'রিক্লেইমিং দ্যা মস্ক' বইয়ের ধারাবাহিক অনুবাদ: পর্ব-১

রিক্লেইমিং দ্যা মস্ক: কেন এই বই?

[এডিটর’স নোট: নারীদের মসজিদে প্রবেশাধিকার নিয়ে ড. জাসের আওদা লিখিত একটি আরবী বইয়ের অনুবাদ ইতোপূর্বে আমরা শুরু করেছিলাম। তারপর মূল লেখক আরো গুছিয়ে ‘Reclaiming the Mosque: The Role of Women in Islam’s House of Worship ‘ শিরোনামে এর ইংরেজি সংস্করণ প্রকাশ করেন। ইংরেজি সংস্করণটি যেহেতু আরো সাজানো-গোছানো এবং মূল লেখকই এটি রচনা করেছেন, তাই আমরাও ইংরেজি বইটি থেকে অনুবাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সিএসসিএসের পাঠকদের জন্য আজকে প্রথম অধ্যায়ের অনুবাদ প্রকাশ করা হলো। অনুবাদ করেছেন জোবায়ের আল মাহমুদ।]

*****

যুক্তরাজ্যের মুসলিম নারীদের নিয়ে কয়েক বছর আগে ব্রিটিশ টিভি চ্যানেল-৪ তাদের ‘ডিসপ্যাচেস’ প্রোগ্রামে একটি ইন্টারেস্টিং পর্ব সম্প্রচার করে। লন্ডনের মসজিদগুলোতে মুসলিম নারীদের ভূমিকা এবং মুসলিম সমাজে নারীদের অবদান নিয়ে তারা অনুসন্ধান চালায়। তারা যেসব মসজিদে খোঁজ নিয়েছে, সেগুলোর বেশিরভাগেই নারীদের কোনো ভূমিকা নেই বলে দেখা গেছে! এই ফলাফল তাদের জন্য ছিলো বিস্ময়কর এবং দর্শক হিসেবে আমার জন্য ছিলো বিব্রতকর। নারীদের এই দুরবস্থার কারণ হলো, মসজিদে তাদের প্রবেশাধিকারই নাই।

প্রোগ্রামটিতে দেখা যায়, মুসলিম নারীদের প্রচলিত ইসলামী পোশাক পরিধান করেই একজন নারী প্রতিবেদক লন্ডনের কয়েক ডজন মসজিদে প্রবেশ করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু দরজাতেই তাকে বাধা দেওয়া হচ্ছিলো। দুয়েকটি মসজিদে ভদ্রভাবে না করা হলেও বেশিরভাগ মসজিদে অভদ্র আচরণ করে তাকে বলে দেওয়া হচ্ছিলো, ‘এখানে নারীদের প্রবেশ নিষেধ।’ কোনো কোনো মসজিদে দেখা গেলো, কেউ একজন দরজায় সাঁটানো একটি নির্দেশনা দেখিয়ে দিচ্ছে, যেখানে লেখা আছে— ‘শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য।’

ডকুমেন্টারিতে বলা হয়েছে, লন্ডনের প্রায় ৮ শতাধিক মসজিদে নারীদের প্রবেশাধিকার নাই। এগুলোর মধ্যে যেসব মসজিদ কমিটির নেতৃবৃন্দ সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হয়েছেন, তারা ‘স্থান সংকুলান না হওয়াকে’ এর প্রধান কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন। যখন প্রতিবেদক প্রশ্ন করলেন— “যেসব মসজিদে পর্যাপ্ত জায়গা আছে, সেগুলোতেও কেন নারীদের অবাধ প্রবেশাধিকার নাই? তাহলে মসজিদের কাজটা আসলে কী?” তখন এসব প্রশ্নের কোনো জবাব তারা দিতে পারেননি।

