নারীরা কি আযান দিতে ও ইমামতি করতে পারবে?
নারীদের জামায়াতে নারীর ইমামতি নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। ইমাম শাফেয়ী, ইবনে আবু শায়বা এবং আব্দুর রাজ্জাকসহ অন্যান্য ইমাম বর্ণনা করেছেন, উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামা (রা) অন্যান্য নারীদের সাথে একই কাতারে দাঁড়িয়ে নামাযের ইমামতি করতেন।
এছাড়া ইব্রাহীম নাখয়ী (রহ) থেকে মুহাম্মদ ইবনে হোসাইন বর্ণনা করেছেন, রমযান মাসে আয়েশা (রা) প্রায়ই নারীদের সাথে এক কাতারে দাঁড়িয়ে নামাযের ইমামতি করতেন।[1] হাকীম তাঁর ‘মুস্তাদরাক’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা) প্রায়ই আযান ও ইকামাত দিতেন, তারপর নারীদের নামাযের ইমামতি করতেন।[2]
উক্ত বর্ণনাগুলো বিশুদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও এবং উম্মুল মুমিনীনরা চর্চা করার দৃষ্টান্ত থাকার পরও অনেক বড় বড় আলেম নারীদের জামায়াতে নারীকে ইমামতির অনুমতি দিতে দ্বিধান্বিত ছিলেন দেখে আমি অবাক হই! উদাহরণ হিসেবে ইবনে কুদামাহর একটি উদ্ধৃতি দেওয়া যায়। তিনি লিখেছেন:
“নারীদের জামায়াতে কোনো নারী ইমামতি করতে পারবে কি না, সে ব্যাপারে দুটি ভিন্ন মত রয়েছে। একটি বর্ণনা মতে, নারীদের ইমামতি জায়েজ। আয়েশা (রা), উম্মে সালামা (রা), আতা, সাওরী, আওযায়ী, শাফেয়ী, ইসহাক, আবু সাওর প্রমুখের মতে, নারীদের নামাযে একজন নারী ইমামতি করতে পারবে। অপর বর্ণনা মোতাবেক, আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ) এটি অনুমোদন করেননি। হানাফী মাযহাবও একে অনাকাঙ্ক্ষিত মনে করে; তবে যদি এ ধরনের জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়েই যায়, তাহলে সেটি বৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এছাড়া আল-শাবী, নাখয়ী এবং কাতাদাহ মনে করতেন, নারীদের এভাবে জামায়াতে ইমামতি করা শুধু নফল নামাযের ক্ষেত্রে অনুমোদিত হলেও ফরযের ক্ষেত্রে নয়।”[3]
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, এই আলেমগণ উপরে উল্লেখিত বিশুদ্ধ বর্ণনাগুলো থেকে মনোযোগ সরিয়ে বিশুদ্ধতার মাত্রায় সর্বনিম্ন স্তরের কিছু বিচ্ছিন্ন মতামত বা বর্ণনার উপর নির্ভর করেছেন। যেমন— বর্ণিত আছে যে জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা) বলেছেন: “রাসূল (সা) আমাদের উদ্দেশ্যে এক বক্তৃতায় বললেন, ‘পুরুষের নামাযের ইমামতি কোনো নারী করতে পারে না।’ অন্য একটি ভাষ্যে বলা হয়েছে: ‘নারীর ইমামতিতে কোনো পুরুষ নামায পড়তে পারে না, বেদুইনের নেতৃত্বে কোনো মুহাজির পরিচালিত হতে পারে না, শাসকের চাবুক ও তলোয়ারের ভয়ে বাধ্য হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি না হলে কোনো মুমিন ব্যক্তি অসৎ ব্যক্তির দ্বারা পরিচালিত হতে পারে না।’”[4]
অন্য একটি দুর্বল হাদীস, যা আলীর (রা) নিকট হতে বনী হাশেমের আযাদকৃত এক দাস, তার নিকট থেকে আবু জিয়াব, তার নিকট থেকে ওয়াকির উদ্ধৃতিতে আবু বকর, তার নিকট থেকে ইবনে আবু শায়বা তাঁর মুসান্নাফে বর্ণনা করেন: “নারীদের নামাযের ইমামতি করা উচিত নয়।”[5]
