ইসলাম, সুবিচার ও রাজনীতি

ইসলাম, সুবিচার ও রাজনীতি

[এই লেখাটি প্রফেসর ড. আহমাদ বিন সা’দ হামদান আল-গামিদী রচিত “তাজদীদুল ফিকহুস সিয়াসী ফীল মুজতামায়াল ইসলামী” গ্রন্থ থেকে অনূদিত। এখানে যা আলোচিত হয়েছে, আমাদের বর্তমান পরিস্থিতিতে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আল-গামিদী এখানে রাজনীতির ব্যাপারে প্রাসঙ্গিক চারটি ইসলামিক মূলনীতি বা কা’ঈদা নিয়ে আলোচনা করছিলেন। অনূদিত অংশটি তার তৃতীয়টি। অনুবাদ করেছেন আসিফ সিবগাত ভূঞা।]

***

যেখানে সুবিচার, সেটাই আল্লাহর বিধান (حيث كان العدل ثم شرع الله)

সুবিচার (আদল): প্রত্যেককে প্রাপ্য অনুযায়ী বুঝিয়ে দেয়া এবং তা থেকে কিছু না কমানো। কোনো নিকটজনকে স্বজনপ্রীতি দেখানো যাবে না, আর দূরের কারও প্রতি জুলুম করা যাবে না।

আমাদের রব আযযা ওয়া জাল্ল সুবিচার করতে আদেশ করেছেন এবং উৎসাহ দিয়েছেন। বিপরীতটাকেও — অর্থাৎ জুলুম করা বা অত্যাচার-নিপীড়ন করা — নিষেধ করেছেন এবং এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন:

“নিশ্চয়ই আল্লাহ আদেশ করেন সুবিচার, ভালো আচরণ ও নিকটাত্মীয়দের দান করার ব্যাপারে এবং নিষেধ করেন অনৈতিকতা, মন্দ চরিত্র ও সীমলংঘন করাকে। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন যাতে তোমরা স্মরণে রাখো।”

[সূরা নাহল: ৯০]

মানুষের মাঝে সবার আগে যাদের উপর সুবিচারের দায়িত্ব, তারা হলেন মানুষের অধিপতি ও নেতারা, যাদের হাতে জাতির নেতৃত্ব সমর্পিত হয়েছে।

আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন:

“নিশ্চয়ই আল্লাহ আদেশ করেন যে তোমরা আমানতসমূহ এর প্রাপকদের বুঝিয়ে দেবে এবং যখন মানুষের মাঝে বিচার করবে তখন সুবিচার করবে। কত উত্তম যা দিয়ে আল্লাহ তোমাদের উপদেশ দেন! নিশ্চয়ই আল্লাহ সব শোনেন, সব দেখেন।”

[সূরা নিসা: ৫৮]

সুবিচারকারী অধিপতিদের কর্তৃত্বে সমাজ নিরাপদ ও শান্তিতে থাকে, ফলে জীবন স্থিতিশীলভাবে এগিয়ে যেতে পারে। অপরদিকে অত্যাচারী শাসকদের অধীনে সমাজ থাকে ভয় বিহ্বল, ফলে জীবন হয় পর্যুদস্ত এবং অগ্রগতি নস্যাৎ হয়ে যায়।

পশ্চিমা দেশগুলোর জীবনযাত্রার সাথে মুসলিম দেশগুলোর জীবনযাত্রার তুলনা করলে আমরা দেখবো, পশ্চিমা দেশগুলোতে জীবন অনেক অগ্রগামী ও উন্নত। অপরদিকে মুসলিম দেশগুলোতে জনজীবন পিছিয়ে পড়েছে এবং হোঁচট খাচ্ছে। অবস্থা এতটাই সঙ্গীন যে এই মুসলিম দেশগুলোকে এখন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পাশ্চাত্যের দেশগুলোর মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হচ্ছে। কারণ, তাদের দেশে রয়েছে সুবিচার এবং মুসলিম দেশগুলোতে জুলুম।

