গুলশান আযাদ মসজিদ

ইসলাম ও প্লুরালিস্ট সংস্কৃতি

[সারসংক্ষেপ: আল্লাহ ইচ্ছা করলে সকল মানুষকে একজাতিতে পরিণত করতে পারতেন। কিন্তু তাঁর পরিকল্পনা ভিন্ন। এ সংক্রান্ত কুরআনের আয়াতদ্বয়ের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মুফাসসিরদের মতামত হলো, মুসলিম সংস্কৃতি একরৈখিক (মনোলিথিক) নয়। এমনকি বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা ইসলামকে যেভাবে চর্চা করে, সেদিকে তাকালেও বুঝা যায় যে ইসলামী সংস্কৃতি একরৈখিক হবার ধারণার কোনো ভিত্তি নেই। এ নিবন্ধে বিভিন্ন দৃষ্টান্ত দিয়ে এ কথাই বলার চেষ্টা করা হয়েছে যে মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের সংস্কৃতি, গঠনপ্রকৃতি, কাঠামো ও বিন্যাস ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির। ইসলামী সংস্কৃতি মূলত প্লুরালিস্ট। জনমনে প্রচলিত ভুল ধারণা দূর করার জন্য বিষয়টি নিয়ে নতুন করে অধ্যয়ন করা প্রয়োজন, বিশেষত আধুনিক শিক্ষিত এবং প্রাচ্যবিদদের; যারা মনে করে ইসলামী সংস্কৃতি একরৈখিক। বস্তুত ইসলাম সূচনালগ্ন থেকেই প্লুরালিস্ট সংস্কৃতি চর্চা করেছে।]

প্রচলিত প্রথা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি[1] এবং ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার সম্পর্কে সচেতন ব্যক্তিরা ভুল কর্মপন্থা অবলম্বন করতে পারে না। দিনশেষে মুসলিম উম্মাহ হলো দীর্ঘদিনের পরম্পরা, হেরিটেজ এসব কিছুর সমাহার মাত্র। তাই আমরা স্থানীয় সংস্কৃতির বিষয়গুলোকে অবশ্যই ইতিবাচকভাবে দেখবো, তবে দেশকে সমস্ত ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে মনে করা কিছু উদ্ধত ও গোঁড়া লোককে উপেক্ষা করবো।[2] গোষ্ঠীভুক্ত মানসিকতাকে[3] ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখতে হবে। কারণ, দলবদ্ধ গোষ্ঠী মানবতার স্বার্থেও কাজ করতে পারে। চূড়ান্ত বিবেচনায় উম্মাহ[4] হচ্ছে এমন একটি গ্রুপ, শুভ ও কল্যাণকর যে কোনো কিছু এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যার কাজ করা প্রয়োজন। সংস্কৃতির মধ্যে যদি ফাহেশা ও মুনকার (দৃষ্টিকটু নগ্নতা, অন্যায়, অনৈতিক ও মন্দ)-এর কোনো উপাদান না থাকে, তবে নিজেকে সেই সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করার মধ্যে দোষের কিছু নেই। মনে রাখা দরকার, আমাদের জাতীয় বা স্থানীয় সংস্কৃতি আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্মের সম্মিলিত অবদান। জীবন, সমাজ ও জাতির জন্য তাদের এই অবদান কল্যাণকর হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত না থাকলে তারা নিজেদের সংস্কৃতিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য নিরন্তর কাজ করে যেতো না।

বিশ্ব সংস্কৃতি এবং নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর সাথে ইসলামের সম্পর্ক বিরোধপূর্ণ নয়। মুসলমানরা মানুষকে বর্ণবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে সাদা-কালো হিসেবে দেখে না। জেন্ডার বা লিঙ্গের ক্ষেত্রেও নেই কোনো বৈষম্য। যা কিছু মানুষের জন্য শুভ ও কল্যাণকর, তাকে উচ্চকিত করতে ইসলাম প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যা কিছু সমাজের জন্য ক্ষতিকর, ইসলাম তা ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে আনতে চায়।

ইসলামপূর্ব আরব সংস্কৃতির গ্রহণযোগ্য রীতি, আচার ও ব্যবহার নিয়েই ছিলো মহানবীর (সা.) জীবনাচার। বৈচিত্র্যপূর্ণ সাংস্কৃতিক আচার ও প্রথা গ্রহণের নীতি এক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয়। যেমন: নবী (সা.) প্রবর্তিত পোশাকের বিধানের উদ্দেশ্য অনারব মুসলমানদের সংস্কৃতির উপর হস্তক্ষেপ করা নয়। ইসলামের মূলনীতির বিস্তৃত আওতার মাঝে থেকেই তারা নিজ অঞ্চলের প্রচলিত পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করার ব্যাপারে স্বাধীন।

কোরআনে বলা হয়েছে,

خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِينَ

‍“তুমি ক্ষমা অবলম্বন করো অর্থাৎ মানব চরিত্রের সহজ সরল দিক অবলম্বন করো। তাদেরকে কঠিন অবস্থায় ফেলার কোনো পথ তালাশ করো না। সৎকর্মের নির্দেশ দাও এবং অজ্ঞদেরকে উপেক্ষা করো। এদের মূর্খতার মোকাবিলা করতে যেও না।”

[সূরা আরাফ: ১৯৯]

আয়াতটি সাধারণত ক্ষমাশীলতা বা এ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রাসঙ্গিক ধরা হয়। এখানে ব্যবহৃত ‌‘আফওয়া’ শব্দটিকে ‌‘ইউসরা’ শব্দের সমার্থক হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যার অর্থ সহজ বা অবাধ। অন্য কথায়, যা মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত আচার-আচরণ-স্বভাব থেকে উদ্ভূত এবং যা কোনো পূর্বপরিকল্পনা বা চিন্তাভাবনার ফল নয়। আয়াতটির ব্যাখায় বলা হয়েছে, নবী (সা.) বিনা প্রয়োজনে মানুষের কাজকর্ম বা আচার-আচরণের বিষয়ে অনুসন্ধান বা প্রমাণ খুঁজে বেড়াতেন না।[5]

আয়াতটির অনুবাদ এভাবেও করা হয়েছে:

‍“মানুষের নিকট হতে তা গ্রহণ করো যা তাদের জন্য স্বাভাবিকভাবে উৎসারিত; প্রথাগতভাবে যা কল্যাণকর তার আদেশ দাও; এবং অজ্ঞদের পন্থায় জবাব না দিয়ে বরং তাদের নিকট হতে মুখ ফিরিয়ে নাও।”

এ আয়াতটি কয়েকটি মূলনীতি নির্দেশ করে। এ আয়াতের প্রয়োগ হতে নৃতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক স্বরূপ সম্পর্কে মহানবীর দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে জানা যাবে।

জনগণের ন্যায়সঙ্গত প্রথা ও আচার-ব্যবহারের প্রতি সমর্থন এবং এসবকে মৌলিক ও স্থায়ী পলিসি গাইডলাইন হিসেবে গ্রহণ করার জন্য আল্লাহ তাঁর রাসূল মুহাম্মদকে (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন। ইসলামপূর্ব যুগের আরব দেশের স্থানীয় সংস্কৃতিকে রাসূল ধ্বংস করেননি। তিনি বরং এসবের মাঝে সামঞ্জস্যবিধান করেছেন; যা অসঙ্গত, তা সংশোধন করেছেন; যা ক্ষতিকর, তা পরিবর্তন করেছেন।

রাসূল কর্তৃক সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে অনুমোদনের সর্বোত্তম উদাহরণ হলো— প্রচলিত সাতটি বাচনভঙ্গিতে (আহরুফ) কুরআন তিলাওয়াতের অনুমতি দানের সিদ্ধান্ত। কুরাইশরা মক্কার যে বাচনভঙ্গি অনুসরণ করতো, আরবের সব গোত্রই তা বুঝতো। এটা ছিল অন্যান্য আরব গোত্রের প্রতি নবীর শ্রদ্ধা, সৌজন্য ও সুবিবেচনার পরিচায়ক। এটা সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বহু মত ও পথকে মেনে নেয়ার ইঙ্গিত দেয়।

আরব গোত্রসমূহ এবং অন্যান্য নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের প্রতি রাসূলের দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত গুরুত্ববহ একটি উদাহরণ এবং তা ইসলামের মৌলিক বুনিয়াদি নীতি। সাংস্কৃতিক নীতি ও চর্চার ক্ষেত্রে বৈচিত্র্যকে রাসূল ব্যাপক অনুমোদন ও সমর্থন দেন। প্রয়োজন ছাড়া তিনি এসব রদবদল করেননি। এভাবে তাঁর জীবন থেকেই অন্যান্য সংস্কৃতির প্রতি ইসলামের উদার দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

সুস্থ ও কল্যাণকর প্রথা ও রীতিনীতির ওপর যা প্রতিষ্ঠিত, তা গ্রহণযোগ্য। তাই স্কলারদের অভিমত হচ্ছে, জনগণকে তাদের প্রথা ও রীতিনীতি এবং আচার-অনুষ্ঠান অনুসরণ করতে দিতে হবে। ক্লাসিক্যাল মুসলিম ফকীহগণ ইতিবাচক সাংস্কৃতিক প্রথা ও রীতিনীতি অনুমোদনের একটি বড় প্রমাণ হিসেবে উপরে উল্লেখিত কুরআনের সূরা আরাফের ১৯৯ নং আয়াতের উল্লেখ করে থাকেন। যা কিছু মানুষের স্বভাবপ্রকৃতি আর পরিবেশের অনুকূল এবং যা তাদের একান্ত প্রয়োজনীয় ও বৈধ আকাঙ্ক্ষাকে পূরণ করে, তাকে সাধারণত গ্রহণ করা হয়। কুরআন দেশজ ও স্থানীয় সংস্কৃতির শুদ্ধতাকেই কেবল তুলে ধরে না; শুভ ও কল্যাণকর সবকিছুর পূর্ণ অনুমোদনও দেয়, যদি তা ঐশীবাণীর সরাসরি পরিপন্থী না হয়।

এ পর্যায়ে সীরাত থেকে উদাহরণ দেওয়া যাক। একদল কালো আফ্রিকান নওমুসলিম মদীনায় মসজিদে নববীতে চামড়ার তৈরি ঢোল পিটিয়ে বর্শাসহ নাচতে শুরু করে। উমর ইবনুল খাত্তাব তাদের থামাতে চেষ্টা করেন। কিন্তু নবীজি উমরকে বাধা দিতে নিষেধ করলেন। উমরের দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ইথিওপিয়দের মাঝে যেন ভুল বুঝাবুঝি না হয়, সেজন্য রাসূল তাদের নাচতে উৎসাহ দেন এ কথা বলে, “তোমাদের খেলা চালিয়ে যাও, বনু আরফিদা,” যাতে ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা বুঝতে পারে যে আমাদের ধর্মে সহনশীলতা রয়েছে। (সহীহ বুখারী, ৯০৭ এবং সহীহ মুসলিম, ৮৯২)

উমরকে থামাতে নবীর হস্তক্ষেপ হতে এটা স্পষ্ট, ইথিওপিয়দেরকে উমরের আরব মানসিকতা দ্বারা বিচার করা যথার্থ হবে না, কিংবা তারা আরবদের মতো হবে— এমনটা প্রত্যাশা করা ঠিক নয়। বনু আরফিদার (আরফিদা ছিলেন ইথিওপীয়দের ঊর্ধ্বতন পুরুষ, ফলে তাদেরকে বনু আরফিদা তথা আরফিদার সন্তান বলে অভিহিত করা হয়) রয়েছে নিজস্ব প্রথা ও আচার-আচরণ। তাদের ইসলাম গ্রহণের অর্থ এই নয় যে নিজস্ব সংস্কৃতিকে পরিত্যাগ করতে হবে। ‘আরফিদার সন্তান’— এই স্পষ্ট ঘোষণা দেওয়ার মাধ্যমে নবী একটি চিরন্তন ও চূড়ান্ত মূলনীতি প্রতিষ্ঠা করেন, যা বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতাকে শ্রদ্ধা করতে শেখায়। মহানবী উদার মনোভাব এবং অন্যের প্রতি নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি চর্চা করতেন। তাঁর উল্লিখিত বাণীর এটাই শিক্ষা। এই উদার দৃষ্টিভঙ্গির ফলে প্রাথমিক যুগের আরব মুসলমানরা অন্যান্য সংস্কৃতির সুস্থ ও কল্যাণকর দিকগুলোর স্বীকৃতি দিতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলো।

রাসূল বলেছেন— ইথিওপিয়ার সন্তানরা, তোমাদের খেলা চালিয়ে যাও যাতে ইহুদি-খ্রিষ্টানরা বুঝতে পারে যে আমাদের ধর্মে নমনীয়তা (ফুসহা) রয়েছে। (মুসনাদে আহমদ, ২৪৩৩৩)

এর মাধ্যমে সংস্কৃতির মাঝে বিদ্যমান পার্থক্যকে স্বীকৃতি দিয়ে রাসূল নজীর স্থাপন করেন এবং এটা স্পষ্ট করে দেন যে ইসলাম গ্রহণ করার জন্য অনারবদের নিজস্ব সংস্কৃতি, আচার, নিয়ম ও পদ্ধতি ত্যাগ করে আরবদের সংস্কৃতি গ্রহণ করার প্রয়োজন নেই।

প্রথা (উরফ)[6] এবং আচার-ব্যবহার (আদা) বলতে স্থানীয় সংস্কৃতির সেসব বিষয়কে বুঝায় যা ইতিবাচক, কল্যাণকর, মূল্যবান, হিতকর; ক্ষতিকর এবং ধ্বংসাত্মক নয়। স্থানীয় সংস্কৃতিকে মূল্যায়ন করতে হবে ইসলামী মূলনীতির আলোকে। এর অর্থ হলো যা বিভৎস, ঘৃণ্য, অশোভন, অপ্রীতিকর, কুরুচিপূর্ণ ও জঘন্য তা প্রত্যাখ্যাত। যেমন জর্ডানের কোনো কোনো অঞ্চল এবং পাকিস্তানের উপজাতীয় এলাকায় প্রচলিত অনার কিলিং। সুস্থ ও কল্যাণকর প্রথা, আচার-ব্যবহার ও রীতিনীতির প্রত্যাখ্যান নিছক মন্দ কাজই নয়, বরং তা জনগণের জন্য অপ্রয়োজনীয় জটিল ও ক্ষতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে।

ইসলামের অন্যতম প্রধান ও অপরিহার্য মূলনীতি হচ্ছে, সাংস্কৃতিক আচার-আচরণ ও রীতিনীতির আইনগত গুরুত্ব ইসলামে রয়েছে। ‘প্রথার (উরফ) আইনগত গুরুত্ব’ বলতে সন্তোষজনক সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যকে বুঝায়। অর্থাৎ, যেসব প্রথা সুস্পষ্টভাবে চর্চিত ও প্রতিষ্ঠিত এবং যেগুলো নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই; দৈনন্দিন জীবনে যেসব প্রথা লোকেরা চর্চা করে এবং সুস্থ ও কল্যাণকর বৈশিষ্ট্য হিসেবে এগুলো গ্রহণযোগ্য। ‘সুস্থ ও কল্যাণকর বৈশিষ্ট্য’ (আল-তিবা আল-সালিমা) হলো ইসলামের সেই বিশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত যাতে মনে করা হয়, মানবজাতিকে সুস্থ ও কল্যাণকর বৈশিষ্ট্যসহ সৃষ্টি করা হয়েছে; মানুষ সহজাত ও প্রকৃতিগতভাবে নৈতিক গুণে গুণান্বিত এবং তারা ভালো-মন্দ, কল্যাণ-অকল্যাণ বিষয়ে অন্তর্জ্ঞানসম্পন্ন। মানুষ এমনসব সাংস্কৃতিক রীতিনীতি, আচার-আচরণ ও প্রথা গ্রহণ করে, যা তার উপযোগী এবং যে স্থান-কাল-পাত্রে তারা বাস করে তার জন্যও যথোপযুক্ত। সাংস্কৃতিক প্রথা-পদ্ধতি ও ঐতিহ্যের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যাপক বৈচিত্র্যময়, পরস্পর বিপরীত ও সাংঘর্ষিক প্রেক্ষাপটে যতটা সম্ভব সফলতা অর্জন এবং মন্দ ও ক্ষতি পরিহার করা। ইসলামী মূলনীতির প্রেক্ষাপটে, দেশীয় বা স্থানীয় সংস্কৃতি মূলত বৈশিষ্ট্যগতভাবে সেসব সামাজিক গোষ্ঠীর কল্যাণের সাথে সম্পৃক্ত যারা এসব নীতিমালা গ্রহণ করেছে। এ কারণে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের অনুমোদনকে স্কলারগণ কল্যাণসাধন এবং ক্ষতি থেকে রক্ষা সংক্রান্ত ইসলামের চূড়ান্ত অঙ্গীকারের নজীর হিসেবে বিবেচনা করে।

‘সংস্কৃতির আইনগত গুরুত্ব’ সংক্রান্ত মূলনীতি সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারকে পুরোপুরি বর্জনের অনুমোদন দেয় না। এই মূলনীতি যে কোনো সাংস্কৃতিক উপাদান গ্রহণ করতে মুসলমানদের অনুমতি দেয়, যতক্ষণ পর্যন্ত তা অনিষ্টকর ও অপকারী প্রমাণিত না হয় এবং যা কোনোভাবেই শিরক, মূর্তিপূজা, বহু সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস, কিংবা আল্লাহর সাথে শরীক করা সম্পর্কিত না হয়। এই মূলনীতি ঈমানের সুরক্ষা প্রদানকারী যে কোনো সাংস্কৃতিক উপাদানকে গ্রহণ করে। মাকাসিদে শরীয়াহর অন্যতম লক্ষ্যও এটি। ইসলামের স্বীকৃত দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে প্রথা ও আচার-আচরণ ততক্ষণ পর্যন্ত অনুমোদনযোগ্য, হিতকর ও কল্যাণকর মনে করতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত তা ভিন্ন কিছু প্রমাণিত না হয়। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ইসলামের সুস্পষ্ট মৌলনীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।

সাংস্কৃতিক প্রথা ও ঐতিহ্য পরিচয়ের একটি মৌলিক দিক। এসব রীতিনীতি ও প্রথা জনগণের মাঝে এত গভীরভাবে প্রোথিত যে তা তাদের মৌলিক সত্তা ও প্রকৃতি থেকে পৃথক করা কঠিন। চিরস্থায়ী মূলনীতি সামনে রেখে প্রথাকে যতদূর সম্ভব অপরিবর্তিত রাখাই অধিকতর বিজ্ঞোচিত। চিরপ্রচলিত প্রথা ও ঐতিহ্যকে বিনা কারণে পরিবর্তন করা ক্ষতিকর ও অপকারী। কেননা, এসবের সাথে সামাজিক চাহিদার সুদৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে। ক্ষতিকর প্রথা ও রীতিনীতি অবশ্যই বাতিল করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন বিচক্ষণ কলাকৌশল ও সময়। এক্ষেত্রে নবীর জীবনের ঘটনা আমাদের সামনে দৃষ্টান্ত হিসেবে রয়েছে। তিনি তাঁর সাহাবীদেরকে ইসলামের আদর্শ পূর্ণমাত্রায় অনুসরণের পথে ধীরে ধীরে এগিয়েছেন।

রাসূল বলেছেন— যে ব্যক্তি কোনো জাতির অনুকরণ করে (তাশাব্বাহা), সে তাদের অন্তর্ভুক্ত। (সুনান আবু দাউদ, ৪০৩১)

এ হাদীসে অন্যদের বশংবদ হয়ে থাকা, মাত্রাতিরিক্ত আজ্ঞাবহ ও মোসাহেবীসুলভ আচরণের নিন্দা করা হয়েছে। এখানে মহানবী সংস্কৃতির সুস্থ ও কল্যাণকর মিথস্ক্রিয়াকে ভর্ৎসনা, সমালোচনা, তিরস্কার, নিন্দা বা দোষারোপ করেননি।

এসব ইতিবাচক সাংস্কৃতিক মিথষ্ক্রিয়ার গুরুত্ব ও তাৎপর্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে যখন তা করা হয় কোনো প্রশংসনীয় কারণে। যেমন: অন্যদের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, সমঝোতা ও সহযোগিতার সেতুবন্ধন গড়ে তোলা। নির্ভরযোগ্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, নবী (সা) নিজে বিভিন্ন ধরনের পোশাক পরিধান করেছেন, যা তাঁকে উপহার হিসেবে দেওয়া হয় বাইজেনটাইন, ইয়েমেন এবং অন্যান্য অমুসলিম শাসকদের পক্ষ থেকে। (সুনানে আবু দাউদ, ৪০৪৭)

মুসলমানরা তাদের নিজস্ব স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত সৃজনশীল পোশাকের জন্য পরিচিত। এর মধ্যে রয়েছে আরব পুরুষদের ব্যবহৃত দীর্ঘ সাওব বা আবায়া এবং হিজাব বা মাথার স্কার্ফ ও অন্যান্য পোশাক, যা মুসলিম নারীরা বর্তমানে মরক্কো থেকে মালয়েশিয়া পর্যন্ত ব্যবহার করছে। বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ আলেমদের ব্যবহৃত পাঞ্জাবিকে সুন্নতি পোশাক হিসেবে বিবেচনা করে। সুন্নতি পোশাক মানে যা স্বয়ং রাসূলুল্লাহ পরিধান করতেন। প্রকৃতপক্ষে পাঞ্জাবি হচ্ছে পোশাকের ক্ষেত্রে নতুন এক ধরনের সাংস্কৃতিক উপাদান, যা রাসূলের পোশাক থেকে তাৎপর্যপূর্ণভাবে পৃথক। আরবরা যে খাবার তৈরি করে তা সেন্ট্রাল এশিয়া, ইরান ও ভারতের মুসলমানদের প্রস্তুতকৃত খাবার থেকে বহুলাংশে আলাদা। মুসলমানরা ঋতু এবং ফসল কাটার সময়ভিত্তিক সৌর ও তারকানির্ভর পঞ্জিকা ব্যবহার করেছে, যদিও তারা চান্দ্রপঞ্জিকাও ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছে।

রাসূলের সময়কাল থেকে আজ পর্যন্ত মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র মসজিদের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে মিহরাব বিদ্যমান, যার উৎপত্তি হচ্ছে শাম বা সিরিয়া।[7]

রাসূল মক্কা থেকে হিজরতের পর মদীনায় নির্মাণ করা হয় মসজিদে নববী। তখন মসজিদে নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে মানুষকে কীভাবে ডাকা যায়, সে বিষয়ে রাসূল সাহাবীদের সাথে পরামর্শ করেন। নামাযের সময় হলে পতাকা উত্তোলনের পরামর্শ দিলেন একজন, যাতে মানুষ এটা দেখে একে অপরকে নামাযের জন্য ডাকতে পারে। কিন্তু এ মতটি রাসূলের পছন্দ হয়নি। অপর একজন শিঙ্গা ফুঁকে নামাযের জন্য মানুষকে আহ্বান জানাতে বললেন। এ মতটিও তাঁর পছন্দ হলো না। তিনি বললেন, এটা ইহুদীদের প্রথা। কেউ একজন ঘণ্টা বাজানোর পরামর্শ দিলেন। তিনি বললেন, এটা খ্রিষ্টানদের রীতি। আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ আযানের বাক্যগুলো স্বপ্নে দেখেন। তিনি রাসূলের নিকট স্বপ্নের বিষয়টি বলেন। রাসূল বিলালকে আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদের কথামতো কাজ করার জন্য বলেন। তখন থেকে বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা আযানের এ নিয়ম পালন করে আসছে। (আবু দাউদ, ৪২০ থেকে সংক্ষেপিত)

আধুনিক যুগের আগে স্থানীয় সৃজনশীল সংস্কৃতি গ্রহণ করার মাধ্যমে ইসলাম যে একটি স্থানীয় রূপ লাভ করেছিলো, তার বিভিন্ন প্রমাণ পাওয়া যায়। আরব মুসলিম নাবিক ও সওদাগরদের মাধ্যমে ইসলামের প্রাথমিক যুগেই ইন্দো-মালয় উপকূলে ইসলাম পৌঁছে গিয়েছিলো। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই বিপুলসংখ্যক মানুষের কাছে ইসলাম কীভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছিলো? এ প্রসঙ্গে ফিলিপাইনের জাতীয় বীর জোসে রিজালের একটি উদ্ধৃতি এখানে প্রাসঙ্গিক হবে। তিনি লিখেছেন, “দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মুসলিম বণিকদের কয়েকটি প্রশংসনীয় গুণের অন্যতম ছিল পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বদান্যতা, আতিথেয়তা ও সততা। এভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিপুলসংখ্যক মানুষ ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে।”

সে সময় ছিল না কোনো অ্যামপ্লিফায়ার বা মাইক। মুসলমানরা বুঝতে পেরেছিলো, নামাযের জন্য ডাকার ক্ষেত্রে আযান উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারছে না। ইন্দোনেশিয়ার গভীর অরণ্য অঞ্চলে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর কাছে মনুষ্য কণ্ঠনিঃসৃত ধ্বনি পৌঁছাচ্ছিল না। তাহলে কীভাবে গভীর অরণ্যের মানুষের কাছে আযানের সুমধুর আহ্বানকে পৌঁছানো যায়?

মুসলমানরা ঢোল পিটিয়ে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করার স্থানীয় রীতিকে গ্রহণ করে। তারা ঢোলকে আযানের স্থলাভিষিক্ত করেনি। তবে মসজিদের বাইরে রাখা বড় আকারের ঢোল পিটিয়ে মানুষকে নামাযের দিকে আহ্বান জানানোর প্রথা চালু করে। মানুষকে নামাযে ডাকার জন্য ঢোল পিটিয়ে জোরালো শব্দ সৃষ্টি করা হয়। এ ঢোলের গভীর, অতল ও বিস্তৃত শব্দ ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয়ে অরণ্য জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ঢোলের শব্দ জানান দেয় যে নামায আদায়ের সময় হয়েছে।

মালয়েশিয়াসহ পুরো মালয় দ্বীপপুঞ্জে এই ঢোলকে বলা হয় বেদুক-বেদুগ। মানুষকে নামাযের দিকে আহ্বান করতে এটা ব্যবহার করা হয়। আযানের পূর্বে বিশেষ সুমধুর ছন্দে ধ্বনি সৃষ্টি করার জন্য এটা ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে মাইক বা অ্যামপ্লিফায়ার সহজপ্রাপ্য হওয়া সত্ত্বেও পূর্বের মতো এর প্রচলন রয়ে গেছে। একটি ব্যতিক্রমধর্মী পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ঢোলের প্রচলন হয়। আলেমদের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের অভিমত হচ্ছে, যেহেতু মাইক বা অ্যামপ্লিফায়ার এখন সহজলভ্য, তাই আযানের পূর্বে ঢোল ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। আলেমদের একাংশ মনে করেন, আযানের পূর্বে ঢোল ব্যবহার বিদায়াত।

২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট জাকার্তার দি নিউ স্ট্রেইটস টাইমস পত্রিকার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, জাকার্তাস্থ ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় মসজিদ ইশতিকলাল মসজিদে আযানের পূর্বে ঢোল পিটিয়ে মালয়েশিয়ার রাজা সুলতান আব্দুল্লাহ নামাযের জন্য মুসল্লীদেরকে প্রতীকী আহ্বান জানান। এ মসজিদটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম মসজিদ, যেখানে একই সাথে ২ লক্ষ মুসল্লী নামায আদায় করতে পারে। যে ঢোলের দ্বারা নামাযের জন্য আহ্বান করা হয়, তা তিন শতাধিক বছরের পুরানো।

মানব সংস্কৃতি স্থির ও অপরিবর্তনশীল নয়। যে কোনো বড় দেশের রয়েছে জটিল ও বহুরূপী বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, যা পরস্পরের পরিপূরক ও প্রতিযোগী। এ ধরনের স্থানীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের নানান ধারাকে অনুমোদন দেওয়া উদার মনোভাবের পরিচায়ক।

স্থানীয় প্রথা ও রীতিনীতিকে সরাসরি অনুকরণ করার চেয়ে সৃজনশীল অভিযোজন করে নেওয়া অধিক কল্যাণকর। একইভাবে শুধুমাত্র সুস্থ সাংস্কৃতিক আচার-প্রথা নিছক গ্রহণ করে নেওয়ার মাঝেও পরিতৃপ্ত হওয়ার কিছু নেই। পূর্বের চেয়ে অধিক কল্যাণকর ফল লাভের জন্য আমাদের থাকতে হবে বাছাই করার সক্ষমতা।

মসজিদ নির্মাণের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো একক ছাঁচ বা বাহ্যিক অবয়ব বা গঠন থাকা প্রয়োজনীয় নয়। বরং মসজিদের কাঠামো ও নকশা অবশ্যই সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে অবস্থান ও পরিবেশের যৌগিক সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের সাথে। মসজিদকে এর পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে। মসজিদের নকশা, কাঠামো ও দৃশ্যচিত্র দেশজ ও আঞ্চলিক স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য, প্রাকৃতিক ও পরিবেশ উপযোগী হতে হবে। মসজিদের স্থাপত্য নকশা দেশজ রুচিবোধ, উপলব্ধি ও শৈলীর সাথে সাংঘর্ষিক না হওয়া বাঞ্ছনীয়। ইতিহাজ জুড়ে আমরা দেখি, মসজিদের স্থাপত্য, বিন্যাস পরিকল্পনা, লেআউট ও নকশা ছিলো স্থানীয় ও আঞ্চলিক সংস্কৃতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ইসলাম মসজিদ নির্মাণের ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ নকশা অনুকরণের বাধ্যবাধকতা আরোপ করে না। নামাযের স্থান এবং ইমামের দাঁড়ানোর জন্য মিহরাব থাকা হলো যে কোনো মসজিদের মৌলিক শর্ত। মুসলমানদের কেউ কেউ মনে করে, গম্বুজ ও মিনার মসজিদের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য। মহানবীর জীবদ্দশায় কিন্তু মসজিদে নববীর কোনো গম্বুজ কিংবা মিনার ছিল না। মুসলিম বিশ্বে স্থাপত্যের ক্ষেত্রে গম্বুজ ও মিনার হচ্ছে পরবর্তী কালের উদ্ভাবন।

আধ্যাত্মিকতার কথা বাদ দিলেও বস্তুগত বিবেচনায়ও বলা যায়, বৈচিত্র্যের মধ্য দিয়ে ঐক্যই হলো ইসলামী স্থাপত্যকলার প্রতীকী উদাহরণ। গোটা দুনিয়া জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিখ্যাত মসজিদগুলোর নান্দনিকতা ও সৌন্দর্যের প্রকাশ সেখানকার পরিবেশ এবং সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটের সাথে সম্পর্কিত। শিল্পকর্ম ও নকশার জন্য পাথর, কাঠ এবং অন্যান্য উপকরণ ব্যবহার করা হয়। সেইসাথে ব্যবহার করা হয় স্থানীয় ঐতিহ্য-আশ্রয়ী অলঙ্করণ।

মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের ক্ষেত্রে গম্বুজ হলো তুলনামূলকভাবে পরবর্তী সময়ের সংযোজন। এর নকশা এমনভাবে করা হয় যাতে নামায আদায়ের জন্য বিলাসবহুল ও আরামপ্রদ সুবিস্তৃত স্থানের ব্যবস্থা থাকে। এগুলো নির্মাণ করা হতো পিলারের সাপোর্ট ছাড়া। কারণ, তখন লোহা ও ইস্পাতের বিম ব্যবহার করার সামর্থ্য ও সুযোগ নির্মাতাদের ছিলো না। অ্যামপ্লিফায়ারবিহীন যুগে আযান দেওয়ার জন্য মিনার অত্যন্ত উপযোগী ছিল। সেইসাথে মিনার নির্মাণের আরেকটি উদ্দেশ্যও তখন ছিল। বাতিঘর যেমন জাহাজের দিকনির্দেশ করে, তেমনি মিনার শুরুতে কাফেলার জন্য দিকনির্দেশক ছিল। দূরবর্তী কাফেলা যাতে সঠিক পথে চলতে পারে, সেজন্য এশার নামাযের পর মসজিদের মিনারের উপরিভাগে আগুন জ্বালিয়ে রাখা হতো। আরবী শব্দ মিনারের অর্থ হচ্ছে আগুনের স্থান। চীন, আন্দালুসিয়া এবং উত্তর ও পশ্চিম আফ্রিকার মুসলমানরা গম্বুজ ও মিনার গ্রহণ করেনি। এর অন্যতম কারণ হলো, এসব অঞ্চলের পরিবেশের সাথে গম্বুজ ও মিনার সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

আন্দালুসিয়া ও উত্তর আফ্রিকার মসজিদে স্থানীয় রোমান খিলানের উপাদানের সংমিশ্রণ ঘটেছে ব্যাপকভাবে। অটোমানরা স্থানীয় আনাতোলীয় উপাদানের উপর ভিত্তি করে সুউচ্চ গম্বুজ কাঠামো এবং স্থানীয় গ্রিক গির্জার মৌলিক রূপরেখাকে গ্রহণ করেছে।

চীনে মসজিদের ক্ষেত্রে সুস্পষ্টভাবে গ্রহণ করা হয়েছে চীনের প্রাচীন প্রতীকী উপাদানকে। অপরদিকে, পূর্ব ও পশ্চিম আফ্রিকার মসজিদে আফ্রিকার সুনির্দিষ্ট চেতনাকে ধারণ করা হয়েছে। তাজমহলে নিখুঁত সমন্বয় ঘটেছে ভারতীয় ও ইরানী উপাদানসমূহের। এভাবে তাজমহল ফলপ্রসূভাবে উপমহাদেশীয় সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করেছে এবং ভারতে মুসলিম অবদানের সর্বাধিক সমৃদ্ধ স্বাক্ষরে পরিণত হয়েছে।[8]