এই ডকুমেন্টারির কারণে যুক্তরাজ্যসহ সারাবিশ্বে ইসলামের ভাবমূর্তি নিশ্চয় ক্ষুণ্ন হয়েছে। যে কোনো বিবেচনাতেই এটি আমার জন্য ছিলো অত্যন্ত পীড়াদায়ক। শায়খ মোহাম্মদ গাযালীর একটি কথা তখন আমার মনে পড়ছিলো। তিনি বলেছিলেন, “আদর্শ হিসেবে ইসলাম যতটা চমৎকার, এর অনুসারীদের আচরণ ততটাই বাজে!” ‘Muslim Women between Backward Traditions and Modern Innovations’[1] শীর্ষক বইয়ে তিনি মুসলিম সমাজে প্রচলিত কয়েক ডজন ভিত্তিহীন সাংস্কৃতিক রসম-রেওয়াজের উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, এগুলো মুসলিম নারীদের ব্যাপারে এবং সমাজে তাদের ভূমিকা পালনের ব্যাপারে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করেছে। বইটির ভূমিকায় শায়খ গাযালী উম্মে ওয়ারাকা (রা) নামের একজন নারী সাহাবী কর্তৃক বর্ণিত একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন। উম্মে ওয়ারাকা (রা) তাঁর ঘরের সাথে লাগোয়া মসজিদটিতে নারী-পুরুষের সম্মিলিত জামায়াতে ইমামতি করতেন।[2] তিনি আরো কিছু ঘটনার উল্লেখ করেছেন, যেগুলো থেকে দেখা যায়— নারী সাহাবীগণ মসজিদে নববীতে নামায আদায় করতেন, স্থানীয় ও আঞ্চলিক বাজারে ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন, কোরআন-হাদীস শিক্ষা দিতেন, দান-সদকা করতেন, এমনকি স্বয়ং মহানবী (সা) ও পুরুষ সাহাবীদের পাশে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ পর্যন্ত করতেন। নারীদের সামাজিক অবস্থানের ক্ষেত্রে ইসলামের প্রাথমিক যুগ ও বর্তমানের মাঝে কী বিশাল ব্যবধান, সেটাই ভাবছি!

গত কয়েক বছরে এই ইস্যুতে অসংখ্য গবেষণা প্রবন্ধ, সোশ্যাল মিডিয়া রিপোর্ট এবং টেলিভিশন প্রোগ্রাম হয়েছে। সবগুলোতে কাছাকাছি ধারণা ও ফলাফল ওঠে এসেছে। দুনিয়ার সবখানে এখন মসজিদে নারীদেরকে কোণঠাসা করে রাখার বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু হয়েছে।

এ বিষয়ের উপর যথেষ্ট গবেষণামূলক তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেছে আমেরিকান ফিল্ম ‘UnMosqued’।[3] যে গবেষণার উপর ভিত্তি করে এটি তৈরি করা হয়েছে, তাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শতাধিক মসজিদ ও সহস্রাধিক ব্যক্তির সম্পৃক্ততা ছিলো। এই ডকুমেন্টারি থেকে দুটি উদ্বেগজনক ফলাফল পাওয়া যায়:

(১) যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের সংখ্যা বাড়লেও মসজিদে উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাচ্ছে।

(২) আমেরিকার যেসব মসজিদে নারীদের প্রবেশাধিকার রয়েছে, সেগুলোতেও তাদেরকে ‘দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

পরিসংখ্যানের বরাতে এই ফিল্ম হতে জানা যায়, আমেরিকান মসজিদগুলোতে পুরুষদের তুলনায় নারী ও শিশুদের উপস্থিতি খুবই কম। দেশটির দুই-তৃতীয়াংশ মসজিদে নারীদের প্রবেশাধিকার থাকলেও পার্টিশন, দেওয়াল বা ডিভাইডার দিয়ে নারীদের নামাযের স্থানটি আলাদা করা থাকে। দিন দিন এই প্রবণতা বাড়ছে। এছাড়া আরেকটি লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, নারীদের নামাযের স্থানটি সবসময় পুরুষদের চেয়ে নিম্নমানের হয়ে থাকে। তাদের মতে, আরব অভিবাসীদের তৈরি মসজিদের চেয়ে আফ্রিকান অভিবাসীদের তৈরি মসজিদগুলো নারীদের জন্য তুলনামূলকভাবে উদার ও সহনশীল। তারা আরো বলেছে, নারীদের কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা মসজিদ কর্তৃপক্ষগুলো তেমন একটা চিন্তা করে না। এতে গবেষকরা আরো দেখিয়েছেন— যেসব মসজিদ নারীদের জন্য যত বেশি অনুকূল, সেসব মসজিদ তত বেশি সমাজসেবা কার্যক্রমে নিয়োজিত। এসব মসজিদ আন্তঃধর্মীয় অনুষ্ঠানও বেশি বেশি আয়োজন করে। শিশু ও তরুণদের অংশগ্রহণও সেসব মসজিদে বেশি।

