ধর্মীয় চরমপন্থীদের উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি
রক্তমূল্যে কেনা বাংলার সবুজ-শ্যামল প্রান্তর ইসলাম ধর্মের নামে চালানো সন্ত্রাসে রক্তাক্ত হচ্ছে। ধর্মের দোহাই দিয়ে প্রিয় বাংলাদেশকে কৃত্রিমভাবে অস্থির, অশান্ত করার অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে। একজন সত্যিকারের মুসলিম কখনো অন্যের জন্য ভয়ের, ত্রাসের কারণ হতে পারে না। একজন সত্যিকারের মুসলিম সমাজের জন্য আশীর্বাদ, অভিশাপ নয়। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন,
“আপন পালনকর্তার পথের প্রতি আহ্বান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উপদেশ শুনিয়ে উত্তমরূপে এবং তাদের সঙ্গে বিতর্ক করুন সবচেয়ে উত্তম পন্থায়। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তা ওই ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষভাবে জ্ঞাত রয়েছেন, যে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে এবং তিনিই ভালো জানেন তাদেরকে, যারা সঠিক পথে আছে।”
[সূরা নাহল: ১২৫]
শান্তি, দয়া ও করুণার ধর্ম ইসলাম কখনো সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অনুমতি দেয় না। মহান আল্লাহ আল-কোরআনে একাধিকবার দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন মুসলমানদের আগে আক্রমণ না করতে, আগ্রাসন না চালাতে, শত্রু যতটুকু শক্তি প্রয়োগ করেছে তার চেয়ে বেশি শক্তি প্রয়োগ না করতে। আল্লাহ বলেছেন,
“ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি ও তোমাদের দেশ থেকে বহিষ্কৃত করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদের ভালোবাসেন।”
[সূরা মুমতাহিনা: ৮]
শুধু মানুষের প্রতি নয়, একজন মুসলমানকে পশু-পাখির প্রতিও দয়াবান হতে বলা হয়েছে। এদের কষ্ট দিতে হাদীসে নিষেধ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“জনৈক মহিলাকে এ জন্য শাস্তি দেয়া হয়েছে যে সে একটি বিড়ালকে মৃত্যু পর্যন্ত আটকে রেখেছে। সে যখন বিড়ালকে আটকে রেখেছে খাবার ও পানীয় থেকে তাকে বঞ্চিত রেখেছে। মুক্ত হয়ে পোকামাকড় খাবে সে সুযোগ থেকেও তাকে বঞ্চিত করা হয়েছে।”
আরেক হাদীসে রাসূল (সা.) বলেছেন,
“এক ব্যক্তি এক পিপাসার্ত কুকুরকে পানি পান করিয়েছে, এর প্রতিদানে আল্লাহ তায়ালা তার গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন।”
বোমাবাজি করা, আত্মঘাতী হয়ে নিরস্ত্র মানুষকে আতঙ্কিত করা, হত্যা-জখম করা, ঘরবাড়ি, সম্পদ, স্থাপনা ধ্বংস করা দয়া ও ক্ষমার ধর্ম ইসলামের চিরায়ত আদর্শের বিপরীত।
স্বভাবতই প্রশ্ন জাগতে পারে, তাহলে ইসলামে কি অস্ত্র ধারণ করার, যুদ্ধ করার বিধান নেই?