আল্লাহ সুবহানাহু সুবিচারের আদেশ দিয়েছেন, কিন্তু সুবিচার হাসিলের কোনো নির্দিষ্ট পথ বা মাধ্যম বাতলে দেননি। এ থেকে বোঝা যায়, সুবিচার প্রতিষ্ঠার উপায় ও পদ্ধতিসমূহ সুনির্দিষ্ট নয়।

যারা ধর্মের বাস্তবতাকে ঠিকমতো জানেন না তাদের মনে একটা ধারণা কাজ করে যে সুবিচার প্রতিষ্ঠা করার পদ্ধতির ব্যাপারে ধর্মের সুনির্দিষ্ট দলীল বা প্রমাণ থাকতে হবে। এই দলীল ঠিক করে দেবে কীভাবে সুবিচার কায়েম করা যায় এবং এভাবে ছাড়া সুবিচার প্রতিষ্ঠার আর সকল পদ্ধতিই নিষিদ্ধ। তারা মনে করছেন, শরীয়ার সকল লক্ষ্য ও সেসব লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যমগুলো শরীয়ার নির্দিষ্ট বিধান দিয়ে নিয়ন্ত্রিত (তাওকীফি)। এই ধারণা মাথায় নিয়ে তারা উম্মতের জন্য সে জিনিসগুলোকে সংকুচিত করে দিয়েছেন, যা আদতে ছিলো বিস্তৃত। এই সংকীর্ণ ধারণার অশুভ প্রভাব পড়েছে সুবিচার প্রতিষ্ঠার কাজে।

শরীয়ার বাস্তবতার ব্যাপারে জ্ঞানের এই ঘাটতি আসলে নতুন কিছু নয়। হাজার বছরও আগেও উম্মতের কতিপয় ফুকাহার (ইসলামী আইনবেত্তা) চিন্তার মাঝে বুঝাপড়ার এই সীমাবদ্ধতা দেখতে পাওয়া যায়।

ঠিক এরকম একটি বিষয়ে ইমাম ইবনে আকীল [৪০১ – ৪৯৩ হি.] ও তাঁর সময়ের কয়েকজন ফুকাহার মাঝে আমরা বিতর্ক হতে দেখি। বিতর্কের বিষয়বস্তু হলো— কোনো প্রদেশের গভর্নর কীভাবে তার এলাকায় সুবিচার কায়েম করবেন। ওই ফুকাহাদের ধারণা ছিলো— সুবিচার কায়েমের পদ্ধতি অবশ্যই শরীয়ার মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত হতে হবে এবং এর পেছনে শরীয়ার সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকতে হবে।

তাদের এই ধারণাকে ইবনে আকীল নাকচ করে দেন এবং বলেন: যে কোনো পদ্ধতি — যা দিয়ে সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা যায় এবং শরীয়া যাকে নিষেধ করেনি — শরীয়া সমর্থিত; যদিওবা সে ব্যাপারে শরীয়তে স্পষ্ট কোনো ভাষ্য নাও থাকে।

ইবনুল কায়্যিম এই বিতর্কটি তাঁর লেখায় উল্লেখ করেছেন এবং ইবনে আকীলের মতকে সমর্থন জানিয়েছেন।

ইবনুল কায়্যিম [৭৯১ – ৮৫১ হি.] শরীয়ার বিধানগুলোকে কীভাবে বুঝতে হবে তা নিয়ে এক জায়গায় কথা বলছিলেন। কট্টরপন্থী অনেক আলেমের দৃষ্টিভঙ্গির চেয়েও শরীয়ার বিধানগুলো যে আসলে আরো বেশি প্রশস্ত, সে প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন:

“ইবনে আকীল বললেন: রাজনীতি (সিয়াসাহ) করাটা তো অবধারিত, কোনো নেতা (ইমাম) তা থেকে মুক্ত নন। তখন আরেকজন বললেন: শরীয়া যেটাকে সম্মতি দিয়েছে সেটা ছাড়া কোনো রাজনীতি হতে পারে না।