এই পরিস্থিতিতে আমেরিকান বোনেরা বিভিন্ন সময় আমার কাছে জানতে চেয়েছে, জুমার নামাযসহ নিয়মিত নামায আদায় করার উদ্দেশ্যে শুধু নারীদের জন্য মসজিদ প্রতিষ্ঠার অনুমোদন ইসলামে আছে কিনা। আমার জবাব ছিলো, একটি গ্রহণযোগ্য মাযহাব অনুযায়ী এ ধরনের মসজিদ তৈরি করা ‘জায়েজ’। রাসূলের (সা) যুগে নারীদের ওয়াক্তিয়া জামায়াতে নারীর ইমামতি করার পরিষ্কার দৃষ্টান্ত রয়েছে। তবে খুতবার বাধ্যবাধকতা থাকায় জুমার নামায ছিলো এর ব্যতিক্রম। তাই আমি তাদেরকে পরামর্শ দিয়েছি, জুমার দিনে প্রথমে কোনো এক বোন খুতবা দিবে, তারপর দুই রাকাত জুমার পরিবর্তে চার রাকাত জোহর আদায় করবে। এটাই নিরাপদ। কথাটি আমি এ কারণেই বলেছি, যেহেতু ফিকাহর সাধারণ মূলনীতি ও মাকাসিদে শরীয়াহর দাবি হচ্ছে মসজিদগুলো হবে সামাজিক ঐক্য ও পারস্পরিক সহযোগিতার কেন্দ্র; অথচ বর্তমানে মসজিদগুলোতে শুধুমাত্র পুরুষরাই নামায আদায় করতে পারে। এ কারণে শুধু নারীদের জন্য মসজিদ প্রতিষ্ঠার আইডিয়াটা মন্দ হবে না।

তবে আমার বিবেচনায়, নারীদের একক মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা একটি অস্থায়ী সমাধান এবং এখনকার মসজিদগুলোতে নারীদেরকে কোণঠাসা করে রাখার বিরুদ্ধে এটি এক ধরনের প্রতিবাদ। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এটি আমাদের সমাজে বিভক্তি আরো বাড়াতে পারে। বাস্তবতা হলো, আমাদের অনেক মসজিদ ইতোমধ্যে বিভক্ত হয়ে আছে। যেমন, আরব, তুর্কি, ভারতীয়, আফ্রো-আমেরিকান ইত্যাদি ভৌগোলিক জনগোষ্ঠীগুলোর ভিন্ন ভিন্ন মসজিদ। আবার, সুন্নী, শিয়া, হানাফী, ইবাদী ইত্যাদি ধর্মীয় উপগোষ্ঠীর আলাদা মসজিদ। কিংবা, সালাফী, ইখওয়ানী, হিজবুতী, সুফী ইত্যাদি রাজনৈতিক মতাদর্শধারীদের স্বতন্ত্র মসজিদ। এ ধরনের সকল বিভাজন ইসলামে বিদয়াত হিসেবে বিবেচিত, যা নিষিদ্ধ। তা সত্ত্বেও নতুন আরেকটি বিভাজন হলো: পুরুষ ও নারীদের আলাদা মসজিদ।

তৎকালীন মসজিদে নববী ছিলো সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। আরব-আফ্রিকান-পার্সিয়ান-রোমান, নারী-পুরুষ-শিশু, মুসলিম, এমনকি অমুসলিম, এক কথায়, আগ্রহী যে কেউ মসজিদে নববীতে যাতায়াত করতে পারতো। এই বইয়ে আমরা এ ধরনের প্রচুর উদাহরণ দেখতে পাবো। যা থেকে বুঝা যায়, প্রাথমিক যুগে মুসলিম সমাজের পারস্পরিক একতা অনেক বেশি শক্তিশালী ছিলো। অন্যদিকে, এখনকার মসজিদগুলোর দিকে তাকালে আমরা বুঝতে পারি, সেই ঐক্যবোধ কতটা দুর্বল হয়ে পড়েছে!

মসজিদে নারীদের প্রবেশাধিকার ও ভূমিকা পালনের বিষয়টি কেবল যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের সমস্যা নয়, সত্যিকার অর্থে এটি একটি বৈশ্বিক সংকট। অতি অবশ্যই এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। মসজিদ হলো ইসলামের সামাজিক কেন্দ্র। একইসাথে তা আধ্যাত্মিক কেন্দ্রও বটে। এটি ইসলামের নির্দেশনা জানা, বুঝা ও জ্ঞান চর্চার জায়গা এবং ধর্মীয় বন্ধন ও পারস্পরিক সম্পর্ক শক্তিশালী করার প্রতিষ্ঠান। অথচ মুসলিম উম্মাহর অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে এ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।

