ইসলামে নারী আলেম ও ধর্মপ্রচারকগণ

[এই আর্টিকেলটি ভার্চুয়াল মস্ক ওয়েবসাইটে প্রকাশিত জন (ইয়াহইয়া) এডেরারের লেখা Female Scholars and Preachers in Islam শীর্ষক আর্টিকেলটির অনুবাদ।]

ধর্মসমূহ বর্তমানে যেসব বড় বড় সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে তার অন্যতম হলো আধুনিকতার প্রাসঙ্গিকতা। ধর্মের অনেক লোকজন এই প্রসঙ্গে হয় তাদের ধর্মগ্রন্থকে আধুনিক সময়ের সাথে সংস্কার করে নিতে চাচ্ছে অথবা নতুন ব্যাখ্যার আলোকে ধর্মের কিতাবাদিকে পুনঃব্যাখ্যা করছে বা কিছু বিষয়কে বাদ দিচ্ছে। ধর্মসমূহের মাঝে ইসলামের সৌন্দর্য হচ্ছে এটি বহুমুখী ও বিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এর রয়েছে বহুমুখী আইনগত মূলনীতি ও ঐতিহ্য, যা সময় এবং সংস্কৃতির সাথে সবদিক থেকে প্রাসঙ্গিক থাকে।

বাস্তবতার গ্রহণ ও প্রত্যাখ্যানের মাঝে আধুনিকতার অবস্থান:

মুসলিমদের সঠিক আচরণ কিন্তু আধুনিকতার বিরোধিতা করা অথবা বাতিল করা নয়, বরং ঐশী বাণীর সাথে এটিকে গ্রহণ করা। দুর্ভাগ্যবশত, অনেক ‘রক্ষণশীল’ মুসলিম এক বা একাধিক কারণে আধুিনকতার প্রসঙ্গকে ভয় করে। এই ভয় তাদের প্রাসঙ্গিকতার অবস্থান থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। এই ধরনের চিন্তাভাবনার ফলে অনেক যুক্তিবাদী ও শিক্ষিত মুসলিমকে ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। কারণ তাদেরকে বাস্তবতায় বসবাস করতে হয় আর তাদের কাছে ইসলামকে এই পথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ, অপ্রাসঙ্গিক ও বেমানান মনে হয়।

আমরা কুরআন, সুন্নাহ এবং সমৃদ্ধশালী বিগত চৌদ্দশত বছরে উত্তরাধিকার সুত্রে পাওয়া শরীয়াহ আইনে আধুনিকতাকে সহজে গ্রহণ করার অনেকগুলো উদাহরণ খুঁজে পাই। সুতরাং এটি কোন নতুন সংস্কার নয়, বরং শাস্ত্রীয় কিতাবাদি গবেষণার পুনর্জাগরণ। আমাদের ক্লাসিকাল ইসলামিক শরীয়াহ আইন ব্যাপক বৈচিত্র্যময় ও বহুমুখী। বর্তমানে দুটি সমস্যার জন্য শরীয়াহ আইন বহুমুখিতা প্রকাশের পথে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাহলো- কয়েক শতাব্দীকাল ধরে ইজতিহাদের (কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিধি-বিধানের মূলনীতি তৈরি) দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং গত দুই শতাব্দী ধরে ইসলামি বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থার ব্যাপক অধঃপতন। আর এ দু’টো বিষয় মুসলমানদেরকে মাযহাব ও বিভিন্ন চিন্তাগোষ্ঠীকে অন্ধভাবে অনুসরণের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ ব্যাপারগুলোই বর্তমানে এমন বৈপরিত্য সৃষ্টির মূল কারণ।

সমাজে নারীর ভূমিকা:

আধুনিকতার একটি অন্যতম বিষয় হচ্ছে নারী নেতৃত্ব। সংস্কৃতি ও মুসলিম বিশ্বের ফতোয়াই হচ্ছে, নারীরা মা হিসেবে নেত্রী হবেন কিন্তু ঘরের বাইরে সে নেত্রী হতে পারবে না। আবার কারো কারো মত হচ্ছে, নারীরা ইসলামিক স্কলার হতে পারবে এবং দাওয়াতও দিতে পারবে তবে তারা শুধু অন্য নারীদের দাওয়াত দিতে পারবে। ‍পুরুষদের দাওয়াত দিতে পারবে না, কারণ তাদের প্রতি পুরুষরা যৌন কাতরতা বশত যেনো পাপাচারে লিপ্ত না হয়ে যায়! নারী নেতৃত্ব বিষয়ে পশ্চিমা মুসলিমদের মাঝে তিনটি অবস্থা দেখা যায়।