অবশ্যই রয়েছে। কিন্তু কখন কোন অবস্থায় প্রতিরোধ যুদ্ধ করা যাবে সে বিষয়ে বিভ্রান্তিমূলক ও অপব্যাখ্যা দিয়ে অনেককেই ইসলাম ধর্মের নামে সর্বনাশা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত করা হচ্ছে। ইসলামে কেন অস্ত্র ধারণ করার অনুমতি রয়েছে সে বিষয়ে আল্লাহ কোরআনে বলেন,
“আর আল্লাহ যদি মানুষের কতককে কতকের দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তবে অবশ্যই জমিন ফ্যাসাদপূর্ণ (বিপর্যয়পূর্ণ) হয়ে যেত। কিন্তু আল্লাহ বিশ্ববাসীর উপর অনুগ্রহশীল।”
[সূরা বাকারা: ২৫১]
কোরআনের অন্য এক আয়াতে আল্লাহ বলেন,
“আল্লাহ যদি মানবজাতির একদলকে অপর দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তবে খ্রিস্টান সংসার বিরাগীদের উপাসনা স্থান, গির্জা (ইহুদীদের), উপাসনালয় ও মসজিদগুলো বিধ্বস্ত হয়ে যেত, যেগুলোতে আল্লাহর নাম অধিক স্মরণ করা হয়। আল্লাহ নিশ্চয়ই তাদের সাহায্য করবেন, যারা আল্লাহকে সাহায্য করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, শক্তিধর।”
[সূরা হজ্জ্ব: ৪০]
কোন পরিস্থিতিতে একজন মুসলিম অস্ত্র ধারণ করতে পারবে সে বিষয়ে কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। আত্মরক্ষার জন্য যুদ্ধ করার অনুমতি রয়েছে। আল্লাহ বলেন,
“যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হলো তাদেরকে যারা আক্রান্ত হয়েছে; কারণ তাদের প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে, আল্লাহ নিশ্চয় তাদের সাহায্য করতে সক্ষম।”
[সূরা হজ্জ্ব: ৩৯]
আল্লাহ আরো বলেন,
“এবং যারা তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে, তোমরাও তাদের সঙ্গে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করো এবং সীমা অতিক্রম করো না; নিশ্চয়ই সীমা লঙ্ঘনকারীদের আল্লাহ ভালোবাসেন না।”
[সূরা বাকারা: ১৯০]
ইসলাম ধর্ম পালনে, আল্লাহর পথে চলতে যারা বাধা সৃষ্টি করে এবং যারা মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব করে তারা ইসলামের বিরুদ্ধে অপরাধ করে। তাই এই অবস্থায় যুদ্ধ করার অনুমতি আছে। আল্লাহ কোরআনে বলেন,
“আর তাদের হত্যা করো যেখানে পাও সেখানেই এবং তাদের বের করে দাও সেখান থেকে, যেখান থেকে তারা বের করেছে তোমাদেরকে। বস্তুত ফেতনা-ফ্যাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ।”
[সূরা বাকারা: ১৯১]
অমুসলিম ভূখণ্ডে মুসলমানরা নির্যাতিত-নিপীড়িত হলে তাদের সাহায্যে অস্ত্র ধারণ করার অনুমতি আছে। পবিত্র কোরআনে এ বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে,
“আর তোমাদের কী হলো যে তোমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করছ না দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে, যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদিগকে এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান করুন; এখানকার অধিবাসীরা যে অত্যাচারী! আর আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য পক্ষালম্বনকারী নির্ধারণ করে দিন এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দিন।”
[সূরা নিসা: ৭৫]
সেসব অভ্যন্তরীণ শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার নির্দেশ রয়েছে, যারা মোনাফেক (কপট), বিদ্রোহী, সন্ত্রাসী, যাকাত ও অন্যান্য কর পরিশোধে অস্বীকৃতি জানায়, প্রকাশ্যে ইসলামের আইন অবমাননা করে, শান্তি, নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলার প্রতি হুমকি সৃষ্টি করে, রাষ্ট্রের অখণ্ডতা ও আদর্শিক ভিত্তির উপর হুমকি সৃষ্টি করে। আল্লাহ কোরআনে ইরশাদ করেন,
“হে নবী, কাফের ও মোনাফেকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করুন এবং তাদের প্রতি কঠোরতা দেখান। তাদের ঠিকানা জাহান্নাম। তা অত্যন্ত নিকৃষ্ট ঠিকানা।”
[সূরা তাহরীম: ৯]
যারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালায় তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করতে বলা হয়েছে। তবে মুসলমানদের আগ্রাসন চালাতে নিষেধ করা হয়েছে। আল-কোরআনে আল্লাহ বলেন,
“আর লড়াই করো আল্লাহর ওয়াস্তে তাদের সঙ্গে, যারা লড়াই করে তোমাদের সঙ্গে। অবশ্য কারো প্রতি বাড়াবাড়ি করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।”
[সূরা বাকারা: ১৯০]
ধর্মের নামে আপনারা যারা আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন, আত্মঘাতী হয়ে নিরপরাধ, নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা, সম্পদ ধ্বংস, সমাজে বিশৃঙ্খলা ও আতঙ্ক সৃষ্টির পথ বেছে নিয়েছেন, তাদের কয়েকটি বিষয় ভেবে দেখার জন্য আমি নিবেদন করছি।
এক.
আপনাদের কাজের দ্বারা ইসলামের কী উপকার হচ্ছে? আপনাদের কর্মকাণ্ডে দেশে-বিদেশে টুপি-দাড়িওয়ালা মানুষ শুধু সন্দেহ আর অবিশ্বাসেরই শিকার হচ্ছে না; বরং অনেক ক্ষেত্রে হামলা, অপমান, অবহেলা ও বিদ্রূপের শিকার হচ্ছে। আপনাদের বোমাবাজি, হত্যা, সন্ত্রাস আর আত্মহননের কারণে মসজিদে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে, সীমিত সময়ের জন্য মসজিদ খোলা থাকছে, ফলে মসজিদভিত্তিক ইসলামী জ্ঞানচর্চা বন্ধ হয়ে গেছে।
দুই.
ধর্মের জন্য যদি সন্ত্রাস হয়ে থাকে, তবে ইসলামে তা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আল্লাহ তায়ালা কোরআনে ঘোষণা করেছেন,
“দ্বীন গ্রহণের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই। নিশ্চয় হেদায়াত স্পষ্ট হয়েছে ভ্রষ্টতা থেকে। অতএব, যে ব্যক্তি তাগুতকে (সীমালঙ্ঘনকারী, আল্লাহদ্রোহী, বিপথগামী) অস্বীকার করে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, অবশ্যই সে মজবুত রশি আঁকড়ে ধরে, যা ছিন্ন হওয়ার নয়। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।”
[সূরা বাকারা: ২৫৬]
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ আরো বলেছেন,
“এবং যদি তোমার প্রভু ইচ্ছা করতেন তাহলে পৃথিবীর বুকে বসবাসকারী সব মানুষকেই একসঙ্গে বিশ্বাসী বানিয়ে ফেলতে পারতেন। সুতরাং (হে মুহাম্মদ) আপনি কি তাহলে বিশ্বাস স্থাপনের জন্য লোকদের জবরদস্তি করতে চান?”
[সূরা ইউনুস: ৯৯]
তিন.
আপনারা কারো নির্দেশে আত্মঘাতী হচ্ছেন। কিন্তু আপনারা কি এ বিষয়ে রাসূলের (সা.) হাদীস শোনেননি?
“রাসূলুল্লাহ (সা.) সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন এবং এক ব্যক্তিকে তার আমির নিযুক্ত করে দেন। সে একটি আগুন প্রজ্বলন করল এবং তাদের তাতে ঝাঁপ দিতে নির্দেশ দিল। একদল লোক তাতে ঝাঁপ দিতে উদ্যত হলো এবং অপর একদল বলল, আমরা (ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে তো) আগুন থেকেই আত্মরক্ষা করেছি (তাই আগুনে ঝাঁপ দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না)। যথাসময়ে রাসূলুল্লাহর (সা.) দরবারে সে প্রসঙ্গ উত্থাপিত হলো। তখন তিনি যারা আগুনে ঝাঁপ দিতে উদ্যত হয়েছিল তাদের লক্ষ্য করে বললেন, তখন তোমরা যদি সত্যি সত্যি আগুনে ঝাঁপ দিতে, তবে কেয়ামতের দিন পর্যন্ত তাতেই অবস্থান করতে। পক্ষান্তরে অপর দলকে লক্ষ্য করে তিনি উত্তম কথা বললেন। তিনি বললেন, আল্লাহর অবাধ্যতায় আনুগত্য নেই। আনুগত্য শুধুই সৎ কাজে।”
চার.