সাধারণত কোনো অমুসলিম মসজিদে প্রবেশ করতে চাইলে তার সাথে বাজে আচরণ করা হয়। এমতাবস্থায় তার মধ্যে যদি এ ধারণা জন্মে— ইসলাম অমুসলিম ও নারীদেরকে ভালো চোখে দেখে না, তাদের অধিকার ও আত্মমর্যাদাকে অস্বীকার করে, তাদের প্রতি ন্যায়বিচার ও সহমর্মিতার দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে না; তাহলে তাকে দোষ দেওয়া যায় না।

এসব কারণে আমি ইসলামের মূল উৎসগুলোর উপর ভিত্তি করে ফিকাহর দৃষ্টিতে মসজিদে নারীদের অবস্থান ও কার্যক্রম নিয়ে গবেষণা করা ও লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ‌‘ইউরোপিয়ান কাউন্সিল ফর ফতওয়া অ্যান্ড রিসার্চ’ (ইসিএফআর) শীর্ষক প্রতিষ্ঠানটির আমি একজন সদস্য। ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠানটির নিয়মিত বার্ষিক সভার জন্য আমি একটি গবেষণা প্রবন্ধ লিখেছিলাম। এর মাধ্যমেই এই বই লেখার সূচনা ঘটে। ওই সভার আলোচ্য বিষয় ছিলো “ইউরোপের মুসলিম নারী ও তাদের প্রয়োজন।” সেখানে উপস্থাপিত আমার প্রবন্ধটির উপর ভিত্তি করে কাউন্সিল নিম্নোক্ত সিদ্ধান্তগুলো ঘোষণা করে:

  • মসজিদে নারীদের প্রবেশাধিকার রোধ করা যাবে না।
  • মুসলিম নারীদেরকে মসজিদে যেতে উৎসাহ প্রদান করতে হবে।
  • মসজিদে নারী-পুরুষের নামাযের স্থানকে পৃথক করার উদ্দেশ্যে মাঝখানে দেওয়াল, পার্টিশন বা ডিভাইডার দেওয়া রাসূলের (সা) সুন্নতবিরোধী।
  • মসজিদের অভ্যন্তরে নারীদের সাথে কোনো প্রকার দুর্ব্যবহার ও হয়রানি করা যাবে না।
  • কোনো অমুসলিম নারী হেডস্কার্ফ পরিধান করুক বা না করুক, মোটামুটি শালীন পোশাক পরে মসজিদ পরিদর্শন করতে চাইলে তাকে অনুমতি দিতে হবে।
  • নারীরা মসজিদে ইতেকাফ করতে পারবে এবং মসজিদে অবস্থানরত অন্যদের সাথে দেখা করতে পারবে।
  • একজন নারী মসজিদে নারী-পুরুষ উভয়ের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিতে পারবেন।
  • মসজিদ কমিটিসহ অন্যান্য সামাজিক কর্মকাণ্ডে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

এসব ইতিবাচক ঘোষণা আমাকে আশাবাদী করেছে। তাই আমি প্রবন্ধটিকে আরো বিস্তৃত করে আরবী ও ইংরেজি ভাষায়[4] সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিলাম। জুমার খুতবা এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাবলিক লেকচারগুলোতেও এই বিষয়ে বলা শুরু করলাম।

এসব প্রবন্ধ, খুতবা ও লেকচারগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ভাষায় এগুলো অনূদিত হয়েছে এবং বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।[5] এক পর্যায়ে নানা মাত্রার প্রতিক্রিয়াও আসতে থাকে। মসজিদে নারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের সুযোগ রয়েছে জেনে অনেকে স্বস্তি প্রকাশ করেন। আবার কেউ কেউ এসব প্রবন্ধে ‘নারীবাদী টোন’ পাওয়া যাচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ‘অনৈতিকতা’, ‘আধুনিকতা’ ইত্যাদিকে উৎসাহিত করার ঝুঁকি সম্পর্কেও তারা সতর্কতা প্রকাশ করেন এবং এ ধরনের লেখালেখির মাধ্যমে মসজিদগুলোতে ‘পুরুষদের নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ’ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন। যাহোক, এসব আবেগী ও অজ্ঞতাপ্রসূত প্রতিক্রিয়া থেকে বেরিয়ে এসে চলমান সংকট উত্তরণের জন্য বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণে আমাদের আরো বেশি মনোযোগী হওয়া জরুরি।