১. যেহেতু অধিকাংশ মসজিদে এখনো অভিবাসী পুরুষ স্থানীয় মসজিদ পরিচালনা করে, তাই কোন স্থানীয় নারীকে মসজিদ পরিচালনা বোর্ডের সদস্যা, কার্যনির্বাহী পরিচালিকা (আমীরাহ), আলেমা ও দাঈ হিসাবে পাওয়া যায় না যারা কমিউনিটিতে কথা বলবে।

২. কিছু আন্দোলন দেখা যায় নারীদের নামাজের ঈমাম বানানোর দাবীতে। নারী-পুরুষের মিশ্র জামায়াতে নামাজের ইমামতি করা ও শুক্রবারের নামাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে এদের কিছু কার্যক্রম দেখা গেছে। তবে অতীতে ইসলামের শরীয়াহ আইনের এরকম ঘটনার পূর্ব নজির বা বৈধতা না থাকার অভাবে মূলধারার মসজিদগুলোতে এই ব্যাপারে কোনো আকর্ষণ নেই।

৩. কিছু কিছু মসজিদ কমিটিতে দেখা যায় বোনদের বোর্ড সদস্যা, কার্যনির্বাহী পরিচালিকার (আমিরাহ) অধিকার দিচ্ছে। নারী দাঈদের নারী ও পুরুষদের মিশ্র জমায়েতে বক্তব্য প্রদানের সুযোগ দিতে দেখা যাচ্ছে। তারা ইসলামী শরীয়াহ আইনের কিছু ঐতিহাসিক ঘটনার পুনরুজ্জীবন ঘটাচ্ছে যাতে আধুনিকতার সাথে প্রাসঙ্গিক করে তোলা যায়।

নারী স্কলাররা নারী-পুরুষ উভয়ের কাছে ইসলামের দাওয়াত দিতে পারবে কিনা এ বিষয়ে আসমানী জ্ঞানের আলোকে আমি আলোচনা করবো। সেটা হলো নারী আলিমারা পুরুষ ও নারী উভয়কে ইসলামের দাওয়াত ও বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিতে পারবে। স্বাভাবিকভাবেই কিছু মানুষ আপত্তি জানাবে যে- ‘একজন নারী মিশ্র জনতার সামনে কথা বলা, কোন পুরুষকে ফতওয়া ও বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া ইসলাম সম্মত নয়’। সেই একই মানুষরা যখন একজন পুরুষ আলিম বাহিরে অন্য একজন নারীকে বিভিন্ন ইসলামিক পরামর্শ দেয় সেখানে কিন্তু নারীর ব্যক্তিগত, অভ্যন্তরীণ­ কিছু বিষয়ও থাকে তা নিয়ে তারা আপত্তি তুলে না। কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে এ সুবিধা দেয়া মুসলিম কমিউনিটিতে কখনো শোনা যায়নি বা দেখাও যায়নি। এখানেই আমাদের প্রথা নির্বাচনের সীমানা তৈয়ারে সংস্কৃতির ক্ষমতা বিরাজিত। কিন্তু এসব বিষয়ের সমাধান মানুষ কী করছে তার আলোকে নয় বরং ইসলাম কী বলছে তার অনুযায়ী হওয়া উচিৎ।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এসব নারী আলেমা, দাঈ ও শিক্ষিকা যারা নারী-পুরুষের মিশ্র জমায়েতে কথা বলে – এ ব্যাপারে ইসলাম কী বলে?

পবিত্র কুরআন আমাদের বলছে-

“আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা একে অপরের বন্ধু। তারা ভাল কাজের আদেশ দেয় আর অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করে। আর তারা সালাত কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। এদেরকে আল্লাহ শীঘ্রই দয়া করবেন, নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” (সুরা তাওবা: ৭১)

এই আয়াতে ইসলাম অনুশীলনের ব্যাপারে নারী-পুরুষ উভয়ের সমান অবস্থান রাখা হয়েছে। আয়াতটি আমাদের প্রশ্নের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপুর্ণ, কারণ এখানে আক্ষরিক অর্থেই বুঝানো হচ্ছে দাওয়াত দেওয়ার ক্ষেত্রে নারী পুরুষ উভয়ে সমান।

