রশিদ ঘানুশীর ‘ইসলামী রাষ্ট্রে নাগরিক স্বাধীনতা’ ও কিছু কথা
গত কিছুদিন ধরে ‘ইসলামের রাজনৈতিক স্বাধীনতা’ নামে একটি বই অনুবাদ করার চেষ্টা করছিলাম, কিছু অংশ করাও হয়েছে। এরমধ্যে একজন ভাই রশিদ আল-ঘানুশীর ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা সংক্রান্ত বইটি অনুবাদ করার পরামর্শ দিলেন। আমিও অনেকদিন ধরে ভাবছিলাম বইটির কথা। তাঁর এ বইটির নাম الحرية العامة في الدولة الإسلامية অর্থাৎ ‘ইসলামী রাষ্ট্রে নাগরিক স্বাধীনতা’ অথবা ‘ইসলামী রাষ্ট্রের সাধারণ স্বাধীনতা’।
মোট দুই খণ্ডের প্রায় ৬০০ পৃষ্ঠার এ বইটিকে যদিও রাষ্ট্রের নাগরিক স্বাধীনতা নামে নামকরণ করা হয়েছে, কিন্তু এ বইয়ে মূলত ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার সকল দিক-বিদিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা এসেছে। বিশেষ করে একবিংশ শতাব্দীতে ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার স্বরূপ কি হবে, গণতন্ত্র এবং ইসলামের সাথে সম্পর্ক, ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার সাথে সমাজতান্ত্রিক এবং আধুনিক পুঁজিবাদের পতাকাবাহী ইউরোপ-আমেরিকান রাষ্ট্রগুলোর মৌলিক তফাত। ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার গোঁড়ার দিক থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত যে বিবর্তন হয়েছে সে বিষয়েও লেখক এ বইয়ে বর্ণনা করেছেন। তাঁর আলোচনায় সমসাময়িক ইসলামী আন্দোলনগুলোর প্রকৃতি, কর্মপদ্ধতি, সম্ভাবনা এবং সীমাবদ্ধতাও বাদ পড়েনি। স্বৈরতন্ত্রের স্বরূপ, ইসলাম কিভাবে স্বৈরাচারী শাসনের হাত থেকে মানুষকে মুক্ত করতে চায় এ বিষয়টিও লেখক অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে তার এ বইয়ে তুলে ধরেছেন। বিশেষ করে ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থায় নারী এবং অমুসলিমদের অবস্থান সংক্রান্ত মওলানা মওদূদীর (রহ) ইজতিহাদের করা সমালোচনা করেছেন।
এসব বিবেচনায় বইটি বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়াটা এক ধরনের নৈতিক দায় বলে মনে হয়েছে। তাই এ বইটি অনুবাদের প্রস্তাব আসার সাথে সাথেই এক কথায় রাজি হয়ে গেছি। কিন্তু অনুবাদ করতে গিয়ে দেখলাম কাজটি যত সহজ ভেবেছিলাম ততটা হয়ত সহজ হবে না। কারণ লেখকের শব্দ চয়ন সমসাময়িক অন্যান্য আরব লেখকদের কিছুটা ব্যতিক্রম, তারপরও চেষ্টা চালিয়ে যাবো ইনশাল্লাহ।
ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা সংক্রান্ত বা ইসলামী সাংবিধানিক বিষয় সম্বলিত এ ধরনের বই এটাই প্রথম নয়। এর আগে আমাদের ভারত উপমহাদেশে মওলানা মওদুদী (রহ), আল্লামা ড. মোহাম্মদ আসাদ (রহ)-ও এ বিষয়ে কলম ধরেছেন। সম্প্রতি BIIT এর তত্ত্বাবধানে এ কে এম সালাউদ্দিন কর্তৃক অনুদিত ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞান ইসলামী প্রেক্ষিত’ নামক বইটি বাংলা ভাষাভাষী মানুষের জন্য একটি বিশেষ সংযোজনা। এ সংক্রান্ত মিশরীয় লেখক আব্দুল করিম যায়দান এর ‘ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা’ নামক বইটি আমরা অনেক আগে থেকেই পড়ে আসছি। এছাড়া বাংলা ভাষায় ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা সংক্রান্ত মানসম্মত আর কোনো বই আমার নজরে আসেনি। যদিও এ বিষয়ে কিছু পুস্তিকা বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনের বেশ কয়েকজন দায়িত্বশীল লিখেছেন; কিন্তু সেগুলোর কোনোটাই প্রবন্ধের গন্ডি পার হতে পারেনি।
বাংলাদেশের একটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক, যিনি সেখানে ইসলামী রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়ান তার সাথে একবার এ বিষয়ে আমার কথা হয়েছিল। আমি জানতে চেয়েছিলাম, বাংলা ভাষায় ইসলামের রাষ্ট্রব্যবস্থা সংক্রান্ত কোনো বই আছে কি না? জবাবে তিনি যা বলেছিলেন তা অত্যন্ত দুঃখজনক। তাঁর ভাষায়,‘রাষ্ট্রবিজ্ঞান সংক্রান্ত একাডেমিক মানসম্মত কোনো বই বাংলা ভাষায় এখনো রচিত হয়নি’।
অথচ ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলা হচ্ছে। শত শত লোক এ পথে জীবন দিচ্ছে। ইতোমধ্যে হাজার হাজার শ্রমঘন্টা এ কাজে ব্যয় করা হয়েছে। কিন্তু ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা সংক্রান্ত কিছু বই তো দূরের কথা, একটি মানসম্মত বইও আজ পর্যন্ত রচিত হয়নি।
মহান আল্লাহর কছে প্রার্থনা করি তিনি যেন আপনাকে সফলভাবে কাজটি এগিয়ে নেওয়ার তৌফিক দেন। আশা করি, বাংলা ভাষাভাষি মানুষদের জন্যে ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা সংক্রান্ত ধারণা পরিষ্কার হওয়ার পাশাপাশি ভ্রান্তিগুলো দূর করতে বইটি সহায়ক হবে।
অথচ ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলা হচ্ছে। শত শত লোক এ পথে জীবন দিচ্ছে। ইতোমধ্যে হাজার হাজার শ্রমঘন্টা এ কাজে ব্যয় করা হয়েছে। কিন্তু ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা সংক্রান্ত কিছু বই তো দূরের কথা, একটি মানসম্মত বইও আজ পর্যন্ত রচিত হয়নি।