যাহোক, আলেমদের নিকট ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে জনপ্রিয় হওয়া সত্ত্বেও এই বর্ণনা তিনটি ‘দুর্বল’ এবং তাদের শব্দচয়নের মধ্যে সুস্পষ্ট মিথ্যা রয়েছে।
উল্লেখ্য, “তাদেরকে পিছনে সরিয়ে দাও, কারণ সেটাই তাদের জন্য আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত স্থান” এই জনপ্রিয় উক্তিটি হাদীস নয়। তাই আমাদের আলোচ্য বিষয়ের ক্ষেত্রে এটি কোনো যুক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে না। এটি আসলে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের (রা) একটি উক্তি, যা ‘আল-মুয়াত্তা’ শীর্ষক হাদীসের গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে।[6]
আব্দুর রাজ্জাক সংকলিত মুসান্নাফের বিবরণ অনুসারে ইবনে মাসউদ (রা) বলেছেন:
“বনী ইসরাইলের নারী-পুরুষরা একত্রে ইবাদত করতো। কোনো কোনো নারী নিজেকে লম্বা দেখানোর জন্য কাঠের উচু জুতা পরতো, যাতে তার প্রেমিক তাকে শনাক্ত করতে পারে। কিন্তু এর ফলে মাসিকের সময় তাদের কষ্ট হতো। তাই তাদের ব্যাপারে বলা হলো, নারীদের পিছনে সরাও, কারণ সেটাই তাদের জন্য আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত স্থান।[7]
লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হলো, এই বর্ণনাটি যদি সত্য হয়, তাহলে ‘নারীদেরকে পিছনে সরিয়ে দাও’ আদেশটি ইবনে মাসউদ বনী ইসরাইলের কোনো ট্র্যাডিশন থেকে যে নকল করেছেন, তা স্পষ্ট। মাসিকের কারণে নারীদেরকে ‘শাস্তি’ প্রদানের কোনো ব্যাপার ইসলামে নেই, যেমনটা বাইবেলের কিছু বর্ণনায় পাওয়া যায়। কিছু নারীর পাপের কারণে সমগ্র নারীজাতিকে পেছনে সরে যেতে বাধ্য করার ব্যাপারও ইসলামে নেই। ইসলামে বলা হয়েছে, “একজনের কৃতকর্মের দায় অন্য কেউ গ্রহণ করবে না।” (সূরা আনআম ৬:১৬৪)
প্রকৃতপক্ষে, একটি সহীহ হাদীস অনুযায়ী একজন নারী সাহাবী রাসূলের (সা) সময়কালে পুরুষ ও নারীদের জামায়াতের ইমামতি করেছিলেন। নিচে হাদীসটির একটি বিশ্লেষণ ও তাৎপর্য দেওয়া হলো।
উম্মে ওয়ারাকা আল-আনসারিয়্যাহর নিকট থেকে আব্দুর রহমান ইবনে খাল্লাদ আল-আনসারী, তার নিকট থেকে তার দাদী, তার নিকট থেকে ওয়ালিদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে জুমায়ী, তার নিকট থেকে ওয়াকী ইবনুল জাররাহ, তার নিকট থেকে উসমান ইবনে আবু শায়বা বর্ণনা করেন,
“নবীজী (সা) বদরের যুদ্ধে যাত্রার প্রাক্কালে আমি তাঁকে বললাম, ‘হে আল্লাহর নবী, আপনার সাথে আমাকে যুদ্ধে যেতে দিন, আমি রোগীদের সেবা করবো, আল্লাহ হয়তো আমাকে শহীদ হিসেবে কবুল করবেন।’ তিনি বললেন: ‘তুমি বাড়িতেই থাকো, সর্বশক্তিমান আল্লাহ তোমাকে শাহাদাতের মর্যাদা দান করবেন।’ বর্ণনাকারী বলেন: এ কারণে ওই নারীকে শহীদ বলে ডাকা হতো। ওই নারী পুরো কুরআন মুখস্থ করেছিলেন এবং নবীর নিকট তাঁর বাড়ির মসজিদে একজন মুয়াজ্জিন রাখার অনুমতি চান। নবী (সা) তাঁর অনুরোধ কবুল করেছিলেন। আব্দুর রহমান ইবনে খাল্লাদ (এই হাদীসের বর্ণনাকারী) বলেন, ‘আমি তাঁর মুয়াজ্জিনকে দেখেছি, তিনি ছিলেন অত্যন্ত বৃদ্ধ।’”
কোনো প্রকার আপত্তি ছাড়াই আবু দাউদ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং আলবানীর মতে এর মান ‘হাসান’।[8]
যদিও উম্মে ওয়ারাকা মর্যাদাবান সাহাবী ছিলেন, তা সত্ত্বেও হাদীসটির বিশুদ্ধতা নিয়ে হাদীসবেত্তাগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। উম্মে ওয়ারাকা (রা) ছিলেন সেইসব সাহাবীদের একজন, যিনি কোরআন লিপিবদ্ধ হওয়ার আগে তেলাওয়াতের মাধ্যমে তা প্রচার করতেন। সম্পূর্ণ কোরআন মুখস্থ থাকায় তাঁর দ্বারা এটি সম্ভব হয়েছিলো।[9]
হাদীসটি সম্পর্কে মতভেদের উদাহরণ হিসেবে আরনাউতের একটি উদ্ধৃতি দেওয়া যায়। তিনি বলেছেন, “এই হাদীসটির ইসনাদ (বর্ণনাকারীদের ধারাবাহিকতা) দুর্বল। এর কারণ হলো, আব্দুর রহমান ইবনে খাল্লাদ এবং ওয়ালিদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে জুমায়ীর দাদী লায়লা বিনতে মালিক অপরিচিত ব্যক্তি।”
যাই হোক, শায়েখ আরনাউতের মেধার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, এই বর্ণনাকারীগণ অপরিচিত নন। প্রকৃতপক্ষে হাদীসটি ওয়ালিদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে জুমায়ী পর্যন্ত একাধিক ইসনাদে বর্ণিত হয়েছে। যেমন: ইবনে সাদের তাবাকাত (হাদীসটির দীর্ঘ ও সংক্ষিপ্ত উভয় ভাষ্য), ৮/৪৫৭; ইবনে আবী শাইবা, ১২/৫২৭-৫২৮; আহমদ, ২৭২৮২; ইবনে আবু আসিমের ‘আল-আহাদ ওয়াল মাসানী’, ৩৩৬৬ ও ৩৩৬৭; তাবারানী, ২৫/৩২৬-৩২৭; হাকীম, ১২০৩; বায়হাকী, ১/৪০৬ ও ৩/১৩০; এবং দালাইল, ৬/৩৮১।
এছাড়া ইমাম বুখারী ও মুসলিমের মানদণ্ড বজায় রেখে প্রখ্যাত হাদীস সংকলক হাকীম তাঁর ‘মুস্তাদরাক’ গ্রন্থে একই হাদীস বর্ণনা করেছেন এই কথাটুকুসহ: “এবং নবী (সা) তাকে তার ঘরের লোকদের ফরয নামাযে ইমামতি করতে বলেছিলেন।”
আবু দাউদ বলেছেন, “এ প্রসঙ্গে এই হাদীসটি ব্যতীত আর কোনো হাদীসের বর্ণনাকারীদের পূর্ণাঙ্গ ইসনাদ রয়েছে বলে আমার জানা নেই। আর ওয়ালিদ ইবনে জুমায়ীকে নির্ভরযোগ্য হিসেবে ইমাম মুসলিম উল্লেখ করেছেন।”[10]
এছাড়া, ইবনে খুজাইমা তাঁর সহীহ গ্রন্থে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং আলবানী হাদীসটিকে ‘হাসান’ হিসেবে গণ্য করেছেন।[11]
ইবনে হিব্বানও তাঁর ‘আছ-ছিকাহ’ (নির্ভরযোগ্য) গ্রন্থে আব্দুর রহমান ইবনে খাল্লাদ এবং ওয়ালিদ ইবনে জুমায়ীকে বিশ্বাসযোগ্য হিসাবে তালিকাভুক্ত করেছেন।[12]
এই বর্ণনাটি সম্পর্কে আস-সানানী তাঁর ‘সুবুলুস সালাম’ গ্রন্থে বলেছেন:
“পারিবারিক পরিমণ্ডলে নামাযে নারীদের ইমামতি করার বৈধতার প্রমাণ হলো এই হাদীসটি। এমনকি সেই জামায়াতে পুরুষ লোক থাকলেও তা বৈধ হবে। কারণ, হাদীসের ভাষ্য মোতাবেক উম্মে ওয়ারাকার একজন বয়স্ক পুরুষ মুয়াজ্জিন ছিলো, যিনি নামাযের জন্য আযান দিতেন। বাহ্যত মনে হচ্ছে, তিনি উক্ত মুয়াজ্জিন এবং তার দাস-দাসীদের নামাযের জামায়াতে ইমামতি করতেন। আবু ছাওর, আল-মুযানী, তাবারী প্রমুখ এই মত পোষণ করেন। তবে অধিকাংশ আলেম এই মতটি সমর্থন করেন না।”[13]
ইবনে তাইমিয়াও পুরুষদের নামাযে নারীদের ইমামতিকে সমর্থন করেছেন এবং ইবনে হাযমের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। ইবনে হাযম বলেছিলেন, জামায়াতে পুরুষদের অংশগ্রহণ থাকলে নারীরা ইমামতি করতে পারবে না মর্মে সকল আলেম সর্বসম্মতভাবে ঐক্যমত্য পোষণ করেছেন। ইবনে তাইমিয়া লিখেছেন:
“ইমাম আহমদের একটি মশহুর মত অনুযায়ী রমযানের তারাবীর নামাযে অশিক্ষিত পুরুষদের জামায়াতে একজন জ্ঞানী নারীর ইমামতি করা বৈধ। একইভাবে অন্য সকল জামায়াতের নামাযের ক্ষেত্রেও ইমাম আহমদ দুটি ভিন্ন মতামত প্রদান করেছেন।”[14]
তিনি আরো লিখেছেন,
“ইমাম আহমদের প্রসিদ্ধ মতামত হলো, প্রয়োজন সাপেক্ষে পুরুষদের নামাযে নারীর ইমামতি করা বৈধ। যেমন— পুরুষদের কেউ যদি কোরআন তেলাওয়াত করতে না পারে, তখন তেলাওয়াত করতে পারে এমন নারী তারাবীর নামাযের ইমাম হতে পারবে। যেহেতু রাসূল (সা) উম্মে ওয়ারাকাকে তাঁর পরিবারে নামাযের ইমামতি করার অনুমতি দিয়েছিলেন এবং তাঁর নামাযের জন্য একজন মুয়াজ্জিন নিয়োগ করেছিলেন।”[15]
ইবনে কুদামাহ তাঁর ‘আল-মুগনী’ গ্রন্থে বলেছেন,
“আমাদের কয়েকজন সাথী দাবি করেন, পুরুষদের নামাযে একজন নারী ইমামতি করতে পারবে এবং পুরুষের পেছনে দাঁড়িয়ে নামায পড়াবে। উম্মে ওয়ারাকা বিনতে আব্দুল্লাহ ইবনে হারিসের বর্ণনার উপর ভিত্তি করে তারা এই যুক্তি দেন। আল্লাহর রাসূল তার জন্য একজন মুয়াজ্জিন নিয়োগ করেছিলেন এবং তাকে তার পরিবারবর্গের নামাযে ইমামতি করতে বলেছিলেন, যেখানে নারী-পুরুষ উভয়ই ছিলো। এর বিপরীতে আমাদের মতামত মহানবীর (সা) হাদীস দ্বারা সমর্থিত: ‘পুরুষের নামাযের ইমামতি কোনো নারী করতে পারে না।’ এছাড়া, পুরুষদের নামাযে আহ্বানের উদ্দেশ্যে কোনো নারী আযান দিতে পারে না এবং একইভাবে সে পুরুষদের নামাযে ইমামতিও করতে পারে না।”[16]
ইবনে কুদামাহ দলীল হিসাবে যে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন, তার দুর্বলতা উপরে দেখানো হয়েছে। যাই হোক, কেবল পারিবারিক পরিমণ্ডলে পুরুষদের নামাযে নারীর ইমামতি করার বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে। তবে জামে মসজিদে নারীদের ইমামতি করার পক্ষে কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না।
উপর্যুক্ত বিষয়গুলো মাথায় রেখে এবং মুসলিম সমাজে গড়ে ওঠা বিদ্যমান সংস্কৃতি বিবেচনা করে পারিবারিক পর্যায়ে পুরুষদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত জামায়াতে নারীর ইমামতি করার অনুমোদন না থাকার পক্ষে আমার অবস্থান। তবে পারিবারিক পর্যায়ে পুরুষদের কেউ যদি শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত করতে না পারে, তাহলে শুদ্ধভাবে তেলাওয়াতকারী নারীর পক্ষেই ইমামতি করা অধিক উপযুক্ত।
যেসব আলেম নারীদেরকে জামায়াতে ইমামতির অনুমতি দিয়েছেন, তারা নারী ইমাম পুরুষদের সামনে দাঁড়াবে নাকি পেছনে দাঁড়াবে সেটা নিয়ে মতপার্থক্য করেছেন। এই বিষয়ে রাসূলের (সা) হাদীস থেকে কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা পাওয়া যায় না। উম্মে ওয়ারাকার বর্ণনা থেকেও আমরা বিস্তারিত কিছু জানতে পারি না। ইমাম আহমদের মতামতটিই এ বিষয়ে সবচেয়ে জনপ্রিয়, ইবনে তাইমিয়া যেটি তার ফতোয়ায় উদ্ধৃত করেছেন। সেটি হলো— সে পুরুষের পেছনে দাঁড়াবে, যেহেতু এটাই তার জন্য অধিক সম্মানজনক (আসতার লাহা)।[17] [এ বিষয়টি আমাদের কাছে অগ্রহণযোগ্য বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এর দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ভাষ্যকারদের। — সম্পাদক]।
আযান প্রসঙ্গে আতার সূত্রে হাকীম বর্ণনা করেছেন, উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা) আযান ও ইকামাত দিতেন এবং নারীদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে তাদের নামাযের ইমামতি করতেন।[18]
এতদসত্ত্বেও আলেমদের কেউ কেউ আসমা বিনতে আবু বকরের (রা) সূত্রে বর্ণিত একটি হাদীসের ভিত্তিতে নারীদের আযান ও ইকামাত প্রদানকে নিষিদ্ধ করেছেন; যেখানে রাসূল (সা) বলেছেন, “আযান দেওয়া এবং নামাযের শুরুতে ইকামাত দেওয়া, জুমার নামাযে অংশগ্রহণ করা, কিংবা জুমার দিন গোসল করা নারীদের জন্য আবশ্যক নয়। কোনো নারী ইমামতি করার সময় সামনে দাঁড়ানো উচিত নয়, বরং নারীদের মাঝখানে দাঁড়ানো উচিত।” তবে ইবনে মঈন বলেছেন, এই হাদীসের বর্ণনাকারী হাকাম ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে সাদ না গ্রহণযোগ্য, না বিশ্বস্ত। এমনকি, ইমাম বুখারী তাকে ‘মাতরুক’ (পরিত্যক্ত) হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ইমাম নাসায়ী বলেছেন, তার বর্ণনাগুলো প্রত্যাখ্যাত। ইবনুল মোবারক তাকে ‘দুর্বল’ বলে মনে করতেন। ইবনুল জাওযী এই অভিমতগুলোর সারসংক্ষেপ বর্ণনাপূর্বক হাদীসটি প্রত্যাখ্যান করেছেন।[19]
[মূল: জাসের আওদা, অনুবাদ: জোবায়ের আল মাহমুদ]
অন্যান্য পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রেফারেন্স:
[1] মোহাম্মদ শামসুল হক আজিমাবাদী, আওনুল মাবুদ, বৈরুত: দারুল ফিকর, ১৯৯৫/২২৬।
[2] হাকীম, মুসতাদরাক আলাস সহীহাইন, ১/৩২০।
[3] আল-মুগনী, ৩/৩৭।
[4] ইবনে মাজাহ, সুনান, ২/১৮৩ এবং ১/৩৪৩।
[5] মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, ১/৪৩০।
[6] আল-মুয়াত্তা (মোহাম্মদ ইবনে হাসানের বর্ণনা), ২/৫৮। তাবারানী এবং আব্দুর রাজ্জাকও এটি বর্ণনা করেছেন।
[7] মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, ৩/১৪৯।
[8] সুনানে আবু দাউদ, ১/৪৪২ ৫৯১।
[9] ইবনে সাদ, কিতাবুল তাবাকাতুল কবীর, ৮/৩৩৫।
[10] নসবুর রায়াহ, ২/৩২।
[11] ইবনে খুজাইমা, ২/৮১০।
[12] বদরে মুনীর, ৪/৩৯২।
[13] সুবুলুস সালাম, ২/৩৫।
[14] নাকদু মারাতিবিল ইজমা, ২৯০।
[15] আল-কাওয়ায়িদুন নূরানিয়্যাহ, ১/১২০।
[16] আল-মুগনী ফি ফিকহুল ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল আশ-শাইবানী, ২/৩৪।
[17] ইবনে তাইমিয়া, মাজমাউল ফাতাওয়া, মদীনা: মাজমাউল ফাহাদ, ১৯৯৫, ২২/২৪৯।
[18] মুসতাদরাক আলাস সহীহাইন, ১/৩২০। এছাড়া এটি বায়হাকী, ১/৬০০; ইবনে আবু শায়বা, ১/২০২ এবং অন্যান্যদের দ্বারা বর্ণিত।
[19] নসবুর রায়াহ, ২/৩২।