উমরা (রা) নারীদের ব্যাপারে আরব সমাজের সামগ্রিক পরিবর্তনের পুরো রূপরেখার সারনির্যাস তুলে ধরেন এভাবে-

“ইসলামপূর্ব জাহেলী যুগে আমরা নারীদের মোটেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করতাম না। কিন্তু যখন ইসলাম আসলো এবং আল্লাহ তাদের সম্মানের কথা ও অধিকারের কথা কুরআনে উল্লেখ করলেন তখন বুঝলাম আমাদের ওপর তাদের অধিকার রয়েছে।” (সহীহ বুখারী- ৫৮৪৩)

আয়েশা (রা) ছিলেন একাধারে ইসলামিক স্কলার, বিচারক, সুবক্তা। অনেকগুলো হাদিস আছে যেখানে প্রশ্নাতীতভাবে দেখানো যায় আয়েশা (রা) হচ্ছেন নারী স্কলারদের জন্য একজন মডেল। তিনি রাসুল (সা) এর গৃহে নয় বৎসর ধরে প্রশিক্ষিত হন। সাহাবীদেরও আলেম হিসেবে বিখ্যাত সাহাবী আবু মুসা আল আশয়ারী তাঁর সম্পর্কে বলেন:

“আমরা রাসূলের (সা) সাহাবীরা মাঝে-মধ্যে কিছু বিষয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে যেতাম। তখন আমরা আয়েশা (রা) কাছে যেতাম এবং এ সম্পর্কে প্রশ্ন করতাম। আমরা সব সময় তাঁর কাছ থেকে জ্ঞানের দিক থেকে যথাযথ সমাধান পেতাম।” (জামে আত তিরমিজী- ৩৮৮৩)

যুবাইর ইবনুল আওয়াম (রা) – যিনি উমর (রা) কর্তৃক নির্বাচিত ছয়জনের একজন; যারা তাঁর পরে খলিফা হওয়ার কথা ছিলো, তিনি আয়েশা (রা) সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য সুত্রে বলেন:

“আমি আল-কুরআন, ইসলামিক আইন, কবিতা ও আরব জাতির বংশ ও ইতিহাস বিষয়ে আয়েশা’র (রা) মত জ্ঞানী আর কাউকে দেখেনি।” (আল হাকিম: ৪/১১)

ইমাম যাহাবী অতীত ইরাকের সেরা তাবেয়ী ও বিখ্যাত মুসলিম স্কলারদের জীবনবৃত্তান্ত সম্বলিত একটি বইয়ে উল্লেখ করেন; আহনাফ বিন কায়েস বলেন:

“আমি আবু বকর, উমর, উসমান, আলী এবং তার পরবর্তী খালিফা ও বর্তমানে অনেকের বক্তব্য শুনেছি কিন্তু আয়েশা (রাঃ) এর মত এত উত্তম ও বাকপটুময় বক্তব্য আর কারো নিকট শুনিনি।” (সিয়ার আল-আলম আল-নুবালা)

এ বিষয়টি এখানেই শেষ হতে পারে এভাবে বলে যে, আয়েশা (রা) তো এসবে ব্যতিক্রম ব্যক্তিত্ব। ঠিক আছে, তবে আমি বলব এ যাবৎতকাল পর্যন্ত যেহেতু সাহাবীদের মধ্যে যারা শ্রেষ্ঠ এবং পরবর্তীতে মুষ্টিমেয় যারা খুব বিখ্যাত ছিলেন প্রকৃতপক্ষে তাদের মধ্যে আয়েশা (রা) ছিলেন অদ্বিতীয়া এবং তিনি বিশ্বাসীদের মাতা, সেহেতু তিনি স্বাভাবিকভাবে শ্রেষ্ঠত্বের মডেল এবং অন্যান্য নারীদের জন্য অনুসরণীয় উদাহরণ হবেন।

ইমাম ইবনে হাজার আসকালানি তার শ্রেষ্ঠ কর্ম ‘আল ইসাবা ফি তামইজ আস-সাহাবা’ গ্রন্থে এমন ১৫৪৩ জন নারী স্কলারদের কথা বলেছেন যারা ইসলামিক আইন, হাদিস ও আরবী সাহিত্যে সুপণ্ডিত ছিলেন।

