আইডেন্টিটি পলিটিক্স একটা ফাঁদ
আপনি বাঙালি, নাকি বাংলাদেশী, নাকি মুসলমান? কোন পরিচয়টাকে আপনার প্রথম পরিচয় হিসেবে ধারণ করেন? সমাজে বিদ্যমান বিভিন্ন পক্ষ এই প্রশ্নটা প্রায়ই করে থাকে। আমরা যারা আমজনতা, তারা এ ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি হলে দ্বন্দ্বে পড়ে যাই। কারণ, জন্মগতভাবে আমরা বাঙ্গালি কিংবা অন্য কোনো নৃগোষ্ঠীর মানুষ। রাষ্ট্রীয় পরিচয়ে বাংলাদেশী। আর ধর্মীয় পরিচয়ে মুসলমান, হিন্দু বা অন্য কোনো ধর্মের অনুসারী, কিংবা অবিশ্বাসী-নাস্তিক। এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর দেয়া তাই আমাদের জন্য ডিফিকাল্ট।
খেয়াল করলে দেখবেন, এ জাতীয় প্রশ্ন যারা করে, তাদের সবারই কোনো না কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। প্রশ্নটা মোটেও নিরীহ নয়।
https://www.facebook.com/official.tariqramadan/videos/1671666502847639
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর তারিক রমাদান এই প্রশ্নটা চমৎকারভাবে ডিল করেছেন। তিনি বলেছেন, গত ১৫ বছর ধরে ইউরোপে আমরা উগ্র-ডানপন্থীদের করা এই প্রশ্ন মোকাবেলা করে আসছি। তার মতে, আইডেন্টিটি বিজনেস একটা ফাঁদ। ভুলেও এই ফাঁদে পা দেয়া যাবে না।
তাহলে এই প্রশ্নের জবাব কী হবে? এর সমাধান হিসেবে তিনি মাল্টিপল আইডেন্টিটি ধারণাকে নিয়ে এসেছেন। অর্থাৎ, একই সাথে কোনো ব্যক্তি একাধিক পরিচয় ধারণ করতে পারে। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তুমি কি সুইস, নাকি মুসলমান? তিনি জবাব ছিল, নাগরিক হিসেবে আমি সুইস, আর বিশ্বাসের দিক থেকে মুসলমান। তখন পাল্টা প্রশ্ন করা হলো, তোমার প্রথম পরিচয় কোনটা? সুইস, নাকি মুসলিম? তিনি বললেন, এটা তো একটা বেকুবি মার্কা প্রশ্ন হলো। দুইটাই আমার পরিচয়। কারণ, আমি মাল্টিপল আইডেন্টিটি ধারণ করি। তার জবাবটা ছিল হুবুহু এ রকম:
This is silly question. I am both. We have multiple identities. … I am Swiss by nationality, Egyptian by memory, European by culture, Universalist by principle, Moroccan by adoption and a man because this part of your identity is to be a man or woman.
এ প্রসঙ্গে তিনি একটি মজার উদাহরণ দিয়েছেন। একজন ব্যক্তি একইসাথে কবি ও নিরামিষভোজী হতে পারে। কবিদের আড্ডায় গিয়ে সে যেমন নিজের নিরামিষভোজী পরিচয় দেবে না। তেমনি, নিরামিষভোজীদের অনুষ্ঠানে গিয়ে নিজের কবি পরিচয় দেয়াটাও অপ্রাসঙ্গিক। প্রেক্ষাপটই নির্ধারণ করবে, কোন সময় আপনার কোন পরিচয়টা মুখ্য।
তার মতে, আইডেন্টিটি বিজনেস যারা করে, তারা মূলত মানুষের ইমোশন নিয়ে খেলা করে। এটি কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ নয়।
বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । আত্ম পরিচয়ের ভিন্নমাত্রিক ব্যবহার অবশ্যই গুরুত্বের দাবিদার। এটা না হলে ইসলাম বিদ্বেষীরা বিশেষ করে যারা রাজনীতিতে ইসলামকে নিষিদ্ধ করতে চায়, তাদের কৌশল শক্তিশালী হতে বাধ্য। কারণ রাজনীতিতে ইসলামকে ঠেকানোর দায়িত্ব এক শ্রেণীর আলেমরাও হাতে তুলে নিয়েছে। যেমন শায়খ মতিউর রহমান মাদানি। এই মানসিকতার লোকজন ইসলামের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর।