বাংলাদেশে ইসলামচিন্তার নানা ধারা ও চিন্তকগণ (পর্ব-২)
৬।
বাংলাদেশে ইসলামের রাজনৈতিক ধারাও শক্তিমান। অনেকেই এটাকে ইসলামের বিশেষ রূপ হিশেবে চিহ্নিত করে ‘পলিটিক্যাল ইসলাম’ নাম দেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসলামের এই বিশেষ ধরন নিয়ে উদ্বিগ্ন। স্নায়ুযুদ্ধের পরিসমাপ্তির পর দুনিয়ায় নিজেকে ‘হিরো’ হিশেবে উপস্থাপনের তাড়নায় তার প্রয়োজন পড়লো ‘ভিলেন’ আবিস্কারের। এই ভিলেন আবিস্কারের প্রক্রিয়ায় দুয়ারে পাওয়া গেল রাজনৈতিক ইসলাম। যদিও প্রত্যেক ধর্মই এই অর্থে রাজনৈতিক যে, প্রতিষ্ঠিত সমাজব্যবস্থা ও মূল্যবোধকে এটি পরিবর্তন করে নতুন মূল্যবোধ ও সম্পর্ক নির্মাণ করতে চায়। বাংলাদেশে রাজনৈতিক ইসলামের তিনটি রূপ:
ক) যারা প্রচলিত রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে ক্ষমতায় আরোহণ করে ‘ইসলাম প্রতিষ্ঠা’ করতে চান। বাংলাদেশে এই রূপটি বেশ শক্তি নিয়েই হাজির আছে। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিশ, ইসলামী শাসনতান্ত্রিক আন্দোলন ইত্যাদি দল বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতির প্রতিভূ। যদিও প্রথম দলটি মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকার কারণে বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় বিপর্যস্ত। দলটির তাত্ত্বিক গুরু মাওলানা মওদূদীর ‘রাজনৈতিক ভাবনা ও বিশ্লেষণ’কে ধর্মীয় পরিসর থেকেই অনেকে পর্যালোচনা ও প্রশ্নবিদ্ধ করে এ কালে তার তাত্ত্বিক প্রভাবকে বহুলাংশে খর্ব করেছেন। তবুও মাওলানা মওদূদীর তাফসীরের প্রভাব আমাদের দেশের শিক্ষিত মহলের একটা উল্লেখযোগ্য অংশের মধ্যে বেশ প্রবল। জামায়াত প্রায় কখনোই তার তাত্ত্বিক গুরুর চিন্তার বাইরে যেতে পারেনি। তাদের লিটারেচারের প্রায় সবটুকুনই মাওলানা মওদূদীর লেখার চর্বিতচর্বণ। পাকিস্তান ও বাংলাদেশে মাওলানা মওদূদীর চিন্তার প্রভাব-বলয় ও জামায়াত থেকে বেরিয়ে এসে অনেকেই নতুন রাজনৈতিক-সাংগঠনিক ভাবনা হাজির করেছেন। বাংলাদেশে অন্যান্য ইসলামী দলগুলো তাদের ইসলাম-ভাবনাকে ভারতবর্ষে ইসলাম বোঝা ও চর্চার ইতিহাসের বিস্তৃত পরিসরে জায়গা করে নিয়েছে; যেখানে আধ্যাত্মিকতা, প্রজ্ঞা আর জাগতিকতার মিশেল ঘটেছিল। শাহ ইসমাইল শহীদ, শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলবী, দেওবন্দের প্রখ্যাত আলেমবৃন্দ, সোলায়মান নদভী, হাসান আলী নদভী, মুফতি মোহাম্মদ শফি, তকি উসমানী প্রমুখের ইসলাম-ব্যাখ্যা ও আধ্যাত্মিক দিকনির্দেশনা এদের রাজনৈতিক ভাবনায় রসদ যোগায়।
বাংলাদেশের সেকুলার ও প্রগতিশীলরা ইসলামী রাজনীতিকে প্রায়শই ‘সাম্প্রদায়িক’, ‘মৌলবাদী’ ও ‘প্রতিক্রিয়াশীল’ বলে সম্ভাষিত করেন। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিয়ে তাদের আপত্তি থাকলেও ভাষাগত ও ভৌগোলিক পরিচয়ভিত্তিক রাজনীতি নিয়ে তারা আপত্তি করেন না। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেক্যুলারিজম, ইউরোপীয় এনলাইটমেন্ট, রেনেসাঁ, আইডিওলজি, পাওয়ার রিলেশান্স, আইডেন্টিটি পলিটিক্স, মার্কসিজম ও ধর্মের সম্পর্ক নিয়ে একটা পর্যালোচনার আবহ শুরু হওয়ায় এই ‘লেবেল’গুলো আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে খুব একটা কল্কে পাচ্ছে না।
খ) যারা ভোটের মাধ্যমে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে গণবিপ্লব করে গণরায় নিয়ে ক্ষমতায় যেতে চায়। বাংলাদেশে বর্তমানে নিষিদ্ধ ঘোষিত হিজবুত তাহরীর এ মতাবলম্বী। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি জানা ও বেশ বিত্তবান তরুণদের নিয়ে এ দলটির কার্যক্রম বাংলাদেশে শুরু হয়েছিলো। প্যালেস্টাইনের বিখ্যাত জুরিস্ট তকিউদ্দীন নাবহানী এ দলের তাত্ত্বিক গুরু।
গ) যারা জঙ্গি তৎপরতার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করে ‘ইসলাম প্রতিষ্ঠা’ করতে চায়। আমাদের দেশে ইসলামের নামে জঙ্গি তৎপরতা মূলত বিস্তৃত পরিসরে ইসলামকে বোঝার অক্ষমতা থেকে ও সাধারণভাবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মুসলিম নির্যাতন, বঞ্চনা ও মার্কিনি আগ্রাসন থেকে উদ্ভুত। আবেগী মুমিন বিপথগামী হয় তাদের ভ্রান্ত বুঝ ও প্রচলিত ব্যবস্থায় অসন্তুষ্টির কারণে। ‘জিহাদ’ ও ‘কিতাল’ সম্পর্কে নিতান্ত ভুল ধারণা থেকেও উদ্ভূত হয় সহিংস তৎপরতা। ‘জিহাদ’কে প্রায়শই ‘ধর্মযুদ্ধ’ বা ‘পবিত্র যুদ্ধ’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। মনে রাখতে হবে, ইসলামী ধর্মতত্ত্বে জিহাদের আভিধানিক ও পারিভাষিক দুরকম অর্থ আছে। বস্তুত, পারিভাষিকভাবে, জিহাদ না পবিত্র যুদ্ধ, না ধর্মযুদ্ধ। ইসলামের পরিভাষায় জিহাদ অর্থ ‘রাষ্ট্রীয় যুদ্ধ’। মুসলিম রাষ্ট্রের শত্রুদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় যুদ্ধকে ইসলামে জিহাদ বলা হয়েছে। রাষ্ট্র ব্যতিরেকে, রাষ্ট্রপ্রধানের তত্ত্বাবধান ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর অধিকার নাই সশস্ত্র জিহাদের (এ বিষয়ে ড. আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীরের অত্যন্ত অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন ও সুবিস্তৃত গবেষণাগ্রন্থ ‘ইসলামের নামে জঙ্গীবাদ’ বইটি আগ্রহীরা পড়ে দেখতে পারেন)। ইসলামের ইতিহাসের সুবিশাল প্রেক্ষিত বিশ্লেষণ করে প্রাজ্ঞ আলেমগণ এমন সিদ্ধান্তেই পৌঁছেছেন। ইসলামের নামে এক ব্যক্তির আরেক ব্যক্তিকে হত্যার অধিকার কোনোক্রমেই স্বীকৃত নয়। যেসব আলেমের আরবী ভাষা, কোরআন, হাদীস, তাফসীর, ফিকাহর বিশাল ভাণ্ডার, সাহাবীদের কর্মপন্থা, প্রাচীন ইমামদের মতামত, শরিয়ত চর্চা ও প্রয়োগের দীর্ঘ ইতিহাস জানা থাকার পাশাপাশি আধুনিক জ্ঞানের নানা বিষয় সম্পর্কে অবগতি আছে তারা ‘ইসলাম প্রতিষ্ঠা’র জন্য জঙ্গি তৎপরতাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। যদিও ‘ভায়লেন্স’ এর আবশ্যকতার অন্য প্রেক্ষিত আছে, যেটি এ আলোচনার উপজীব্য নয়। অধিকার রক্ষা ও নির্যাতকের বিরুদ্ধে সাধ্য অনুসারে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের ইসলামী দিকনির্দেশনা ও মুক্তিসংগ্রাম সম্পর্কিত আলোচনাও ‘ইসলাম প্রতিষ্ঠায়’ সহিংসপন্থা অবলম্বনকারীদের সম্পর্কে প্রযোজ্য নয়।
৭।
রাজনৈতিক ইসলামের বিপরীতে আছে ইসলামের সুফিবাদী ধারা। বাংলার সেক্যুলার ও প্রগতিশীল মহলে এ ধারার ইসলামকে পছন্দ ও প্রশংসা করতে শোনা যায়। এটিকে তারা ইসলামের একটি অনন্য জ্ঞানতাত্ত্বিক ও দার্শনিক ধারা বলেও মনে করেন। এই চাওয়াটিও রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ ও নির্দোষ নয়। ইসলামের এই রূপটির বিকাশ তারা চান, বিশেষ করে এ অঞ্চলে কৃষির বিকাশে সুফি-দরবেশ-পীর-আওলিয়াদের অবদান, ব্যাপক জনসম্পৃক্ততা ও জনমানুষের রোগ নিরাময়ের বিশেষ কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি প্রবর্তনের কারণে। একটি মজার ব্যাপার উল্লেখযোগ্য, পীর আউলিয়াদের ঝাড়ফুঁক-তাবিজ-তাগা প্রভৃতিকে আমাদের সমাজের বিজ্ঞানমনস্ক অংশ অবৈজ্ঞানিক ও কুসংস্কার মনে করেন। অপরদিকে, প্রগতিশীলদের আরেকটি অংশ ‘লোকায়ত ইসলাম’ এর নমুনা হিসেবে এগুলোকে গ্লোরিফাই করেন এবং ইসলাম চর্চার বৈচিত্র্য হিসেবে এগুলোকে ভাবতে পছন্দ করেন। যা হোক, বাংলার পীরালি ঘরানা এই ধারাকে কিছুটা ধরে রেখেছে। পাশাপাশি এ ধারাকে ঘিরে ভণ্ডামি ও প্রতারণাও আছে। তাবলীগ জামাতও সুফি ইসলামের আবহে গঠিত। মাওলানা ইলিয়াস প্রবর্তিত সংস্কারপন্থী এই জামাতের লক্ষ্য মুসলিমদের ‘ঈমান ও আমল’ অর্থাৎ মৌলিক বিশ্বাস ও চর্চার ধারাবাহিকতা ও পরিশুদ্ধি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালের অধ্যাপক ড. মো. ইয়াহিয়া আখতার তাবলীগ জামাতের ধর্মীয় ও সামাজিক ভূমিকা নিয়ে একটি গবেষণামূলক বই লিখেছেন। ইসলাম প্রচারে তাবলীগ জামাতের বিশেষ ভোকাবুলারি ও মেথডোলজি আছে। বিশ্বময় এ জামাতের কার্যক্রম বিস্তৃত। বাংলাদেশের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে তাবলীগ জামাতের সুবিশাল ইজতেমা বা দ্বীনি জমায়েত অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বিশেষ সরকারি সহায়তা ও ব্যবস্থাপনা থাকে।