বাংলাদেশের চিত্রকলা ও স্থাপত্যে আঞ্চলিক শৈলী দৃশ্যমান। যেমন: ঢাকায় গুলশান আজাদ মসজিদের সুদীর্ঘ মিনার প্রচলিত ঐতিহ্যবাহী মিনার হতে ভিন্ন প্রকৃতির। এই মিনারের উপরিভাগ একটি কুঁড়ির মতো। দেখে মনে হয়, আযানের ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হলে এটি বিশাল ছাতার মতো খুলে যাবে। উল্লেখ্য, মদীনার মসজিদে নববীর সুবিশাল রৌদ্রছাতা সূর্যের অবস্থান পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যায় এবং বন্ধ হয়। মুসল্লীদের ছায়া দিতে এ ছাতা সর্বদা সূর্যের অভিমুখী হয়ে থাকে। বাংলাদেশের স্থপতি মেজবাহ-উল-কবিরের নকশাকৃত গুলশান আজাদ মসজিদের কোনো গম্বুজ নেই।

স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম ঢাকার বায়তুর রউফ মসজিদের নকশা প্রণয়ন করেছেন। এ মসজিদের স্থাপত্যশিল্প বিষয়ক উৎকর্ষতার জন্য তিনি এক মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের আগা খান অ্যাওয়ার্ড-২০১৬ অর্জন করেন। দেশের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য এবং জনগণের সাংস্কৃতিক পটভূমির প্রেক্ষিতে মসজিদটির নকশা করা হয়েছে।

আযানের শাব্দিক অর্থ ঘোষণা। সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত কোনো অনুষ্ঠানে জনসমাবেশ করার উদ্দেশ্যে আযান ব্যবহৃত হয়। ফিলিস্তিনে বিদেশি শক্তির দখলদারিত্ব ও আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে আযানের ব্যবহার রয়েছে। দুর্যোগের সম্মুখীন হলে মানুষ ঐশী সাহায্য কামনা করে আযান দেয়। নবজাত শিশুর কানে আযান দেওয়ার ইসলামী ঐতিহ্য মুসলমানদের মাঝে বিদ্যমান। সঙ্গীতের মতো আযানেরও এক ধরনের ঔষধিগুণ রয়েছে বলে ইসলামী লোকচিকিৎসায় মনে করা হয়।

বিভিন্ন অঞ্চলে আযানের বিভিন্ন ধরন প্রচলিত। এর কোনো নির্ধারিত সুর নেই। তুর্কি মুসলমানরা আজও আযানের সুমধুর আলঙ্কারিক স্টাইলের জন্য বিখ্যাত। আরবের হিজাজ অঞ্চলের আযান আর নজদ অঞ্চলের আযান এক রকম নয়। হিজাজে সুমধুর সুরেলা কণ্ঠে আযান দেওয়া হয়। কিন্তু মক্কার বায়তুল হারাম মসজিদ থেকে সুরেলা কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াত ও আযান দেওয়াকে নিরুৎসাহিত করা হয়।

আযানের দুটি দিক রয়েছে। কেউ শুধুমাত্র আযানের সমধুর সুর মনোযোগ দিয়ে শুনতে পারে। আবার কেউ আযান শুনতে পারে এর অন্তর্নিহিত বাণী ও তাৎপর্য অনুধাবনের জন্য। আযানে ব্যবহৃত শব্দ গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহ এবং মানুষ আযানের সুরেলা ধ্বনি শুনতে পছন্দ করে। আযান সুরেলা, সুশ্রাব্য, সুমধুর ও প্রীতিকর হতেই হবে এমন নয়, কিন্তু ছন্দময় ও সুরেলা ভঙ্গিতে আযান দেওয়া হলে তা অধিক গ্রহণযোগ্য হয়। সুমধুর স্বর মানুষকে সম্মোহিত করে। মসজিদের মিনার থেকে দেওয়া সুরেলা আযান শুনে মনে হয় কেউ গাইছে। আযান মানুষকে ইসলামের দিকেও আকৃষ্ট করে। দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করা যায়, পাশ্চাত্যের নওমুসলিম মারিয়ম জামিলা বর্ণনা করেছেন, কীভাবে আযান এবং কুরআন তিলাওয়াত তাঁকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করেছে। সুবহে সাদিকে আযানের মাধ্যমে মুসলমানরা একটি নতুন দিনের সূচনা উদযাপন করে।

“প্রথার রয়েছে আইনগত গুরুত্ব”— এ কথার অর্থ হচ্ছে সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্টভাবে ফরয বা হারামকে বাতিল করতে এ নীতির সাহায্য নেওয়া যাবে না। তবে জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক বাস্তবতাকে বিবেচনায় না নিয়ে যারা মূলভাষ্যকে অন্ধের ন্যায় আঁকড়ে ধরে, তারা গুরুতর ভুলের মধ্যে রয়েছে। ইমাম শাফেয়ী ইরাকে অবস্থানকালে যে মত দিয়েছিলেন, পরবর্তীতে মিশরে অবস্থানকালে একই বিষয়ে স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনায় বিপরীত মত প্রদান করেন। শাফেয়ী ছিলেন পরিস্থিতি ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার তীক্ষ্ম পর্যবেক্ষক। মতামত দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি স্থান-কাল-পাত্রের গুরুত্ব বিবেচনায় নিতেন।

প্রথার ব্যাপারে ইসলাম খোলামেলা ও সংস্কারমুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। অনুমান করা অনুমোদিত, যদি তা কল্যাণকর হয় এবং তা স্থানীয় প্রথার ক্ষেত্রেও প্রাসঙ্গিক হয়। প্রথাকেও অবশ্যই গ্রহণযোগ্য মনে করতে হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত তা অন্য কিছু বলে প্রমাণিত না হয়। প্রথার ক্ষেত্রে সম্মতি বা অনুমোদনই মূলবিধি (আল-আসল ফিল ইবাহা)। কোনো বিশেষ সনাতন প্রথা বা ঐতিহ্য অনুমোদনের যোগ্য কিনা, তা প্রমাণের দায়িত্ব পুরোপুরিভাবে তাদের উপর বর্তায় যারা তা প্রত্যাখ্যান করে। যারা তা অনুমোদন করে, এ দায়িত্ব তাদের নয়। কঠোরতার পরিবর্তে নমনীয়তার পক্ষে অবস্থান নেওয়াই হলো ইসলামের মূলনীতি।[9] প্রথা সম্পর্কিত মূলনীতি হচ্ছে অব্যাহতি (আল-আসল ফিল আদাতিল আফউ), অর্থাৎ তারা দোষারোপ হতে মুক্ত।

অন্যান্য মূলনীতি: যে কোনো বিষয় অন্য কিছু হিসেবে প্রমাণিত হওয়ার আগ পর্যন্ত অনুমোদিত। দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত নির্দোষ মনে করতে হবে। যা ক্ষতির কারণ তা অপসারণযোগ্য। যে বিধিবিধান, নিয়ম বা সিদ্ধান্ত ক্ষতিকর তা অকেজো-বাতিল। অনাবশ্যক কষ্টের মুখোমুখি হওয়া ব্যতিরেকে মানুষ যা নিষ্পন্ন করতে অসমর্থ তা বাতিলযোগ্য।

বস্তুত সাংস্কৃতিক আচার ও রীতিনীতি প্রত্যাখ্যানের কোনো অর্থ হয় না। সুস্থ ও কল্যাণকর প্রথার অনুসরণ এক ধরনের বাধ্যবাধকতা। যা সুস্থ ও কল্যাণকর প্রথার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত, তা সুস্থ ও কল্যাণকর নীতি-আদর্শ দ্বারাও সমভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত; যা স্থানীয় সংস্কৃতির সকল কল্যাণকর বিষয়কে প্রকারান্তরে দৃঢ়তার সাথে অনুমোদন করে। জনগণকে তাদের প্রথা, আচার এবং জীবনের সার্বজনীন আশা-আকাঙ্ক্ষা অনুসরণ করতে দেওয়া অবশ্য করণীয়।

ইসলাম মুসলমানদের সকল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি উদার দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করতে শিক্ষা দেয়। স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি সহনশীল হওয়ার কারণে এশিয়া, আফ্রিকা ও অন্যত্র যেখানেই ইসলাম পৌঁছেছে সেখানেই শেকড় বিস্তার করা সম্ভব হয়েছে। সাংস্কৃতিক প্রথা ও রীতিনীতি প্রকৃতিগতভাবে সুস্থ। প্রকারান্তরে এর অর্থ হচ্ছে প্রতিষ্ঠিত নিয়মনীতি ও বৈশিষ্ট্যের বিরুদ্ধাচরণ করা মানুষের জন্য দুরূহ।

ঐতিহ্যবাহী মুসলিম সমাজের স্বতন্ত্র গুণ এবং বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্য। ইবনে বতুতা বিভিন্ন দেশ সফরকালে সচরাচর অনুভব করতেন যে তিনি স্বদেশেই আছেন। বিভিন্ন মুসলিম দেশ পরিদর্শনের সময় তিনি লক্ষ্য করেন, আঞ্চলিক বৈচিত্র্যতা থাকা সত্ত্বেও ঐশী নীতি-আদর্শে আলোকিত সমাজে ইসলামের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি অক্ষুণ্ন রয়েছে।