ইলম দান প্রসঙ্গে রাসূলের (স) নাতি হাসানের (রা) মেয়ে নাফিসা বিনতে আল হাসান মসজিদে নববী ও তার পাশাপাশি কায়রোতে জনগণের সামনে বক্তব্য দেওয়ার কথা উল্লেখ আছে। এটা সুপ্রসিদ্ধ তথ্য যে, ইমাম তাইমিয়া, ইবনে হাজার আসকালানী, ইবন আল-জাওযী ও ইমাম আয-যাহাবীর মতো আলেমরাও নারী আলেমাদের থেকে ইলম হাসিল করেছেন। আপনাদের মধ্যে যারা এখনো নারীদের প্রতিভার প্রকাশ গ্রহণীয় নয় বলে মনে করেন, তাদের জন্য বলছি-

ইমাম আল-হাইছামি নারীদের নিয়ে একটি গল্প বলেন, যেই নারী উমরের (রা) শাসনামলে মদিনার বাজারে পুলিশি তত্ত্বাবধায়ন ব্যবস্থার দায়িত্বে কর্মরত ছিলেন। ইহাইয়া বিন আবি সালেম বলেন: আমি সামরা বিনতে নুহাইককে দেখলাম, যিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন। সামরা ছিলেন কঠোর হিজাবের মধ্যে, যার ঐ হিজাবী হাতে থাকতো হস্তবর্ম ও অন্য হাতে থাকতো চাবুক। তিনি মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করতেন আর অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করতেন আর এভাবে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতেন।

পুরো ইতিহাস জুড়ে আমাদের অধিকাংশ আলিম বলেছেন- যদি মহিলা আলিমের বক্তব্য যৌন উত্তেজক না হয় তাহলে তার বক্তব্য শুনতে দোষের কিছু নেই। যদিও মহিলা ও পুরুষ উভয়কে একে অপরের দিকে আকর্ষণীয় দৃষ্টি নিয়ে দীর্ঘক্ষণ তাকাতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু যদি বলা হয়, একজন মহিলা কোনো পুরুষের সামনে নসীহতপূর্ণ কথা বলতে পারবে না কারণ অনেকেই তার নিকট আকর্ষণীয় দৃষ্টিতে তাকাতে পারে। তাহলে তো বলতে হয়, একজন পুরুষও কোন মহিলার সামনে নসীহতপূর্ণ কথা বলতে পারবে না। কারণ মহিলারাও পুরুষদের প্রতি আকর্ষিত হয় এবং উভয়ে উভয়ের দিকে আকৃষ্টতার কারণে তাকানোকে তিরস্কৃত করা হয়।

মুসলিমরা এখন ইসলামের অতীত পাণ্ডিত্যপূর্ণ অবস্থান থেকে দূরে সরে রয়েছে। পাশাপাশি কয়েকটা নির্দিষ্ট গণ্ডিতে নিজেদের আবদ্ধ করে রেখেছে। তাই বলে, আমাদের প্রথাগত ইসলামিক আইনের যে প্রসিদ্ধ উৎস রয়েছে তা বর্তমানে যাপিত জীবনের বাস্তবতাকে সামনে রেখে অনুসরণযোগ্য আরেকটি পন্থাকে সমর্থন করে না বিষয়টা এমন নয়। সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো, আমরা ইসলামকে বর্তমানের আলোকে বিচার করি না। আমাদের ইসলাম বর্তমানের চেয়েও ব্যাপক ও বিস্তৃত। আমাদের এমন এক মহান প্রজন্ম ছিলো যারা কেবল সভ্যতার সাথে প্রাসঙ্গিক ছিলো তা-ই নয়, বরং তারও উর্ধ্বে সভ্যতার মানদন্ড নীতি নির্মাণ করতো।

আমাদের উপর বর্তমানে অনেক ঝড় বয়ে যাচ্ছে, যার জন্য অনেক সংগ্রাম করতে হচ্ছে। ইসলাম আমাদের সকল সমস্যা নিয়ে কথা বলতে পারে এবং সমাধান দিতেও সক্ষম। আমাদের এমন নৈতিক ভারসাম্যপূর্ণ প্রজন্ম তৈরি করতে হবে যারা নারীবাদ, অর্থনীতি, বর্ণবাদ, শ্রেণীবৈষম্য, রাজনৈতিক দুর্নীতি, জুলুম অথবা নীতি ও নৈতিকতা সম্পর্কিত অন্যান্য সমস্যা সমাধানে ইসলামকে সঠিকভাবে কাজে লাগাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *