রভাব সৃষ্টি করে এমন সব রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে ধর্মের বক্তব্য থাকতে পারে; এবং বাস্তবে তা থাকা উচিতও বটে।
সত্যিকারের ধার্মিক ব্যক্তিদের মধ্যে যারা দায়িত্ববোধ সহকারে রাজনীতি করেন, তারা কোনো একক ইস্যু নির্ভর ভোটার মাত্র অথবা দল বিশেষের অনুগত হতে পারেন না। বিভেদের পরিবর্তে তারা বিদ্যমান সম্প্রদায়সমূহ ও সমাজব্যবস্থাগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়ার জন্য ব্রতী হন। ফতেউল্লাহ গুলেন ধর্মকে রাজনীতির অনেক ঊর্ধ্বে বিবেচনা করেন। তার মতে, ধর্ম হলো নৈতিকতার উৎস। যা দায়িত্বপূর্ণ রাজনীতির সাথে সাংঘর্ষিক নয়, সহায়ক। ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে তিনি কখনো ভাবতে পারেন না। ধর্মকে রাজনীতির সাথে গুলিয়ে ফেললে যে কোনো প্রকার নেতিবাচক রাজনীতির জন্য মানুষ ধর্মকেই দায়ী করতে পারে। কারো রাজনৈতিক উচ্চাকাংখার কারণে ধর্ম সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব তৈরী হতে পারে– এমনটা তিনি কখনো কামনা করেন না।