নৃতাত্ত্বিক চীনা হুই মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রাচীন-ইসলামী সংস্কৃতির মাঝে রয়েছে বহু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় বিষয়। কেননা তা বিকশিত হয়েছে একটি অসাধারণ আলোকোজ্জ্বল অমুসলিম সভ্যতার ভেতর। চীনা মুসলিম সংস্কৃতি হুই জনগোষ্ঠীকে তাৎপর্যপূর্ণ অভিব্যক্তির মাধ্যমে শক্তিশালী করেছে। এটা স্বকীয় বোধ সমুন্নত রাখতে তাদের সুযোগ করে দিয়েছে। তাদের ইজতেহাদী ব্যাখ্যা অনুযায়ী, তারা একই সাথে খাঁটি মুসলমান এবং স্থানীয় মূল্যবোধ ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতন। এই ব্যাখ্যায় প্রাচীন চীনের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকে পুরোপুরি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

বিশ্বের সর্বত্রই মুসলিম সংস্কৃতি বিকশিত ও সমৃদ্ধ হওয়ার অন্যতম কারণ হলো স্থানীয় ভাষার বোধগম্য ও কৌশলী ব্যবহার। পশ্চিম আফ্রিকা ক্ল্যাসিক্যাল আরবী ভাষার চর্চা করেছে। তা সত্ত্বেও তারা আন্তরিকতার সাথে বৈচিত্র্যপূর্ণ আঞ্চলিক ভাষা ও বাচনের সমৃদ্ধ ও মূল্যবান ব্যবহার করেছে। বাংলা ভাষা মুসলিম শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতার ফলে সমৃদ্ধি লাভ করেছে।

একটি সুস্থ-কল্যাণকর মুসলিম সংস্কৃতি বিনির্মাণের জন্য যা ইতোমধ্যে সুপ্রতিষ্ঠিত তা বিবেচনায় নেওয়া দরকার, বিশেষত সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর সফল উদ্যোগকে। এক্ষেত্রে সম্ভাবনাময় সকল কর্তব্যকর্ম, গতিপথ ও অভিমুখকে শনাক্ত করতে হবে এবং ভুলত্রুটিকেও নিশ্চয় সংশোধন করতে হবে। সফল স্থানীয় মুসলিম সংস্কৃতি পুনর্নির্মাণ করার জন্য প্রয়োজন ইসলাম ও ইতিহাসের সুগভীর জ্ঞান, সেই সাথে সকল টেকসই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বিবেচনায় নেওয়া ।

নৃতাত্ত্বিক ও সামাজিক অভিজ্ঞতা ও পটভূমি যাই হোক না কেন, সংস্কৃতির বেলায় অবশ্যই ইসলামের অতুলনীয়, উদ্দীপক ও বিশ্বজনীন নীতি ও মূল্যবোধকে বিবেচনায় নিতে হবে। একটি সফল মুসলিম সংস্কৃতিকে একই সাথে ইসলামের অতুলনীয় আদর্শ এবং স্থানীয় সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য ও নান্দনিক মূল্যবোধের সাথে সাদৃশ্য রেখে সহাবস্থান করতে হবে।

ইসলামের গতিশীল বহু-রূপটি দুটি পর্যায়ে দৃষ্টিগোচর হয়। প্রথম পর্যায় হচ্ছে বিভিন্ন মাজহাবের মূলভাষ্যের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য এবং দ্বিতীয় পর্যায় হচ্ছে সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য। বিভিন্ন সমাজের মুসলমানরা তাদের নিজস্ব রীতি-আচার-অভ্যাস অনুশীলন পুরোপুরি রদ করেননি। আরব, তুর্কি, দক্ষিণ এশীয় ও আফ্রিকানদের জীবনযাপন প্রণালী থেকে তা স্পষ্ট। আফ্রিকা ও এশিয়ার মুসলমানরা ইসলামের মূলনীতি লঙ্ঘন বা এর সীমারেখার বাইরে না গিয়েই নিজেদের রীতি-আচার-সংস্কার-আদব-কায়দা বজায় রেখেছে।

বিশ্বাসের ক্ষেত্রে ইসলাম অভিন্ন। তবে যদি কেউ বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মধ্য এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, বসনিয়া এবং পাশ্চাত্যের দেশসমূহের মুসলমানদের জীবন ও জীবনাচারের দিকে তাকায়, সামগ্রিকভাবে তাদের জীবনযাপনের পার্থক্য তার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠবে। ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং অন্যান্য অমুসলিম দেশের মুসলিম অভিবাসীরা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিন্যাস ও ধরনের দিক থেকে পরস্পর ভিন্ন। যারা সৌদি আরবে হজ্ব করতে আসে, তাদের মাঝে আমরা নানা রূপ ও বৈচিত্র্য লক্ষ্য করি। ইসলামী সংস্কৃতি ‘বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যে’র ভেতরে দৃঢ়ভাবে প্রোথিত।

অনার কিলিংসহ যেসব সমস্যা মুসলিম সমাজে বিদ্যমান তা প্রকৃতপক্ষে স্থানীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, কুসংস্কার, শিক্ষা ও অপশাসনের সমস্যা। এ ধরনের গোত্রীয় ও নৃতাত্ত্বিক বিধানকে অযৌক্তিকভাবে ‘ইসলাম সম্পর্কিত সমস্যা’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। ধর্ম সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করে। অপরদিকে, সংস্কৃতি প্রভাবিত করে জনগণের ধর্মচর্চাকে। ইসলামে এ দুয়ের মাঝে সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। একজন আরব, ইন্দোনেশীয়, নাইজেরীয় কিংবা বসনীয় মুসলমানের জীবন ও জীবিকার দিকে তাকালে তা সুস্পষ্ট হয়। তাদের পোশাক, খাদ্য এবং ভাষা আলাদা। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মুসলমানদের রয়েছে পৃথক সংস্কৃতি, যদিও তারা একই ধর্মের অনুসারী। এ প্রসঙ্গে থাইল্যান্ড ইউনিভার্সিটির ফেলো জোসেফ আই. ফার্নান্ডোর বক্তব্য উল্লেখ করা যেতে পারে। তার ভাষায়: “ইন্দোনেশিয়া বা মালয়েশিয়ার মুসলমান আর সৌদি আরবের মুসলমান হুবহু এক নয়। একজন সৌদি মুসলমান আরব সংস্কৃতি ও তার নিজস্ব ইতিহাস, পরিবেশ ও ঐতিহ্যের ফল।”[10]

ডাচ সমাজবিজ্ঞানী ও রাজনীতিক পিম ফরটুইন বলেছেন: এ কথা মনে জাগরুক থাকতে হবে যে সংস্কৃতি — যাকে অন্যরা জীবনাচার হিসেবে আখ্যায়িত করে — তা এত সহজে পরিত্যাগ করা যায় না। বিখ্যাত জার্মান স্কলার মুরাদ হফম্যান যথার্থই বলেছেন যে তিনি ইসলামকে ধর্ম হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তবে সেইসাথে তিনি ধারণ করেন পরিচ্ছন্নতা, নিখুঁত ও চরম উৎকর্ষতার মতো পাশ্চাত্যের মূল্যবোধ। আরবের একটি বিখ্যাত ও সুপরিচিত প্রবাদ হচ্ছে, যারা নিজ ইতিহাস ভুলে যায়, তারা হারিয়ে যায়। ইতিহাস বলতে এখানে যশ-গৌরব-মহিমা, উত্তরাধিকার ও সংস্কৃতিকে বুঝানো হয়েছে।

উপসংহারে, আমাদের বুঝতে হবে যে আইনি-রাজনৈতিক পরিচিতি আর নৃতাত্ত্বিক পরিচিতি এক নয়। বাঙালিরা বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে বসবাস করে। তাদের আইনগত ও রাজনৈতিক পরিচয় ভিন্ন। প্রায় ২.৫ মিলিয়ন বাঙালি করাচিতে বসবাস করে। তাদের আইনি-রাজনৈতিক পরিচয় হচ্ছে তারা পাকিস্তানি। উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বাঙালির স্থায়ী নিবাস যুক্তরাজ্যে। তাদের আইনি-রাজনৈতিক পরিচয় হলো তারা গ্রেট ব্রিটেনের নাগরিক। মক্কার মিসফালাহ এলাকায় বিপুলসংখ্যক বাঙালি স্থায়ীভাবে বাস করে। তাদের রয়েছে সৌদি আরবের পাসপোর্ট, তাদের আইনি-রাজনৈতিক পরিচয় হচ্ছে তারা সৌদি আরবের নাগরিক। প্লুরালিজম এবং মাল্টিকালচারালিজম নতুন কোনো বিষয় নয়। তুরস্কের মিল্লাত এক ধরনের স্বায়ত্ত্বশাসন ভোগ করত।

তথ্য নির্দেশ:

[1] “সংস্কৃতি হচ্ছে এমনসব নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ, যা মানুষকে জন্মের পর হতে প্রভাবিত করে।” মালেক বিন নাবী, দি কোশ্চেন অব কালচার, ইসলামিক বুক ট্রাস্ট, কুয়ালালামপুর ০০৩, পৃষ্ঠা ৫১।

[2] “ইসলাম দেশপ্রেমের বিরোধী নয়। শর্ত হচ্ছে, তা মানবজাতির সযত্নলালিত সমতা ও ভ্রাতৃত্ব, ন্যায়বিচার, পক্ষপাতহীন সহমর্মিতার নীতির পরিপন্থী হবে না। ইসলামের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তা অসূয়া সাম্প্রদায়িকতা, আগ্রাসী ও উৎকট স্বাদেশিকতার পরিপন্থী।” আব্দুর রহমান মোমিন, প্লুরালিজম অ্যান্ড মাল্টিকালচারালিজম: অ্যান ইসলামিক পার্সপেক্টিভ, আমেরিকান জার্নাল অব ইসলামিক সোশ্যাল সায়েন্সেস, আইআইআইটি অ্যান্ড এএমএসএস, হার্নডন, যুক্তরাষ্ট্র, ভলিউম ১৮, নং ১, বসন্তকাল ২০০১, পৃষ্ঠা ১৪১।

[3] উপদলীয় মনোভাব; আসাবিয়্যাহ। নবীকে (সা.) আসাবিয়্যাহ সংজ্ঞায়িত করতে অনুরোধ করা হয়েছিলো। তিনি বলেন, এটা হলো নিজের লোকদের এমনভাবে সাহায্য করা যা নৈতিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে অন্যায়। অতঃপর তিনি বলেন, যে মানুষকে আসাবিয়্যাহর দিকে আহ্বান জানায়, সে আমাদের কেউ নয়। যে এর জন্য যুদ্ধ করে, সে আমাদের কেউ নয়। যে এর জন্য মৃত্যুবরণ করে, সে আমাদের কেউ নয়। … একজন সাহাবী নবীকে প্রশ্ন করেন, নিজের লোকদের ভালোবাসাও আসাবিয়্যাহর অংশ কিনা। তিনি এর নেতিবাচক জবাব দেন এবং বলেন, আসাবিয়্যাহ হচ্ছে অবিচার ও নির্যাতনের বিষয়ে নিজ সম্প্রদায়কে সাহায্য করা। প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১৩৯।

[4] উম্মাহ একটি আরবী শব্দ যার অর্থ “সম্প্রদায়”। এটা শা’ব হতে পৃথক, যার অর্থ অভিন্ন বংশানুক্রম বা ভৌগোলিক সীমানার অধিকারী জাতি। তাই এটাকে আখ্যায়িত করা চলে একটি সুপরা-ন্যাশনাল মানবগোষ্ঠী হিসেবে, যাদের রয়েছে অভিন্ন ইতিহাস। উম্মাহ হচ্ছে এমন “একটি সম্প্রদায় যার ভিত্তি হচ্ছে আধ্যাত্মিক আকাঙ্ক্ষা … একটি সম্প্রদায় যারা সুবিচার, পারস্পরিক সাহায্য-সহায়তা, সংহতি ও ভ্রাতৃত্ব সম্বন্ধে সম্যক ধারণা রাখে।” আলীয়া আলী ইজেতবেগোভিচ, ইসলাম বিটুইন ইস্ট অ্যান্ড ওয়েস্ট, আমেরিকান ট্রাস্ট পাবলিকেশন্স, যুক্তরাষ্ট্র, পৃষ্ঠা ১৭০-১৭১।

[5] তাফসীরে জালালাইন, ইংরেজি অনু. ফেরাস হামজা, রয়্যাল আলাল বায়েত ইনস্টিটিউট ফর ইসলামিক থ্যট, ফন্স ভিটি, লুইসভিল, কেওয়াই ৪০২০৭, ২০০৮, পৃষ্ঠা ১৫৪।

[6] উরফ বা প্রথা হচ্ছে ইসলামী আইনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস। আহকাম বা আইনি বিধিবিধান স্থান-কাল-পাত্রভেদে পরিবর্তিত হয়। “উরফ হচ্ছে বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর সমষ্টিগত চর্চা … এটি কারো ব্যক্তিগত অভ্যাসের দিকে ইঙ্গিত করে না … যেসব প্রথা শরীয়াহর মূলনীতি লংঘন করে না তা বৈধ … আলেমগণ কুরআন ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে উরফকে বৈধ মান হিসেবে সাধারণভাবে গ্রহণ করেছেন … হালাল-হারাম সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রথাকে একটি বৈধ ভিত্তি হিসেবে শরীয়াহ নীতিগত স্বীকৃতি দিয়েছে।” মোহাম্মদ হাশিম কামালী, প্রিন্সিপল্ অব ইসলামিক জুরিসপ্রুডেন্স, চতুর্দশ অধ্যায়, উরফ (কাস্টমস), ইসলামিক টেক্সটস সোসাইটি, কেমব্রিজ, যুক্তরাজ্য, ১৯৯১, পৃষ্ঠা ২৮৩-২৮৪।

[7] তাবাকাতুল কুবরায় আবু হুরায়রার সূত্রে ইবনে সাদ কর্তৃক বর্ণিত হাদীস। উদ্ধৃত আহমদ রাইসুনী, আল-সুরা, আইআইআইটি, লন্ডন-ওয়াশিংটন, ২০১১, পৃষ্ঠা ১৮, ৪৮।

[8] মসজিদের স্থাপত্য পাঁচ ধরনের: পারস্য বা ইরানী, তুর্কি, ভারতীয়, ক্লাসিক্যাল আরবীয় ও চীনা। প্রতিটি মসজিদের রয়েছে নিজস্ব স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। এক মসজিদ থেকে অন্য মসজিদের নকশা আলাদা হবার মূল কারণ একদিকে নির্মাণ সামগ্রীর প্রাপ্যতা ও পরিবেশ এবং অন্যদিকে সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। বহুজাতিক সংস্কৃতির পরিবেশ মসজিদের ধরন, নকশা ও স্থাপত্যের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে থাকে।

মালিতে অবস্থিত গ্রেট জেন্নি মস্ক অত্র অঞ্চলের বৃহত্তম মসজিদ, যা পশ্চিম আফ্রিকীয় রীতিতে নির্মিত। মালিতে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় সেখানকার মসজিদের ছাদ সাধারণত সমতল হয়ে থাকে এবং এ ধরনের ছাদ মুক্ত ও শীতল বায়ুর মধ্যে ঘুমানোর উপযোগী। মালির মসজিদের একটি বৈশিষ্ট্য হলো মসজিদের মেহরাব বাইরের দিকে প্রসারিত যা দেখতে একটি ছোট রুমের মতো।

উত্তর আফ্রিকার তিউনিশিয়ায় কাইরোয়ান গ্রেট মস্ক ত্রিমাত্রিক উপস্থাপনা হাইপোস্টাইলের একটি উদাহরণ। ইসলামপূর্ব আর প্রাচ্য ইসলামের শিল্পকলার সম্মিলন উত্তর আফ্রিকার ধর্মীয় স্থাপত্যে কীভাবে হয়েছিল এটা তার দৃষ্টান্ত। এ মসজিদের গম্বুজের উপাদান রোমান এবং বাইজেন্টাইন স্থাপত্যের কাছ থেকে নেয়া।

আন্দালুসিয়ার গ্রেট মস্ক অব কর্ডোভা উমাইয়ারা পুরোপুরি নির্মাণ করে। বিদ্যমান আঞ্চলিক ঐতিহ্যের ভিত্তিতে অতি উন্নত স্থাপত্যশৈলী উদ্ভাবনে মুসলিম বিশ্বের যোগ্যতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো এই মসজিদ। এ মসজিদে বিদ্যমান ও নবধারার অনন্য সমন্বয় সাধিত হয়েছে।

এ মসজিদটিতে রয়েছে একটি সুবিশাল হাইপোস্টাইল প্রার্থনাগার (অর্থাৎ স্তম্ভ বা পিলার সমৃদ্ধ), একটি প্রাচীরবেষ্টিত ছাদবিহীন অঙ্গন যার মাঝখানে রয়েছে ফোয়ারা, কমলার বাগান, অঙ্গনঘেরা প্রসারিত পায়ে চলার পথ এবং আযান দেওয়ার জন্য একটি মিনার। নামায আদায়ের বিস্তীর্ণ হলটিকে জ্যামিতিক নকশার পুনঃ পুনঃ ব্যবহারের মাধ্যমে আকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছে। প্রাচীন রোমান কলাম বা স্তম্ভ রিসাইকেল করে কর্ডোভার মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। যা থেকে বেরিয়েছে ভারসাম্যপূর্ণ দুইস্তরবিশিষ্ট চমক লাগানো খিলান। এটি পাথর ও লাল ইট দিয়ে নির্মিত।

এর মেহরাব অপরূপ অলঙ্কৃত খিলানের সাহায্যে নির্মিত, যার পেছনে রয়েছে একটি লক্ষ্যণীয় আকারের ফাঁকা জায়গা, যা সাইজে একটি ছোটখাটো রুমের সমান। গোল্ড টেসেরা পাথর, ছোট সোনালি কাঁচখণ্ড এবং রঙের সাহায্যে চোখ ঝলসানো গাঢ়-নীল, লাল-বাদামি, হলুদের সংমিশ্রিত আবহ তৈরি করে খিলানকে সূক্ষ্ম ক্যালিগ্রাফি ও উদ্ভিদজাত অলংকৃত শিল্পকর্মের নকশার মাধ্যমে (ভেজিটাল মোটিফস) অলংকরণ করা হয়।

ভিসিগোথদের স্থাপত্যে সাধারণত হর্সসু-স্টাইল বা অশ্বক্ষুরাকৃতির প্রাধান্য দেখা যায়, যারা রোমানদের অব্যবহিত পর এবং উমাইয়াদের আগমনের পূর্বে এসব অঞ্চল শাসন করে।

প্রাচীন ভারতে অধিকাংশ ভবন ছিল কাঠের তৈরি, কেননা কাঠ সহজলভ্য ছিল। সেইসাথে খিলান কিংবা গম্বুজের সাথে তাদের পরিচয় ছিল না। মধ্যযুগে কাঠ দুর্লভ হয়ে পড়ে। তখন ভারতীয়রা কাঠের বদলে পাথর দিয়ে কাঠামো নির্মাণ করতে শুরু করে।

চীনে নিউজিয়ে মসজিদ হচ্ছে সে দেশের প্রাচীন মসজিদগুলোর অন্যতম (প্রতিষ্ঠা ৯৯৬ সাল)। এ মসজিদে স্থানীয় উপাদান হিসেবে প্রধানত কাঠ ব্যবহৃত হয়েছে। মসজিদটি চীনা স্টাইলে নির্মাণ করা হয়েছে। গোটা ভবনের ভার বহন করেছে কাঠের একটি কাঠামো। বিরাট বিরাট কাঠের খণ্ড ব্যবহার করা হয়েছে লোড বিয়ারিং কলাম এবং ল্যাটারাল বিম নির্মাণের কাজে, যা ভবন নির্মাণ এবং ছাদকে ধারণ করতে সহায়তা করে।

http://www.kamit.jp/27_mali/mal_eng.htm

https://www.khanacademy.org/humanities/art-africa/north-a/x1f9f8bff:tunisia/a/the-great-mosque-of-kairouan

https://www.khanacademy.org/humanities/ap-art-history/early-europe-and-colonial-americas/ap-art-islamic-world-medieval/a/the-great-mosque-of-cordoba

https://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S1110016817302442 All assessed on 28.10.2020

[9] আবু শায়বা, তিরমিযী, হাকিম ও বায়হাকী থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে নবী (সা.) বলেন: ভুল সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নির্দোষ ব্যক্তির শাস্তি লাভের চেয়ে দোষী ব্যক্তি নির্দোষ হিসেবে গণ্য হওয়াটা উত্তম।

[10] জোসেফ আই ফার্নান্ডো, টুওয়ার্ডস আন্ডারস্ট্যান্ডিং দ্য রিলেশন বিটুইন রিলিজিয়ন্স অ্যান্ড কালচার্স ইন সাউথইস্ট এশিয়া, আমেরিকান জার্নাল অব ইসলামিক সোশ্যাল সায়েন্সেস, আইআইআইটি অ্যান্ড এএমএসএস, হার্নডন, যুক্তরাষ্ট্র, ভলিউম ২৪, নং ৪, শরৎকাল ২০০৭, পৃষ্ঠা ১৩৫।

পুস্তক নির্দেশ:

১. ঈসমাইল রাজী আল ফারুকী এবং লুইস লামিয়া আল ফারুকী, দ্যা কালচারাল অ্যাটলাস অফ ইসলাম, ম্যাকমিলান পাবলিশিং কোম্পানি, নিউ ইয়র্ক।

২. লুইস লামিয়া আল ফারুকী, আনমার ফারুকী এলজেইন, হাওয়াজিন ফারুকী, তাইমা আল ফারুকী, অ্যান অ্যানোটেটেড গ্লোসারি অফ অ্যারাবিক মিউজিক্যাল টার্মস, গ্রিনউড প্রেস, ১৯৮১।

৩. জোসেফ প্রোগলার, দ্যা সাউন্ড অফ আযান: মুসলিম রিফ্লেকশনস অন দ্যা কল টু প্রেয়ার, দ্যা প্রোগলার পেপারস, অ্যান আর্কাইভ অফ রাইটিংস, ০২.১২.২০০৩।

http://progler.blogspot.com/2011/06/sound-of-azan-muslim-reflections-on.html Assessed 28.10.2020

৪. জোসেফ প্রোগলার, সাউন্ড অ্যান্ড কমিউনিটি ইন দ্যা মুসলিম কল টু প্রেয়ার, ফোকওয়েজ ম্যাগাজিন, ফল-উইন্টার ২০০৪।

https://folkwaysmedia.si.edu/docs/folkways/magazine/2014/fall-winter/Muslim-Call-to-Prayer.pdf Assessed 28.10.2020

৫. আর এম শ্যাফার, দ্যা টিউনিং অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড, আলফ্রেড এ নফ, নিউ ইয়র্ক, ১৯৭৭।

৬. আর স্টোন, সাউন্ড অ্যান্ড রিদম ইন করপোরেট রিচুয়াল ইন অ্যারাবিয়া, রিভু ইন্টারন্যাশনালে ডি থিওলজি, ভলিউম ২২২, ১৯৮৯।

৭. শেইলা এস ব্লেয়ার এবং জোনাথন এম ব্লুম, দ্যা আর্ট অ্যান্ড আর্কিটেকচার অফ ইসলাম ১২৫০-১৮০০, ইয়েল ইউনিভার্সিটি প্রেস, নিউ ইয়র্ক, ১৯৯৫।

৮. কে এ সি ক্রিজওয়েল এবং জেমস ডব্লিউ অ্যালান, এ শর্ট অ্যাকাউন্ট অফ আর্লি মুসলিম আর্কিটেকচার, দ্যা অ্যামেরিকান ইউনিভার্সিটি অফ কায়রো প্রেস, কায়রো, ১৯৮৯।

৯. রিচার্ড ইটিংহাউসেন, ওলেগ গ্রাবার, মেরিলিন জেনকিনস-মদীনা, ইসলামিক আর্ট অ্যান্ড আর্কিটেকচার, ইয়েল ইউনিভার্সিটি প্রেস, নিউ ইয়র্ক, ২০০১।

১০. পিটার হ্যারিসন, ক্যাসেলস অফ গড: ফর্টিফাইড রিলিজিয়াস বিল্ডিংস অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড, বয়ডেল প্রেস, রোচেস্টার, ২০০৪।

১১. রবার্ট হিলেনব্র্যান্ড, ইসলামিক আর্কিটেকচার: ফর্ম ফাংশন অ্যান্ড মিনিং, কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি প্রেস, নিউ ইয়র্ক, ১৯৯৪।

১২. জন ডি হগ, ইসলামিক আর্কিটেকচার, ইলেকটা/রিজোলি, নিউ ইয়র্ক, ১৯৭৫।

১৩. ইরা ল্যাপিডাস, এ হিস্ট্রি অফ ইসলামিক সোসাইটিজ, ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস, নিউ ইয়র্ক, ২০০২।

১৪. মুরাদ রাম্মাহ, কাইরুয়ান, মিউজিয়াম উইথ নো ফ্রন্টিয়ার্স, ইসলামিক আর্ট ইন দ্যা মেডিটেরানিয়ান, ইফরিক্যিয়া। থার্টিন সেঞ্চুরিজ অফ আর্ট অ্যান্ড আর্কিটেকচার ইন তিউনিশিয়া, ভিয়েনা: ইলেকটা, ২০০২।

১৫. অ্যান্ড্রু পিটারসেন, ডিকশনারি অফ ইসলামিক আর্কিটেকচার, রাউটলেজ, নিউ ইয়র্ক, ১৯৯৯।

এ ধরনের আরো লেখা