ইউসুফ আল-কারযাভী

র‍্যান্ড করপোরেশন আমাকে সংজ্ঞায়িত করতে পারেনি: কারযাভী

এডিটর’স নোট: আল জাজিরা অ্যারাবিকে ‘ধর্ম ও জীবন’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। ২০০৪ সালের ৫ ডিসেম্বর খাদীজা বিন কিন্নাহর সঞ্চালনায় এতে একটি সাক্ষাৎকার দেন শায়খ ইউসুফ আল কারযাভী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের র‍্যান্ড করপোরেশনের তৈরি ‘Civil Democratic Islam: Partners, Resources and Strategies’ প্রতিবেদনটি নিয়ে তিনি খোলামেলা কথাবার্তা বলেছেন। Biyokulule Online-এ প্রকাশিত সাক্ষাৎকারটির ইংরেজি অনুবাদ থেকে সিএসসিএস-এর পাঠকদের জন্য বাংলায় অনুবাদ করেছেন মো. হাবিবুর রহমান হাবীব।

*****

বিন কিন্নাহ: ৯/১১-র পর ইসলামপন্থী বিভিন্ন ধারা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গন সরব হয়ে ওঠেছে। এসব নিয়ে পাশ্চাত্যে প্রচুর গবেষণা হচ্ছে। এরমধ্যে সবচেয়ে সিরিয়াস গবেষণাগুলো সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারণী বিভাগগুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট করপোরেশনগুলো করে থাকে। যেমন র‍্যান্ড করপোরেশন। ওয়াশিংটনভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটি  প্রভাব-প্রতিপত্তি ও উচ্চ অবস্থানের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত।

র‍্যান্ড করপোরেশনের প্রতিবেদনটি ওয়াশিংটনের নীতি-নির্ধারকদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। তারা প্রতিবেদনটিকে পশ্চিমা সভ্যতার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়ানো ইসলামপন্থাকে সামাল দেয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হিসেবে বিবেচনা করছে। এই প্রতিবেদনে ইসলামের একটি সিভিল ও ডেমোক্র্যাটিক পরিচয় সংবলিত নতুন একটি ধারণা তুলে ধরা হয়েছে। এতে ইসলামপন্থী ধারাগুলোকে চারটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে: (১) সনাতনধর্মী, (২) চরমপন্থী, (৩) ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী এবং (৪) আধুনিকতাবাদী।

সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, প্রতিবেদনটিতে সিভিল ডেমোক্র্যাটিক ইসলাম প্রতিষ্ঠার কৌশল নির্ধারণ নিয়েও কথা বলা হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সম্ভাব্য সহযোগী নির্বাচনের বিষয়ে বলা হয়েছে– সহযোগীরা যেন আধুনিকতা ও গণতন্ত্রের পাশ্চাত্য মানে উত্তীর্ণ হয় এবং তাদের তৎপরতা যেন গণতান্ত্রিকভাবে স্থিতিশীল, সামাজিকভাবে উন্নত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা মাফিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক  হয়।

র‍্যান্ড করপোরেশনের এই প্রতিবেদন নিয়ে আপনি কিছু বলুন, প্লিজ।

কারযাভী: এটি তো ২০০৩ সালের মার্চে প্রকাশিত হয়েছে। অথচ মিডিয়াগুলো এতোদিন পর সরব হয়েছে।

বিন কিন্নাহ: প্রতিবেদনের শিরোনামে উল্লেখিত ‘সিভিল ডেমোক্র্যাটিক ইসলাম’ নিয়ে কিছু বলুন। ‘সিভিল’ শব্দের মানে যদি হয় রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে বিচ্ছিন্ন করা… আর ইসলাম শব্দটির আগে ব্যবহৃত ‘ডেমোক্র্যাটিক’ শব্দটি ইঙ্গিত করছে যেন ইসলামের আরেকটি অগণতান্ত্রিক ভার্শন রয়েছে…

কারযাভী: ইসলাম হচ্ছে একটি সামগ্রিক জীবন ব্যবস্থা। কিন্তু পশ্চিমারা ‘রাজনৈতিক ইসলাম’ ও ‘অরাজনৈতিক ইসলাম’– এ জাতীয় ভাগ করতে পছন্দ করে। ইসলাম শুরার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত এবং মানবাধিকার ও স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ইসলাম ভিন্ন মতাবলম্বীদের সাথে আলোচনার পথ খোলা রাখে, অন্যদের প্রতি সহনশীলতা দেখায় এবং নারীর ন্যায্য অধিকার, দরিদ্রের প্রতি দায়িত্ববোধ ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কথা বলে।