তখন ইবনে আকীল বলেন: রাজনীতি হলো সেসব কাজ যার মাধ্যমে মানুষ কল্যাণের সবচেয়ে কাছে থাকে এবং অন্যায়-অবিচার থেকে সবচেয়ে দূরে থাকে; যদিও সেটার ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল (সা.) স্পষ্ট বিধান নাও দিয়ে যান এবং এ ব্যাপারে কোনো ওহী নাযিল নাও হয়ে থাকে। সুতরাং, তুমি যে কথাটা বললে যে শরীয়া যেটাকে সম্মতি দিয়েছে সেটা ছাড়া কোনো রাজনীতি হতে পারে না — এই কথা দিয়ে যদি তুমি এটা বুঝিয়ে থাকো যে শরীয়ার ভাষ্য বা টেক্সটকে লঙ্ঘন করা যাবে না, তাহলে ঠিক আছে।

কিন্তু তোমার কথার মানে যদি এটা হয়ে থাকে যে শরীয়া যেভাবে বলেছে সেভাবেই রাজনীতি হতে হবে, তাহলে এটা ভুল এবং এর মাধ্যমে সাহাবীদের ভুল প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। কেননা, খুলাফায়ে রাশিদীনদের কাছ থেকে এমন অনেক অনেক মৃত্যুদণ্ড ও শাস্তির বিধান আমরা পাই, যা ইতিহাস ও জীবনী নিয়ে গবেষণাকারী আলেমগণ অস্বীকার করেন না। আর সব বাদ দিলেও কোরআনের কপিগুলো পুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্তটির কথা অন্তত উল্লেখ করা যায়, যা তারা কেবল কল্যাণের কথা চিন্তা করেই করেছেন। একইভাবে আলী (রা.) কর্তৃক কতিপয় যিন্দিক বা ধর্মদ্রোহীকে পুড়িয়ে মারা, বা উমর (রা.) কর্তৃক নাসর বিন হাজ্জাজকে নির্বাসিত করার কথাও বলা যায়।”

ইবন আকীলের এই বক্তব্য উল্লেখ করে ইবনুল কায়্যিম বলেন: “এটা (রাজনীতি সংক্রান্ত চিন্তা) হলো এমন এক জায়গা যেখানে পা হড়কে যায়, চিন্তাভাবনা বিপথে চলে যায়। এ এক সংকীর্ণ জায়গা, কঠিন এক লড়াই। বহু লোক এতে বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে। তারা সীমালঙ্ঘন করেছে এবং অধিকারসমূহকে খর্ব করেছে। পাপী লোকদের তারা অনাচারের সাহস যুগিয়েছে। তাদের এই সংকীর্ণ চিন্তার ফলে শরীয়া হয়ে পড়েছে সীমিত যা বান্দাদের কোনো কল্যাণে আসে না। অন্যের উপর নির্ভর করে চলতে হয় এই শরীয়াকে। এভাবে তারা নিজেদের জন্যই সত্যকে জানা এবং তাকে বাস্তবায়ন করার সকল পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে এবং নাকচ করে দিয়েছে। যদিও তারা এবং অন্যরা জানে যে বাস্তবতাটা আসলে কী। কিন্তু তারপরেও তারা সেই সত্যকে অস্বীকার করছে এই মনে করে যে তা শরীয়ার মূলনীতির বিরুদ্ধে যায়।

আল্লাহর শপথ, আল্লাহর রাসূল (সা.) যে শরীয়া আমাদের দিয়েছেন তার সাথে এর কোনো বিরোধ নেই, বিরোধ হচ্ছে তারা যেভাবে শরীয়াকে বুঝেছে ও চিন্তা করেছে তার সাথে। তাদের এ ভুলের কারণ হলো শরীয়াকে বোঝার ব্যাপারে তাদের সীমাবদ্ধতা এবং একইসাথে বাস্তবতাকে বোঝার ব্যাপারেও সীমাবদ্ধতা। এই ভুলের উপর থেকেই তারা একটাকে আরেকটার উপর প্রয়োগ করে বসেছে।

রাজনৈতিক হর্তাকর্তারা যখন এই ব্যাপার দেখলো এবং বুঝলো যে এই আলেমরা শরীয়াকে যেভাবে বুঝেছে সেভাবেই মানুষকে চলতে হবে, তখনই তারা সুযোগ বুঝে রাজনৈতিক দুর্ভিসন্ধি থেকে এক বিরাট অকল্যাণ ও অরাজকতা বিস্তার করলো। এতে পরিস্থিতি হয়ে গেল সঙ্গীন, সমস্যার সমাধান হয়ে পড়লো অসম্ভব। ফলে আলেমদের পক্ষে শরীয়ার জ্ঞান দিয়ে মানুষকে এই অচলাবস্থা থেকে উদ্ধার করে আনা সম্ভবপর রইলো না।

এই কট্টর গোষ্ঠীর আলেমদের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ালো আরেক গোষ্ঠী, যারা আবার অতি ছাড় দেয়ার পক্ষে। ফলে তারা এমনসব জিনিসের বৈধতা দেয়া শুরু করলো, যার বৈধতা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) বিধান নাকচ করে দিয়েছে। আল্লাহ তার নবীর (সা.) কাছে ও তার কিতাবের মাধ্যমে যে শরীয়া পাঠিয়েছেন, তা বোঝার ব্যাপারে এই উভয় দলই ভুল করেছে। আল্লাহ তাঁর রাসূলদের (আ.) ও কিতাবসমূহকে এজন্যই পাঠিয়েছেন যাতে মানুষ সেই সুবিচার ও ভারসাম্য নিয়ে দাঁড়াতে পারে, যা দিয়ে সকল আসমান ও জমিন দাঁড়াতে পারছে। অতএব, যেখানেই সুবিচারের চিহ্ন মিলবে সেখানেই আল্লাহর শরীয়া ও দ্বীন।”[1]

এই দুই বিরাট আলেমের এই চিন্তা থেকে এটাই সাব্যস্ত হলো যে শরীয়ার কিছু লক্ষ্য (মাকাসিদ) রয়েছে। এর মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণটি হলো ‘সুবিচার কায়েম করা’। তাই যেখানেই সুবিচার পাওয়া যাবে সেখানেই আল্লাহর শরীয়া বা বিধান নিহিত, সে ব্যাপারে যদি কোরআন-হাদীসের স্পষ্ট টেক্সট বা ভাষ্য নাও থাকে।

একই সাথে তারা এও ব্যক্ত করলেন যে এমন অনেক আলেম রয়েছেন যারা শরীয়াকে সঠিকভাবে বুঝে উঠতে পারেননি। ফলে এমন সব ফতোয়া বা সিদ্ধান্ত তাদের নিকট থেকে এসেছে, যা শরীয়ার লক্ষ্যসমূহের বিরুদ্ধে যায়। যদিও তারা ভেবেছেন, তাদের এই সিদ্ধান্ত আল্লাহর শরীয়া মোতাবেকই হয়েছে। ফলে শরীয়ার নাম করেই তারা শরীয়াকে লঙ্ঘন করেছেন।

প্রত্যেক যুগেই উম্মতকে এই সমস্যার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে। সব কালেই আপনি এমন কাউকে পাবেন যার কোরআন-হাদীসের বুঝজ্ঞান শরীয়ার এই লক্ষ্যগুলোর বিপরীত। তারপর সে ব্যক্তি এমন ফতোয়া দিয়েছেন যা শরীয়াকে বিকৃত করে এবং মানুষকে আল্লাহর দ্বীনে আসতে বাঁধা দেয়। অথচ তিনি মনে করছেন তিনি দ্বীনকে খুব সাহায্য করলেন। উম্মত আজ পর্যন্ত সেই সমস্যায় ধুঁকছে যেমনটা ইবনুল কায়্যিম বললেন: “ফলে আলেমদের পক্ষে শরীয়ার জ্ঞান দিয়ে মানুষকে এই অচলাবস্থা থেকে উদ্ধার করে আনা সম্ভবপর রইলো না।”

ইবনে আকীলের কথা অনুযায়ী— উম্মতের রাজনীতির প্রতিটি ইস্যুতে কোরআন-হাদীসের ভাষ্য থাকতে হবে, এমন নয় মোটেও। কেননা রাজনীতি হলো এমন এক পার্থিব বিষয়, যা প্রতিটি নতুন উদ্ভুত পরিস্থিতির সাথে বদলায়। এতে যে জিনিসটা দরকার তা হলো মানুষের মাঝে সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা। এটি সেসব উদ্দেশ্যের মাঝেই পড়ে যায়, যা দ্বীন নিজেই নিয়ে এসেছে এবং এরপর এটি অর্জনের জন্য কোনো নির্দিষ্ট অবয়ব ঠিক করে দেয়নি, যা দিয়ে সুবিচার কায়েম হবে। কেননা মানুষের জীবনধারা পরিবর্তনশীল। তাই মানুষ কোন উপায়ে সুবিচার কায়েমের এই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছবে, সে ব্যাপারে মানুষকে স্বাধীনতা দিয়ে দেয়া হয়েছে। যে পথেই এই লক্ষ্য অর্জিত হোক না কেন সেটাই আল্লাহর বিধান— সেটা নিয়ে যদি কোরআনের কোনো আয়াত নাও থাকে বা কোনো হাদীস নাও পাওয়া যায়। আমরা সুবিচার প্রতিষ্ঠার এই সফল পদ্ধতিকে রাজনীতি বা অন্য যে কোনো নামে ডাকতে পারি— নামটা বড় কথা নয়, কী বোঝানো হচ্ছে সেটাই আসল।

এজন্যই ইবনে আকীল বলেছেন: “রাজনীতি হলো সেসব কাজ যার মাধ্যমে মানুষ কল্যাণের সবচেয়ে কাছে থাকে এবং অন্যায়-অবিচার থেকে সবচেয়ে দূরে থাকে— যদি সেটার ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল (সা.) স্পষ্ট বিধান নাও দিয়ে যান এবং এ ব্যাপারে কোনো ওহী নাযিল নাও হয়ে থাকে।”

কিন্তু বহু আলেমই এই বাস্তবতাটা বোঝেন না এবং সেসব চিন্তাভাবনা বা ইজতিহাদকে নাকচ করে দেন, যে বিষয়ে সরাসরি কোনো কোরআন-হাদীসের ভাষ্য আসেনি। তাদের ধারণা প্রতিটি ইস্যুতেই কোরআন-হাদীসের একটি নির্দিষ্ট ভাষ্য থাকা লাগবে। এই ধারণা থেকেই আল্লাহর দ্বীনে আসার পথে বাঁধা তৈরি করে ফেলা হয়, যেমনটি ইবনুল কায়্যিম বললেন: “বহু লোক এতে বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে। তারা সীমালঙ্ঘন করেছে এবং অধিকারসমূহকে খর্ব করেছে। পাপী লোকদের তারা অনাচারের সাহস যুগিয়েছে। তাদের এই সংকীর্ণ চিন্তার ফলে শরীয়া হয়ে পড়েছে সীমিত, যা বান্দাদের কোনো কল্যাণে আসে না। অন্যের উপর নির্ভর করে চলতে হয় এই শরীয়াকে।”

এর পেছনে কারণটা হলো আল্লাহর শরীয়াকে বোঝার মধ্যে ঘাটতি থাকা, যদিও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মনে করছেন তিনি আল্লাহর শরীয়াকে খুব ভালোই বোঝেন।

ইবনুল কায়্যিম এই সুবিচারপূর্ণ রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেছেন: “আল্লাহর শপথ, আল্লাহর রাসূল (সা.) যে শরীয়া আমাদের দিয়েছেন তার সাথে এর কোনো বিরোধ নেই, বিরোধ হচ্ছে তারা যেভাবে শরীয়াকে বুঝেছে ও চিন্তা করেছে তার সাথে।”

তারপর তিনি বলেছেন: “তাদের এ ভুলের কারণ হলো শরীয়াকে বোঝার ব্যাপারে তাদের সীমাবদ্ধতা এবং একইসাথে বাস্তবতাকে বোঝার ব্যাপারেও সীমাবদ্ধতা। এই ভুলের উপর থেকেই তারা একটাকে আরেকটার উপর প্রয়োগ করে বসেছে।”

আল্লাহ আপনাকে রহম করুন, হে ইবনুল কায়্যিম! আজকের যুগের বহু মুফতির কাণ্ডজ্ঞান যদি আপনি দেখতেন!

রেফারেন্স:

[1] ই’লামুল মুওয়াক্কিঈন (৪/২০৩); আত-তুরুকুল হুকমিয়্যাহ (১২)।

এ ধরনের আরো লেখা