সুফিবাদী ধারাও একস্বরিক (single voice) নয়, তারও আছে নানা বৈচিত্রময় অভিব্যক্তি। সুফিবাদের নানা তরিকা, যেমন কাদেরিয়া, নকশবন্দিয়া, চিশতিয়া ইত্যাদি, বাংলাদেশে লক্ষ করা যায়। বাংলা অঞ্চলে ইসলামের প্রসারের পেছনে এই পীর-আউলিয়া বা সুফিদের ভূমিকা ছিল বলে রিচার্ড ইটন দেখিয়েছেন। হযরত আলী (রা), হাসান বসরী, রাবেয়া বসরী, মনসুর হাল্লাজ, জালালুদ্দীন রুমি, বায়েজিদ বোস্তামী, ফরিদুদ্দীন আত্তার প্রমুখ ক্লাসিক সুফিবাদী ধারার অন্তর্ভুক্ত। ভারতবর্ষে সাইয়েদ আহমেদ বেরেলভী, ইসমাইল শহীদ, মইনুদ্দিন চিশতি, মুজাদ্দিদে আলফে সানি, খাজা ফরীদুদ্দীন গঞ্জেশকর প্রমুখ এ ধারার অগ্রণী ব্যক্তিত্ব। পীর ও সুফিদের জীবনচরিতে দরিদ্র ও বুভুক্ষু মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে ‘হাক্কুল ইবাদ’ (মানবসেবা)-এর দায়িত্ব পালনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রয়েছে। আমরা হাসান আলী নদভীর ‘সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস’ গ্রন্থে ভারতবর্ষের অজস্র খানকায় নিরন্ন মানুষকে নিয়মিত ভোজন করানোর অনন্য ইতিহাস দেখতে পাই। তিনি দেখাচ্ছেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বলয়ের ধারে কাছেও তারা ঘেঁষতেন না। বরং তাদের আধ্যাত্মিক ক্ষমতার প্রভাবে রাজা-বাদশাহরাই তাদের দরবারে হাজিরা দিতেন।
সুফিরা শুধু ‘পরম সত্যে’র অনুসন্ধানী নন, সাধনার মধ্য দিয়ে পরম সত্যে বিরাজ করাই তাদের লক্ষ্য। জ্ঞাতা ও জ্ঞেয়র ভেদমোচন করে তারা স্রষ্টা ও বস্তুর আন্তর রূপ অবলোকন করে সেখানে অবস্থান করতে চান। ধ্রুপদী সুফিবাদী ধারায় দৈহিক ও অন্তরবৃত্তিক কঠোর সাধনার মধ্য দিয়ে তারা ‘স্ব-ভাব’এর ঐশ্বরিকতা অর্জন করতে চান, লীন হতে চান সত্যের স্বরূপে। হৃদয়ের প্রতিটি তন্ত্রীতে তারা কোনো মধ্যস্থতা ছাড়াই পেতে চান খোদায়ী নির্দেশনা। সত্য অর্জনের চেয়ে নিজেরাই ‘সত্য’ হয়ে উঠতে চান।
৮।
এখন যে ধারাটি নিয়ে আলোচনা করবো তা সবচেয়ে বৈচিত্র্যময়। এই ধারার অনুসারীদের সংখ্যাধিক্য, ইসলামী চিন্তায় এই ধারার প্রতাপকে নির্দেশ করে না। এ ধারাটি আমাদের সমাজে ইসলামের কোনো Idea generator ও propagator না হওয়ায় তারা receiving end এ অবস্থান করে। যদিও বিশেষ সময় ও পরিস্থিতিতে তাদের সক্রিয় হয়ে উঠার সম্ভাবনা সর্বদাই থাকে। এ ধারার একটা অংশ বিশ্বাসে মুসলিম, যদিও আচারনিষ্ঠ নন। ইসলামের বুদ্ধিবৃত্তিক ব্যাখ্যা পেলে নিজ ধর্মের ব্যাপারে আস্থাবান হয়ে উঠেন, আর ‘অবমাননা’ দেখলে ভেতরে ভেতরে আহত হন। ইসলাম নিয়ে আলোচনা ও তৎপরতায় তাদের কোনো বিশেষ আগ্রহ নাই। সহজ-স্বাভাবিকতায় যতটুকু পারেন ইসলাম চর্চা করেন। এ ধারার বেশিরভাগই প্রাত্যহিক জীবনে কোনটা ইসলামসিদ্ধ আর কোনটা নয় এমন কঠোর (watertight) শ্রেণীবিভাগ করেন না। অনেকে থার্টি ফার্স্ট নাইটের প্রোগ্রামেও যান, আবার যান তারাবীর নামাজও পড়েন। রোজার দিনে ইসলামী প্রোগ্রামও দেখেন, আবার প্রাত্যহিক জীবনের একটু অবসরে বিনোদনের সব মাধ্যমই গ্রহণ করেন। ইসলাম-অনৈসলাম এমন ভাগে জীবনের বৃহৎ পরিসরকে তারা ভাগ করেন না। ধর্মে আস্থা ও বিশ্বাসটুকু অক্ষুণ্ন রেখেই জীবনের স্বচ্ছন্দ গতিতে তারা আবাহন করেন। ধর্মের কেতাবী রূপ নিয়ে তাদের আগ্রহ নাই। মসজিদের খুৎবা অথবা ‘বেহেশতি জেওর’ ‘মকছুদুল মমেনিন’ ‘আমলে নাজাত’ ইত্যাদি বইয়ের মাধ্যমে তারা ইসলাম বোঝেন বা শেখেন। চর্চার বিশুদ্ধতা নিয়ে তারা ভাবিত নন। তারা নিজ ধর্মের শ্রেষ্ঠত্বে আস্থাশীল। অন্য ধর্মাবলম্বীদের পরিসরেও তাদের সহজ বিচরণ রয়েছে।
৯।
বাংলাদেশে ইসলামের এই নানামাত্রিক ধারা এক বাস্তবতা। আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠীর সব অংশই এ ধারাগুলোর কোনো না কোনো অংশে পরে। উপরের সবগুলো ধারা নিয়েই পর্যালোচনামূলক আলোচনা সম্ভব। পরবর্তী পর্বে কয়েকটি ধারা বিশ্লেষণ করার আশা রাখি। বিশ্বায়ন ও প্রযুক্তি নির্ভরতার এ যুগে উপরোক্ত প্রায় সব ধারাই কোনো না কোনো পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পরস্পরকে জানার সুযোগ পাচ্ছে বলে ইতিবাচকতা ও মানবপ্রকৃতির বৈচিত্র্যকে স্বীকার ও ধারণ করে নিজেরাই নিজেদেরকে পরিবর্তন করতে চাচ্ছে। পরস্পরকে জানাশোনার এই পরিসরকে আরও বিস্তৃত ও ঘনিষ্ঠ করা প্রয়োজন। ইসলামের সারসত্তাকে অক্ষুণ্ন রেখে বাংলাদেশে আমরা কোন অবয়বের ইসলামের বিকাশ চাই, সেই আলোচনাও প্রয়োজন। অন্যান্য পর্বগুলোতে তা করবার আশা রাখি। সেক্যুলার-প্রগতিশীল-বামপন্থীগণ ইসলাম ও মুসলিম প্রসংগকে যে পদ্ধতিতে আলোচনা করেন ও আলাপ হাজির করেন, তাও পর্যালোচনার দাবিদার। পুঁজিবাদী বিশ্বায়ন ও আধিপত্যশীল মিডিয়ার ‘মিসরিপ্রেজেন্টেশন’এর এ যুগে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ, নারীসমাজ ও জীবন-জীবিকায় ত্রস্ত গণমানুষ ইসলামকে কীভাবে তাদের জীবনে, চর্চায় ও মননে ধারণ করেন; সেটিও আলোচিত হবে কোনো একটি পর্বে। একবিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশে ইসলাম ভাবনা ও ইসলামপন্থা কোন পথে অগ্রসর হচ্ছে ও ‘আমাদের’ করণীয় কী – এই বিবেচনাকে সামনে রেখে, বাংলাদেশে স্বাধীনতার আগে-পরে বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে যারা ইসলাম নিয়ে মৌলিক লেখালেখি করেছেন, সেগুলোকেও বৈশ্বিক পরিসরে পাঠ করতে চাই।
(চলবে)