বিন কিন্নাহ: আপনার মতে, ইসলাম একটি সামগ্রিক পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। তাই একে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায় না। এর ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যাদানের সুযোগও নেই। কিন্তু র‍্যান্ডের প্রতিবেদনে ইসলামপন্থীদের বিভিন্ন ধারা দেখানো হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী এগুলো হলো– চরমপন্থী, সনাতনধর্মী, আধুনিকতাবাদী ও সেক্যুলার ধারা।

কারযাভী: নানা কারণেই এ ধরনের  শ্রেণীবিভাগে আমার আপত্তি রয়েছে। প্রথমত, প্রতিবেদনটিতে ইসলামপন্থীদেরকে আধুনিকতাবাদী ও সেক্যুলারপন্থী ধারায় ভাগ করা হয়েছে, যদিও আধুনিকতাবাদী ও সেক্যুলারপন্থীরা ইসলামপন্থার সম্পূর্ণ বিরোধী।

বিন কিন্নাহ: কিন্তু তারা তো মুসলিম, তাই না?

কারযাভী: নিশ্চয় তারা মুসলিম। কিন্ত একজন মুসলমান এবং একজন ইসলামপন্থীর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। আমরা সচরাচর জাতীয়তাবাদী, সেক্যুলারপন্থী, ইসলামপন্থী, কমিউনিস্ট কিংবা মার্কসবাদী ইত্যাদি শ্রেণীবিভাগ করে থাকি। কিন্তু এই প্রতিবেদনে যাদের কথা বলা হচ্ছে, তারা তো ইসলামের ধার ধারে না। তারা ইসলামকে চূড়ান্ত মানদণ্ড হিসেবে গ্রহণ করে না। তারপরও তাদেরকে ইসলামী ধারায় অন্তভুর্ক্ত করা হয়েছে। যারা ইসলামকে চূড়ান্ত মানদণ্ড মনে করে না, তাদের পক্ষে কীভাবে ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে একটি দেশ পরিচালনা করা সম্ভব? আমার আপত্তিটা এখানেই।

অন্যদিকে, যে ধারাটিকে আমি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করি প্রতিবেদনটিতে তা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। সেটা হল পুনর্জাগরণবাদী-সংস্কারপন্থী ধারা (আত তায়্যিরুল ইসলাহী আল তাজদীদী)। ইসলামের মধ্যপন্থা ও ইসলামের আলোয় আলোকিত এই ধারাটি  ইসলামী শরীয়াহর মূলনীতিকে সমুন্নত রেখেই যুগের পরিবর্তনের বাস্তবতাকে মেনে নেয়। এই ধারাটি ইসলাম ও ইসলামী ঐতিহ্যকে একভাবে দেখে; আর সমসাময়িক যুগ, যুগের গতিধারা ও সমস্যাগুলোকে আরেক দৃষ্টিতে বিবেচনা করে। এই ধারাটি সহীহ হাদীসের সাথে যৌক্তিকতার সমন্বয় সাধন করে চলে।

এই পুনর্জাগরণবাদী-সংস্কারপন্থী ধারাটি ইমাম মোহাম্মদ আব্দুহ, তাঁর ছাত্র শায়খ রশিদ রিদা এবং তাঁদের অনুসারীদের সময় থেকে পরিচিত। এদের মধ্যে  উল্লেখযোগ্য হলেন আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের শায়খ মাহমুদ শালতুত, মুসলিম ব্রাদারহুডের ড. মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বুরাজ ও শায়খ হাসান আল বান্না এবং শায়খ মোহাম্মদ আল গাযালী।

যে ধারাটির সবচেয়ে বেশি গণভিত্তি রয়েছে, সেই ধারাটিকে প্রতিবেদনে কীভাবে এড়িয়ে যাওয়া হলো? একটি স্বতন্ত্র ধারা হওয়া সত্ত্বেও তারা একে স্বতন্ত্র ধারা হিসেবে বিবেচনা করেনি। এটি সনাতনধর্মী কিংবা চরমপন্থী– কোনো ধারার মধ্যেই পড়ে না। এমনকি তারা আমাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবে, তা নিয়েও দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল। ফলে শেষপর্যন্ত আমাকে সনাতনধর্মী ধারায় অন্তর্ভুক্ত করেছে, যদিও আমি কখনোই সনাতনধর্মী ছিলাম না। শুরু থেকেই আমি সংস্কারের পক্ষে বলে এসেছি। আমি ফেরকাবাদিতা, চরমপন্থা ও কঠোরতার বিপক্ষে এবং উদারতার পক্ষে।