এ সংক্রান্ত আমার প্রবন্ধ এবং লেকচারগুলো থেকে ২০টি প্রশ্ন সাজিয়ে সেগুলোর উত্তর হিসেবে বইটির ২০টি অধ্যায় সাজানো হয়েছে। কেউ কেউ যেসব ভিত্তিহীন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, আশা করছি এই বইয়ের প্রশ্নোত্তরগুলোতে সেসবের জবাব পাওয়া যাবে। নির্ভরযোগ্য, যুক্তিসঙ্গত, নৈতিক ও মধ্যপন্থা অবলম্বন এবং ফিকাহর ভিত্তিতে মসজিদে নারীর ভূমিকা সম্পর্কে এখানে আলোচনা করা হয়েছে।

সর্বশেষ কথা হলো, বর্তমানে মুসলিম সমাজের সর্বত্র নারীদের যে দুরবস্থা বিদ্যমান, এর পেছনে ইসলামে নারীদের অবস্থান সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যা ও অযৌক্তিক মতামতের প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে। এটি একটি মারাত্মক সমস্যা। এ বিষয়ে আশু কর্তব্য নির্ধারণ ও এই অবস্থার আমূল পরিবর্তন জরুরি। আমি আশা করছি, এই পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বইটি ভূমিকা পালন করবে এবং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে এ বিষয়ে কথা বলা ও পরিবর্তনের জন্য উদ্যোগী হওয়ার সাহস যোগাবে।

মুসলিম নারীদের পরিপূর্ণ অংশগ্রহণ ও সক্রিয়তা ব্যতীত মুসলিম উম্মাহর প্রকৃত পুনর্জাগরণ এবং মানবজাতির প্রতি সত্যিকারের অবদান রাখা কখনোই সম্ভব নয়। শুধু মসজিদেই নয়, বরং ইসলামী জ্ঞানের জগত ও মুসলমানদের যাবতীয় কর্মকাণ্ডে মুসলিম নারীদের এই সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকতে হবে।

সকল প্রশংসা বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহ তায়ালার জন্য।

জাসের আওদা
অটোয়া, কানাডা
রবিউস সানী ১৪৩৮, জানুয়ারি ২০১৭

***

অনুবাদটির অন্যান্য পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

রেফারেন্স ও নোট:

[1] বইটি সর্বপ্রথম ১৯৯২ সালে আরবী ভাষায় মিশরের দারুল শুরুক এবং আলজেরিয়ার দারুল ইনতিফাদা থেকে প্রকাশিত হয়। তারপর থেকে অসংখ্যবার এটি পুনঃপ্রকাশিত হয়েছে। ২০০২ সালে বইটির অনুবাদ প্রকাশের সৌভাগ্য আমার হয়েছে। এর একটি সফট কপি পাওয়া যাবে www.jasserauda.net-এর বুকস সেকশনে।

[2] হাদীসটি নির্ভরযোগ্য। ১৯তম অধ্যায়ে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

[3] https://www.unmosquedfilm.com

[4] কয়েকটি প্রবন্ধ আরবী থেকে ইংরেজিতে প্রাথমিক অনুবাদ করে দেওয়ায় aboutislam.net টিমের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তাদের অনুবাদ থেকে আমি বইটির বিভিন্ন পর্যায়ে উপকৃত হয়েছি। আরেকটি বিষয় বলে রাখা ভালো, এই বইয়ে ব্যবহৃত কোরআনের আয়াত ও হাদীসের অনুবাদ আমার নিজের।

[5] দেখুন www.jasserauda.net

জাসের আওদা
জাসের আওদাhttp://www.jasserauda.net
মাকাসিদে শরীয়াহর উপর একজন শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ। ‘মাকাসিদ ইনস্টিটিউট গ্লোবাল’ নামক একটি থিংকট্যাংকের প্রেসিডেন্ট। ফিকহ কাউন্সিল অব নর্থ আমেরিকা, দ্য ইউরোপিয়ান কাউন্সিল ফর ফতওয়া এবং ফিকহ একাডেমি অব ইন্ডিয়ার সদস্য। পড়াশোনা করেছেন আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরবর্তীতে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ওয়েলস এবং কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ওয়াটারলু থেকে ইসলামী আইন ও সিস্টেম অ্যানালাইসিসের উপর দুটি পিএইচডি করেছেন। বিভিন্ন দেশের বেশ কটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। আরবী ও ইংরেজিতে প্রায় ২৫টি বইয়ের লেখক।

সাম্প্রতিক

এ ধরনের আরো নিবন্ধ