আপনারা যারা ইসলামের নামে চরমপন্থা তথা উগ্রতার পথ বেছে নিয়েছেন তাদের উদ্দেশে দুটি নির্বাচিত হাদীস উল্লেখ করছি,
“যে ব্যক্তি কাঠিন্য বা উগ্রতার পথ অবলম্বন করবে আল্লাহও তার জন্য কাঠিন্য অবলম্বন করবেন। কেউ যদি কোনো মানুষের হাতের তালুতে রাখার মতো সামান্য রক্তও প্রবাহিত করে, তবে সেই রক্ত তার ও জান্নাতের মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়াবে (সে জান্নাত দেখতে পাবে; কিন্তু সেই রক্ত তাকে জান্নাতে প্রবেশ করতে দেবে না)। কাজেই যদি কেউ পারে এ ধরনের রক্তপাত থেকে আত্মরক্ষা করতে, তবে সে যেন আত্মরক্ষা করে।”
অন্য হাদীসে বর্ণিত আছে,
“তোমাদের মধ্যে এমন একটি সম্প্রদায় বের হবে, যাদের নামাযের পাশে তোমাদের নামায তোমাদের কাছেই নগণ্য ও অপছন্দনীয় বলে মনে হবে, যাদের রোযার পাশে তোমাদের রোযা তোমাদের কাছেই নগণ্য ও অপছন্দনীয় বলে মনে হবে, যাদের নেক কর্মের পাশে তোমাদের কর্ম তোমাদের কাছেই নগণ্য ও অপছন্দনীয় বলে মনে হবে, যারা কোরআন পাঠে রত থাকবে, কিন্তু কোরআন তাদের কণ্ঠনালি অতিক্রম করবে না। তীর যেমন শিকারের দেহের মধ্যে প্রবেশ করে অন্য দিক দিয়ে বেরিয়ে যায়, তেমনিভাবে তারা দ্বীনের মধ্যে প্রবেশ করে আবার বেরিয়ে যাবে।”
পাঁচ.
আপনার কারণে যাঁরা নিহত হলেন সেই নিহত ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের যে হক (অধিকার) নষ্ট হলো, তাদের ব্যাপারে সৃষ্টিকর্তার কাছে আপনারা কী জবাব দেবেন? আপনারা কি আল্লাহর হুঁশিয়ারি শোনেননি? কোনো বান্দার হক নষ্ট করা হলে স্বয়ং আল্লাহও তাকে ক্ষমা করবেন না, যতক্ষণ না যাদের হক নষ্ট করা হয়েছে তারা ক্ষমা করে। রাসূলের (সা.) হাদীস কি শোনেননি? অন্যের হক নষ্ট করলে, হকদারের হক ফিরিয়ে না দিয়ে, তার থেকে ক্ষমা না নিয়ে মারা গেলে হক নষ্টকারীর নেক আমল হকদারকে দিয়ে নিজে যেতে হবে জাহান্নামে। হক নষ্টকারীর নেক আমল হকদারদের দাবির চেয়ে কম হলে হকদারদের গুনাহ হক নষ্টকারীর উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। সারা জীবনের নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত, যাবতীয় নেক আমল হকদারকে দিয়ে নিজে নিঃস্ব, সর্বস্বান্ত, রিক্ত হয়ে জাহান্নামী হতে হবে।
ছয়.
আপনাদের বিবেচনায় বাংলাদেশে তাগুতের শাসন পরিচালিত হচ্ছে। যদি ধরে নিই আপনার বক্তব্য সত্য, তাহলে প্রশ্ন হলো রাসূল (সা.) যখন পৃথিবীতে আসেন তখন জাহেলি তথা অন্ধকারের যুগ ছিল, তাগুতের শাসন ছিল। আল্লাহর রাসূল (সা.) কি তাগুতের শাসন পরিবর্তনের জন্য জোর করে, নেতিবাচক পন্থায়, নৈরাজ্য ও ধ্বংসাত্মক পন্থা অবলম্বন করেছিলেন? রাসূল (সা.) তাঁর সাহাবীদের আত্মঘাতী হওয়ার, চোরাগোপ্তা হামলার শিক্ষা দিয়েছিলেন, নাকি সুন্দর ব্যবহার, উত্তম চরিত্র, আল্লাহর পথে আহ্বান, আত্মগঠন ও সমাজ-সংস্কারের মাধ্যমে পরিবর্তন ঘটিয়েছিলেন? আপনারা তাহলে কার অনুসরণ করছেন? আল্লাহর আইন বা ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজ করতে হলে তা শুধু আল্লাহর কোরআন ও রাসূলের দেখানো পথেই করতে হবে। ইসলামের নামে কোনো শায়খের খামখেয়ালিপনা কিংবা ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শবিরোধী পন্থায় ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ অত্যন্ত সুস্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন,
“হে নবী, লোকদের বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমাকে অনুসরণ করো। তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহ মাফ করে দেবেন। তিনি বড়ই ক্ষমাশীল ও অসীম দয়াবান। তাদের বলুন আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য প্রকাশ করো। এরপর বস্তুত যদি তারা বিমুখতা অবলম্বন করে, তাহলে আল্লাহ কাফেরদেরকে ভালোবাসেন না।”
[সূরা ইমরান: ৩১-৩২]
কোরআনের অন্য এক আয়াতে আল্লাহ বলেন,
“নিঃসন্দেহে রাসূলের জীবনে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ। অবশ্য তাদের জন্য, যারা আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের ও পরকালীন মুক্তির ব্যাপারে আশা রাখে এবং যারা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করে।”
[সূরা আহযাব: ২১]
সাত.
জিহাদের আহ্বান কে করতে পারে?
যদি যে কেউ জিহাদের আহ্বান ও নেতৃত্ব দিতে পারত, তাহলে মুসলমানরা নানা দলে বিভক্ত হয়ে জিহাদের ডাক দিত, আর সে ক্ষেত্রে নিশ্চিত বিশৃঙ্খলা, নিজেদের মধ্যে দাঙ্গা-হাঙ্গামা লেগে যেত। ইসলামে বিশৃঙ্খলা, বিপর্যয় সৃষ্টির কোনো সুযোগ নেই, বরং বিশৃঙ্খলা, বিপর্যয়কে কোরআনে হত্যার চেয়েও জঘন্য অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ইসলামে একমাত্র মনোনীত নেতাই জিহাদের আহ্বান ও নেতৃত্ব দিতে পারেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,
“রাষ্ট্রপ্রধান হলেন ঢাল, যাকে সামনে রেখে কিতাল বা যুদ্ধ পরিচালিত হবে।”
অন্য হাদীসে বলা হয়েছে,
“রাষ্ট্রপ্রধান ধার্মিক হোক আর অধার্মিক হোক, উভয় ক্ষেত্রেই তার আনুগত্যে জিহাদ করা তোমাদের উপর ওয়াজিব।”
কেউ বিভ্রান্ত করেছে বলে অন্যায় করেছি— এমন কোনো ওজর শেষ বিচারের দিন গ্রহণ করা হবে না বলে কোরআনে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কাজেই সময় থাকতে বিভ্রান্তি ছেড়ে কোরআন-হাদীসের পথ অনুসরণ করুন, সব সন্ত্রাসী কাজ বর্জন করুন।