বিন কিন্নাহ: কিন্তু সনাতনধর্মী তথা ট্র্যাডিশনালিস্টদের মধ্যেও তো দুটি ভাগ রয়েছে– রক্ষণশীল সনাতনধর্মী এবং সংস্কারপন্থী সনাতনধর্মী।

কারযাভী: সংস্কারপন্থী এবং সনাতনপন্থী একসাথে চলতে পারে না। কেননা সনাতনপন্থীরা সংস্কারকে গ্রহণ করে না। পুনর্জাগরণবাদী-সংস্কারপন্থী ধারাটি একটি স্বাধীন ধারা। আরেকটি কথা হলো, আধুনিকতাবাদী ও সেক্যুলারপন্থীদেরকে যদি ইসলামপন্থী ধারায় অন্তর্ভুক্ত করতেই হয় (যদিও তা শুনতে অদ্ভূত লাগে), তাহলে চরমপন্থী, উগ্র ও বিপ্লববাদী ধারাগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এমনকি তাকফিরী ধারাকেও (যারা অন্যদেরকে প্রত্যাখ্যান করে, এমনকি তাদের সাথে দ্বিমত করলে মুসলমানদেরকেও খারিজ করে) অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সনাতনী ধারা, যেমন তালেবান, সেকেলে  চিন্তাভাবনাকেই আঁকড়ে ধরে থাকে। কিন্তু প্রতিবেদনটির লেখিকা বোন শেরল বেনার্ড এবং তার মুসলিম স্বামী, যিনি আফগান ইতিহাসের উপর একজন বিশেষজ্ঞ এবং কাবুলে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত, পুনর্জাগরণবাদী-সংস্কারপন্থী ধারাটিকে নিরপেক্ষ ও ন্যায্য দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে ব্যর্থ হয়েছেন।

বিন কিন্নাহ: আধুনিকতাবাদী ও সেক্যুলারপন্থীদেরকে ইসলামপন্থী ধারায় অন্তর্ভুক্ত করায় আপনি অবাক হয়েছেন। এই অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে প্রতিবেদনটি কি তাহলে আগামীতে ‘সিভিল ডেমোক্র্যাটিক ইসলাম’ নির্মাণে আধুনিকতাবাদী ও সেক্যুলারপন্থীদের উপর নির্ভর করতে চায়?

কারযাভী: তারা নিজেরাই তো এমনটি বলেছে। এটি তো আমাদের করা কোনো মন্তব্য বা অনুমান নয়। তারাই বলেছে, তারা আধুনিকতাবাদী এবং সেক্যুলারপন্থীদের উপর নির্ভর করতে চায়। তারা বলেছে, তারা তাদেরকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসাবে, তাদের পদমর্যাদা বৃদ্ধি করবে এবং মিডিয়া ও শিক্ষা ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান দৃঢ় করবে; যেন স্কুল কারিকুলামে তাদের চিন্তাধারা অন্তর্ভুক্ত করা যায় এবং এমন রাজনৈতিক কর্মসূচি তৈরি করা যায়, যার মাধ্যমে তারা সমাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে পারবে। তারা তাদের মাধ্যমে কিছু একটা হাসিল করতে চায়।

আমি মনে করি, এসব করে তারা ভুল করছে। আমেরিকার কানে যদি আমাদের কথা পৌঁছে থাকে, তাহলে তাদেরকে বলতে চাই– এই মানুষগুলোর মাধ্যমে তোমরা কিছুই অর্জন করতে পারবে না। কারণ, মুসলিম সমাজ তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছে। অতএব, যে সমাজে তারা প্রত্যাখ্যাত, সেই সমাজের নেতৃত্ব তারা কীভাবে দেবে? এটা অসম্ভব। এরা যে জনপ্রিয় নয়, এদের যে কোনো গণভিত্তি নেই, লোকেরা এদেরকে যে গ্রহণ করে না– এসব তো তারা স্বীকার করেছে। তারপরও এদেরকে দিয়ে তারা ফায়দা লুটতে চায়। এতে কি তারা সফল হবে? আমি মনে করি না। কারণ, এটা স্বভাববিরুদ্ধ ব্যাপার। যারাই রাষ্ট্রকে নেতৃত্ব দিতে চাইবে, তাদেরকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের প্রকৃতি এবং নৈতিক ভিত্তিকে যথাযথভাবে বিবেচনায় নিয়ে কাজ করতে হবে। আর আমাদের নৈতিক ভিত্তির সর্বাগ্রে রয়েছে ইসলাম।

আমেরিকানরা আসলে একটি নতুন ইসলাম তৈরি করতে চায়। সেটি হলো ‘আমেরিকান ইসলাম’। তারা সবকিছুতে একটি আমেরিকান ফ্লেভার দিতে চায়।

বিন কিন্নাহ: কিন্তু তারা তো বলছে, এই প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য হলো ৯/১১-র ঘটনার পর উদ্ভূত চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই করা। এটা তাদের ঘোষিত লক্ষ্য। ৯/১১-তে কী এমন ঘটলো, যার ফলে একটা নতুন ইসলাম খোঁজা দরকার হয়ে পড়লো?

কারযাভী: চরমপন্থা ৯/১১-র আগেও ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে। তাছাড়া চরমপন্থীরা শুধু মুসলমানদের মধ্যেই নয়, ইহুদীদের মধ্যেও রয়েছে। রবিনকে (ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী) চরমপন্থীরা হত্যা করেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমায় সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলা, ব্রিটেন, জাপান, ইন্ডিয়াসহ বিভিন্ন দেশে সংঘটিত সন্ত্রাসীমূলক ঘটনা থেকে বুঝা যায় চরমপন্থীরা সবখানেই আছে। তাহলে শুধু ইসলামকে কেন সহিংসতা ও চরমপন্থার জন্য দায়ী করা হচ্ছে। এটি একদম অন্যায়।

বিন কিন্নাহ: যা হোক, এই প্রতিবেদনে ইসলামপন্থী ধারাগুলোর যে শ্রেণীভাগ করা হয়েছে, সে বিষয়ে আপনার সমালোচনা সত্ত্বেও কিছু ইতিবাচক দিকও নিশ্চয় রয়েছে। উল্লেখিত ধারাগুলোর মধ্যকার পার্থক্যগুলো তুলে ধরতে তারা অক্লান্ত পরিশ্রম ও গবেষণা করেছে।

কারযাভী: প্রতিবেদকদের প্রচেষ্টার জন্য প্রশংসা তো করাই যায়, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু যারা ইসলামের মৌলিকত্ব অক্ষুন্ন রেখে সমসাময়িক বাস্তবতাকে গ্রহণ করে, সেই পুনর্জাগরণবাদী-সংস্কারপন্থী মধ্যপন্থী ধারাটিকে তারা এড়িয়ে গেছে। তারা একে একটি স্বতন্ত্র ধারা হিসেবে বিবেচনা করেনি। যদিও তারা অন্যান্য ধারাগুলোকে শ্রেণীবদ্ধ করেছে এবং হিজাব, নারী অধিকার, ইসলামী দণ্ডবিধি, সংখ্যালঘুসহ সকল বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ধারাটির অবস্থান তুলে ধরেছে।

বিন কিন্নাহ: এ ধরনের একটি ব্যাপক বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য যেসব দরকারী তথ্য প্রয়োজন, সম্ভবত সেসব সংগ্রহ করা যায়নি। যা হোক, দ্বন্দ্ব-সংঘাতের ক্ষেত্রে ধর্মের ভূমিকা নিয়ে কথা বলা যাক। কারণ, কেউ কেউ মনে করে এই প্রতিবেদনটি হলো দ্বন্দ্ব-সংঘাতকে একটি ধর্মীয় রূপ দেয়ার স্পষ্ট প্রচেষ্টা মাত্র। আপনি কী মনে করেন?

কারযাভী: এটা অনিবার্য ব্যাপার। এই সংঘাতের পেছনে যে ধর্ম রয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সভ্যতা কিংবা সংস্কৃতির সংঘাত বলে তাদের যে ন্যারেটিভ রয়েছে, এটি অনেকটা সেরকম। আসলে তারা বলতে চায়, সংঘাতটা ধর্মের সাথে ধর্মের, যেহেতু প্রত্যেকটি সংস্কৃতির পেছনে ধর্ম রয়েছে। অন্যদিকে আমরা এটিও জানি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতায় যারা আছে এবং বর্তমানে যারা দেশটির নীতি-নির্ধারণ করছে, তারা ইহুদীবাদী এবং কট্টর খ্রিষ্টান ডানপন্থী।

বিন কিন্নাহ: ধর্মের পরিবর্তন সাধন যে খুব সহজ কাজ নয়, র‍্যান্ডের প্রতিবেদনে তা স্বীকার করা সত্ত্বেও কেউ না কেউ তুরস্কের উদাহরণ দিয়ে বলতে পারে– দেখো, তুরস্কের উসমানীয় সাম্রাজ্য কীভাবে একটি সেক্যুলার রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে, রাষ্ট্রটি কীভাবে আধুনিকতা ও সেক্যুলার মূল্যবোধগুলো সমুন্নত করেছে। সুতরাং র‍্যান্ডের পরিকল্পনা বাস্তবায়নযোগ্য।

কারযাভী: কিন্তু তুরস্কের জনসাধারণের মধ্যে কি কোনো পরিবর্তন এসেছে? তাদের কাছে ধর্ম এখনো মৌলিক বিষয়। সেক্যুলারিজম থাকা সত্ত্বেও সামাজিক একক হিসেবে পরিবারগুলো ধর্মীয় মূল্যবোধ ও ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত ইসলামী প্রজাতন্ত্রগুলোতে মানুষ যেভাবে ধর্মীয় মূল্যবোধ সংরক্ষণে সক্ষম হয়েছিল, সেই একই ঘটনা তুরস্কের ক্ষেত্রেও ঘটেছে। জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি) কেন ক্ষমতায় আসতে পেরেছে? ধর্মীয় ভিত্তির উপর ভর করেই তারা ক্ষমতায় এসেছে। যদিও তুরস্কের সেনাবাহিনী ধর্মহীনতার রক্ষক।

বিন কিন্নাহ: র‍্যান্ডের প্রতিবেদনে মুসলিম দেশগুলোর বিদ্যমান সমস্যার সমাধান হিসেবে সেক্যুলারিজমের পাশাপাশি  সুফিবাদের কথাও বলা হয়েছে, যাতে করে ইবাদত ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের চর্চা কেবল আধ্যাত্মিক পর্যায় পর্যন্ত সীমিত থাকে। প্রতিবেদনটিতে যে ধরনের সুফিবাদের প্রস্তাব করা হয়েছে, সে বিষয়ে আপনার মতামত কী?

কারযাভী: আমার কাছে অবাক লাগে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মের দিকে প্রত্যাবর্তন এবং ধর্মপন্থী লোকেরা দেশটি শাসন করা সত্ত্বেও তারা মুসলমানদেরকে ধর্ম থেকে ফিরিয়ে রাখতে চায়। তরুণ, নারী, গ্রাম ও শহরবাসী, বুদ্ধিজীবী ও অশিক্ষিত সকলের সমগ্র জীবনে নানা মাত্রায় ইসলামের প্রভাব রয়েছে। ইসলামের পুনর্জাগরণের ফলে এটা ঘটেছে। এই প্রতিবেদনসহ পুরো ব্যাপারটির উদ্দেশ্য হলো ধর্মের সেই উপযোগিতাকে মুছে ফেলা। এটি পাশ্চাত্যের নতুন কোনো প্রচেষ্টা নয়। ষাটের দশকে তারা মিশরে একই ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। তখন একটি ডকুমেন্টে দেখানো হয়েছিল ধার্মিকতার বিরুদ্ধে লড়াই করে ইসলামী ধারাগুলোকে কীভাবে দুর্বল করা যায়। কারণ, ধার্মিকরাই হলো ইসলামের শক্তির উৎস। স্কুল ও সংবাদমাধ্যমগুলোতে ধর্মের ইতিবাচক ভূমিকা আড়াল করার নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তিউনিশিয়াসহ অন্যান্য দেশেও এই প্রচেষ্টা চালিয়েছিল।

বিন কিন্নাহ: প্রতিবেদনে হানাফী মাজহাবকে উৎসাহিত করা হয়েছে। কারণ, তারা মনে করে হানাফী মাজহাব অন্যদের তুলনায় আধুনিকতাপ্রবণ। অথচ যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের যেসব ধর্মীয় গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে, তারা কিন্তু একইসাথে হানাফী মাজহাব ও তালেবানের অনুসারী। এটি কি তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের স্ববিরোধী নীতি নয়?

কারযাভী: হানাফী মাজহাবকে তারা বুঝতে পেরেছে বলে আমি মনে করি না। একদল বিশেষজ্ঞের মতামতের উপর ভিত্তি করে হানাফী মাজহাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যেহেতু হানাফী মাজহাব বিশেষজ্ঞদের মতামতের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, তাই তাদের ধারণা এটা আধুনিকতার কাছাকাছি। যদিও এই মাজহাবের অনুসারীরা তালেবানসহ অন্যান্য সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছে। আসলে ইসলামের সকল মাজহাবেরই কিছু শক্তিশালী ও দুর্বল দিক রয়েছে। আমরা যদি একটি উন্নত রাষ্ট্র গড়তে চাই, সেই রাষ্ট্রের জন্য সংবিধান ও আইন প্রণয়ন করতে চাই, তাহলে সকল মাজহাবের ভালো দিকগুলো গ্রহণ করাই উত্তম।

বিন কিন্নাহ: বহু বিবাহ, ইসলামী দণ্ডবিধি (যেমন– চোরের হাত কাটা, ব্যাভিচারীকে বেত্রাঘাত ও পাথর নিক্ষেপ), হিজাব, স্ত্রীকে প্রহার করা, সংখ্যালঘুদের মর্যাদা, গণতন্ত্র এবং ইসলামী রাষ্ট্র ও মানবাধিকারসহ একটি দীর্ঘ তালিকা প্রতিবেদনটিতে রয়েছে। এই প্রত্যেকটি বিষয়ে ইসলামপন্থী ধারাগুলোর কোনটির অবস্থান কী, তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ইসলামী দণ্ডবিধির কথা যদি ধরি, তাহলে আমরা দেখি সেক্যুলাররা এর বিরোধী।

কারযাভী: আমি আশা করেছিলাম, প্রতিবেদনটিতে এই ইস্যুগুলোর ব্যাপারে পুনর্জাগরণবাদী-সংস্কারপন্থী ধারাটির অবস্থানের উল্লেখও থাকবে। কারণ, আমরা চোরের হাত কাটার আগে অবশ্যই ক্ষুধার্তকে অন্ন, বস্ত্রহীনকে বস্ত্র, বেকারদের কর্মসংস্থান, অশিক্ষিতদেরকে শিক্ষা, অসুস্থকে চিকিৎসা সেবা, অভাবীকে সহায়তা, গৃহহীনকে আশ্রয় এবং এতিমদেরকে দেখাশোনার ব্যবস্থা করার কথা বলি। শাস্তিপ্রয়োগের পূর্বশর্ত হিসেবে আমাদেরকে অবশ্যই প্রথমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমরা জানি, খরায় জনদুর্ভোগের কারণে খলিফা ওমর (রা) এক বছরের জন্য শাস্তি স্থগিত করেছিলেন।

বিন কিন্নাহ: র‍্যান্ডের এই প্রতিবেদনে বেশ কয়েকবার আপনার নাম এসেছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, আপনাকে সনাতনধর্মী-সংস্কারপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অথচ আপনি পুনর্জাগরণবাদী-সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত। আপনি নিজে আপনাকে কীভাবে চিত্রিত করবেন?

কারযাভী: র‍্যান্ডের প্রতিবেদনে পুনর্জাগরণবাদী-সংস্কারপন্থী স্বতন্ত্র ধারাটিকে এড়িয়ে যাওয়ায় এ রকম হয়েছে। আমাকে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করবে, সেটি তারা জানে না। ফলে তারা আমাকে সনাতনধর্মীদের কাতারে ফেলেছে। কিন্তু তারা আবার এই শ্রেণীটির দুটি ভাগ করেছে– সনাতনধর্মী, সংস্কারপন্থী সনাতনধর্মী। কেন তারা এটি করেছে? যে স্বাধীন ধারাটি নিজস্ব মতামত, স্বাতন্ত্র্য ও নিজস্ব ভিত্তির কারণে সুপরিচিত, তাদেরকে কেন আলাদা ধারা হিসেবে আলোচনা করা হয়নি? অথচ তারা আরো অনেক কিছুই উল্লেখ করেছে। আপনি হয়তো জানেন, এসব কথার মধ্যে রয়েছে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট…

বিন কিন্নাহ: হ্যাঁ, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের একটি সরকারী নথিতে আপনার ব্যাপারে সম্মানজনক কথা থাকায় কংগ্রেসম্যান টম ল্যানটোস এক চিঠিতে কলিন পাওয়েলকে দোষারোপ করেছেন।

কারযাভী: এই নথি সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। তারা কখন কোন প্রেক্ষাপটে এটি করেছিল, তাও আমার জানা নেই। ৯/১১-র হামলার নিন্দা করায় হয়তো তারা তখন আমার নাম তাদের নথিতে উল্লেখ করেছিল।

বিন কিন্নাহ: কিন্তু কংগ্রেসম্যান টম ল্যানটোসের চিঠিতে এই অভিযোগও ছিল যে, আপনি আত্মঘাতী অপারেশনকে উৎসাহিত করেছেন।

কারযাভী: এখানেই তো সমস্যা। প্রতিবেদনটিতে তারা একাধিকবার উল্লেখ করেছে, আমার সমস্যা হলো আমি মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির বিরোধী। সামাজিক বিষয়াদিতে আমার পুনর্জাগরণবাদী-সংস্কারপন্থী প্রগতিশীল মতামতের সাথে তারা একমত। এসব বিষয়ে সাধারণত তাদের কোনো আপত্তি নাই। কিন্তু মার্কিন বৈদেশিক নীতির ব্যাপারে আমার অবস্থানের তারা বিরোধী। আমি মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির সমালোচক। বিশেষ করে মুসলিম দেশসমূহ এবং ফিলিস্তিন প্রশ্নে তাদের নীতির সমালোচনা করি। ইসরাইলের প্রতি তাদের চরম পক্ষপাতিত্বেরও আমি সমালোচক। অর্থ, অস্ত্র এবং ভেটোক্ষমতা দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা না করলে ইসরাইল কখনোই ফিলিস্তিনে ধ্বংসযজ্ঞ, হত্যা, বর্বরতা, সম্পদ বিনষ্ট এবং উচ্ছেদ কর্মকাণ্ড চালাতে পারতো না।

একই কথা ইরাকের বেলায়ও প্রযোজ্য। ফালুজা শহরের ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ, মসজিদও যেখানে রেহাই পায়নি, আমি কীভাবে তা মেনে নেবো? তারা মসজিদের ধর্মীয় পবিত্রতাকে পর্যন্ত সম্মান করেনি। তারা শহরের হাসপাতাল পর্যন্ত ধ্বংস করেছে। হাসপাতালের মানবিক মর্যাদাকেও সম্মান করেনি। তারা মসজিদে আশ্রয় নেয়া একজন ব্যক্তিকে পর্যন্ত হত্যা করেছে। অথচ তিনি ছিলেন আহত। চিকিৎসা দেয়ার পরিবর্তে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আহতদের উদ্ধারকারী দলকে পর্যন্ত তারা কাজ করতে দেয়নি। আমার আপত্তি তাদের এই পররাষ্ট্রনীতিতে।

বিন কিন্নাহ: এ কারণেই তাহলে প্রতিবেদনটিতে আপনাকে সামাজিক বিষয়ে প্রগতিশীল, কিন্তু পররাষ্ট্রনীতির ব্যাপারে কট্টরপন্থী হিসেবে দেখানো হয়েছে।

কারযাভী: এর কারণ হলো, আমার জাতির স্বার্থের পক্ষে কথা বলার জন্য আল্লাহ আমার উপর দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। আমি জাতির স্বার্থ রক্ষায় সবসময় কথা বলে যাবো। উচিত কথা বলতে আমি কাউকে পরোয়া করবো না। আমার ব্যাপারে তারা যা খুশি করুক, এতে কিছু যায় আসে না। তারা তো ৯/১১-র আগেই আমার যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

শহীদী অপারেশন (তারা যাকে আত্মঘাতী অপারেশন বলে থাকে) প্রশ্নে আমার কথা হলো, নিজস্ব ভূখণ্ড, আত্মমর্যাদা ও পবিত্র স্থানের প্রতিরক্ষায় ফিলিস্তিনীদের অধিকারের প্রতি আমি সমর্থন জানিয়ে যাবো। দাম্ভিক শক্তিশালী পক্ষ যদি সর্বশক্তি নিয়ে দুর্বলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, তাহলে তার বিরুদ্ধে এটি দুর্বলের অধিকার। জীবন বিলিয়ে দেয়া ছাড়া তারা আর কীইবা করতে পারে! তাদেরকে যদি অ্যাপাচি হেলিকপ্টার, যুদ্ধবিমান, ট্যাংক, মিসাইল ইত্যাদি দেয়া হতো, তাহলে তারা নিশ্চয় নিজেদেরকে বিলিয়ে দিতো না। শক্তিশালী অত্যাচারীর বিরুদ্ধে এটাই হলো দুর্বলের অস্ত্র।

বিন কিন্নাহ: আপনি বলেছেন, প্রতিবেদনে পুনর্জাগরণবাদী-সংস্কারপন্থী ধারাটিকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাহলে যে ধারাটির অস্তিত্ব বাস্তবে মুসলিম দেশগুলোতে রয়েছে, তারা তো মার্কিন প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে নিজেদের অস্তিত্বের প্রমাণ দিতে পারে। তারা মার্কিনীদের বোঝাতে পারে, এটি একটি সক্রিয় ও মধ্যপন্থী ধারা, যা এখন সবার জন্য দরকারী।

কারযাভী: আমরা তাই আশা করি। আমি ১০-১৫ বছর আগে ইসলামী আন্দোলনের ভবিষ্যত নিয়ে একটি বই লিখেছিলাম। সেখানে আমি সমস্ত বিষয়ে পাশ্চাত্যের সাথে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছি। অর্থাৎ, ধর্মীয় ইস্যুতে ধর্মগুরু, ধর্মপ্রচারক ও বিশপদের সাথে সংলাপ হতে পারে। মতাদর্শিক ব্যাপারে ওরিয়েন্টালিস্ট, লেখক এবং সংস্কৃতি ও বুদ্ধিবৃত্তিতে আগ্রহীদের সাথে সংলাপ হতে পারে। একইভাবে রাজনীতি নিয়ে নীতি-নির্ধারকদের মধ্যে সংলাপ হওয়া উচিত।

আমরা আশা করি তাদের কাছে পৌঁছতে পারবো এবং আমাদের মধ্যপন্থী আদর্শ তুলে ধরতে পারবো। আমরা তাদেরকে বুঝাতে চাই, ইসলাম সমগ্র মানবজাতির জন্য একটি মানবিক জীবনব্যবস্থা। ইসলাম মনে করে, একই স্রষ্টার বান্দা এবং একই পিতার সন্তান হিসেবে সকল মানুষ একটি পরিবারের মতো। আমরা যদি তাদের কাছে পৌঁছতে পারি, আমাদের পরিচয় তুলে ধরতে পারি, তাহলে তাদেরকে বলবো, আপনাদের অন্ধ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বেরিয়ে আসুন। এতে আমরা খুশি হবো। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, আমরা সেই সুযোগ পাচ্ছি না। তারপরও আমাদেকে চেষ্টা করে যেতে হবে। ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর সাংবাদিকদের জন্য আমার দরজা খোলা ছিল। এ মুহূর্তে থমাস ফ্রেডমেনের কথা মনে পড়ছে। তিনি দোহায় আমার একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। অবশ্য সেটি কোথাও প্রকাশিত হয়েছিল কিনা, তা আমি জানি না। একইভাবে আমি ফ্রান্স, ইংল্যান্ড বা অন্যান্য স্থানে আরো অনেক পাশ্চাত্যের লোকদেরকে সাক্ষাৎকার দিয়েছি। আমরা নিজেদেরকে গুটিয়ে রাখি না।

বিন কিন্নাহ: মুসলিম দেশগুলোর শিক্ষাক্ষেত্রে র‍্যান্ড করপোরেশনের সহায়তা সম্পর্কে কিছু বলুন।

কারযাভী: মুসলমানরা সবসময়ই পাশ্চাত্য প্রযুক্তি ও এর ব্যবহারিক জ্ঞানকে স্বাগত জানায়। কাতারে র‍্যান্ড করপোরেশন সক্রিয় রয়েছে। সেখানে তারা নিজস্ব পদ্ধতিতে বেসরকারী স্কুল চালু করেছে। তারা মূলত চারটি বিষয়ের উপর জোর দেয়: গণিত, বিজ্ঞান, আরবী ও ইংরেজি। যা হোক, আমাদেরকে মাথায় রাখতে হবে আমরা একটি মুসলিম দেশ। স্কুলগুলোতে অবশ্যই ইসলামিক স্টাডিজ ও ফিকাহ শাস্ত্র থাকতে হবে। আমাদের স্কুলগুলোতে নামাজের প্রশিক্ষণ থাকতে হবে এবং অবশ্যই আমাদের শিশুদেরকে ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ শেখাতে হবে।

বিন কিন্নাহ: র‍্যান্ডের প্রতিবেদনে হাদীস শাস্ত্রকে এড়িয়ে যেতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

কারযাভী: হাদীস শাস্ত্র গভীর জ্ঞানের বিষয় এবং ক্ষেত্রবিশেষে এটিকে গভীরভাবে বুঝতে হবে।

এ ধরনের আরো লেখা