ইসলামী আন্দোলনের গোড়ার কথা
এডিটর’স নোট: ইসলামী আন্দোলন মানেই ইসলামের নামে রাজনীতি করা– এ জাতীয় একটা সংকীর্ণ ধারণা প্রচলিত রয়েছে। এ ধারণার আধিপত্যের ফলে ইসলামী আন্দোলনের গভীর ভাব ও ব্যাপ্তি অনেকটা আড়ালে পড়ে গেছে। ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ-বিপক্ষ – উভয় তরফেই এই সংকীর্ণ ধারণা তৈরি হয়েছে। দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ ইসলামী আন্দোলন নিয়ে বেশ ঋদ্ধ এই নিবন্ধটি লিখেছেন পাকিস্তান আমলের শুরুর দিকে। এটি তাঁর ‘জীবন দর্শনের পুনর্গঠন’ শিরোনামের গ্রন্থ হতে সংকলিত। গত শতাব্দীতে বাংলাদেশে যে কজন প্রাজ্ঞ ও জ্ঞানী ব্যক্তি জন্মলাভ করেছেন, অধ্যাপক আজরফ নিঃসন্দেহে তাঁদের মধ্যকার প্রথম সারির একজন। ন্যূনতম ভাষাগত সম্পাদনা করে সিএসসিএস-এর পাঠকদের জন্য নিবন্ধটি প্রকাশ করা হলো।
*****
‘সাম্প্রদায়িক’ ও ‘জাতীয়’ ইসলামী আন্দোলন
ইসলামী আন্দোলন কোনো সাম্প্রদায়িক আন্দোলন নয়। ধর্মকে ভিত্তি করে কোনো বিশেষ দেশের মানবসমাজকে দুই দলে ভাগ করার মূলে রয়েছে ভেদবুদ্ধি। ইংরেজ আমলে ধর্মকে ভিত্তি করে হিন্দু-মুসলমানকে পৃথক করার উদ্দেশ্য ছিল দুই পরস্পর বিবদমান শক্তির সতত দ্বন্দ্বের সুযোগে এ দেশে ইংরেজ শাসন কায়েম রাখা। ইসলামে এভাবে মানবজাতিকে ভাগ করার কোনো নীতি নেই। বলা বাহুল্য, ইসলামী আন্দোলন তাই কোনো সাম্প্রদায়িক আন্দোলন নয়। এর মূল উদ্দেশ্য শুধু মুসলিম জনসাধারণের মঙ্গল নয়– গোটা বিশ্বের মানবসমাজের বিকাশ ও অগ্রগতি তার সর্বপ্রধান উদ্দেশ্য।
ইসলামী আন্দোলনকে কোনো জাতীয় আন্দোলনের পর্যায়েও ফেলা যায় না। ইউরোপ থেকে আমদানি করা জাতীয়তাবাদের ভিত্তি অত্যন্ত ফাঁপা। ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক বা রক্ত-সম্বন্ধের উপর যে জাতীয়তার সৃষ্টি হয়, তার মধ্যে সর্বপ্রধান ফ্যাক্টর (factor) হলো একত্রে বাস করার আকাঙ্ক্ষা (will to live together)। এ মনস্তাত্ত্বিক ফ্যাক্টর অন্য সব কারণ থেকে আসতেও পারে, নাও আসতে পারে। তার স্বরূপ সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের। এতদিন পাশাপাশি বাস করেও হিন্দু-মুসলিমের মনে একত্রে বাস করার বাসনার সৃষ্টি হয়নি। অথচ হাজার হাজার মাইল দূরে অবস্থিত পশ্চিম পাকিস্থানবাসী মুসলিম এ সূত্র অনুসারে পূর্ব পাকিস্থানী মুসলিমের সঙ্গে একত্রে বাস করতে অভিলাষী। তাই বর্তমানে তারা এক জাতি। পরবর্তীকালে মানস-পরিবর্তনের ফলে হয়তো গোটা পাকিস্তানবাসী এক জাতিতে পরিণত হতে পারে।[1]
ইসলামী আন্দোলনকে কোনো বিশেষ জাতীয় আন্দোলন বললে ভুল হবে। এ আন্দোলন পাকিস্তানী জাতির অথবা অন্য কোনো মুসলিম প্রধান দেশের জাতীয় আন্দোলন নয়। এর মুখ্য উদ্দেশ্য মানবতার সুস্থ, স্বাভাবিক ও পূর্ণ বিকাশ। কাজেই কোনো বিশেষ দেশ থেকে এর সূচনা হলেও অথবা কোনো বিশেষ দেশে ইসলামী সমাজ সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত হলেও বিশেষ ভৌগোলিক পরিবেশে তা সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না।
ইসলামী আন্দোলনের উদ্দেশ্য
ইসলামী আন্দোলনের উদ্দেশ্য মানবতার বিকাশ। মানবজীবনকে সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়– তার মধ্যে রয়েছে অনেকগুলো গুণ। তার মধ্যে রয়েছে মনন ক্ষমতা (Intellection), প্রক্ষোভ (Emotion), ইচ্ছাশক্তি (will), সহজাত প্রবৃত্তি (Instincts), অহংবোধ (Egoism), পরার্থিতা (altruism) ইত্যাদি অসংখ্য গুণাবলি। মানুষের জ্ঞানের ক্ষেত্রেও দেখা যায় স্বজ্ঞা (Intenition), প্রয়োগ (Experience) ও যুক্তির (Reason) মাধ্যমে মানুষ জ্ঞান লাভ করতে সক্ষম।
এসব গুণাবলির প্রকৃতিই হলো, এর কোনো একটিকে অতিরিক্ত প্রাধান্য দেওয়া হলে অন্যটি আড়ষ্ট হয়ে যায় এবং পরবর্তীকালে বিদ্রোহ ঘোষণা করে মানবজীবনের ভারসাম্য নষ্ট করে– মানবজীবনে দেখা দেয় অরাজকতা। উদাহরণ স্থলে বলা যেতে পারে, ক্ষুধা মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। ক্ষুধার নিরসন না হলে যেমন মানুষ অস্বস্তিবোধ করে, তেমনি কেবল উদরের পরিতুষ্টি করতে গেলেও মানবজীবনে দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে। উদরের অত্যধিক পরিতৃপ্তির জন্য যদি কামবৃত্তিকে অতৃপ্ত রেখে দেয়া হয় তাহলে মানবজীবনে দেখা দেয় সংঘাত ও সংঘর্ষ। মানবজীবনের এক স্বাভাবিক চাহিদা বিদ্রোহ ঘোষণা করে। তেমনি জ্ঞানের ক্ষেত্রে স্বজ্ঞা, যুক্তি বা প্রয়োগ – যে কোনো একটি পদ্ধতির অতিরিক্ত অনুশীলনের ফলে অন্যান্য শক্তি হয়ে পড়ে আড়ষ্ট। মানবজীবনে দেখা দেয় চরম দৈন্য। জ্ঞানের ক্ষেত্র হয়ে পড়ে অত্যন্ত সংকীর্ণ। মানবজীবনকে তাই সম্পূর্ণ স্বাভাবিকভাবে বিকশিত করে তুলতে হলে জীবনের ও জ্ঞানের সবগুলো বৃত্তি ও প্রবৃত্তিকে যথাযথভাবে সংযত ও সংহত করে তোলা দরকার। তার জন্য চাই এমন কোনো আদর্শ বা ধারণার প্রতিষ্ঠা, যাকে গ্রহণ করলে তা সম্ভব হতে পারে।
‘আল্লাহ’র ধারণা
আল্লাহ সেরূপ শক্তিশালী একটা ধারণা। আল্লাহ বলতে জগতের স্রষ্টা, পালনকর্তা, বিবর্তনকারী, সর্বশক্তিমান, সর্বগুণাধার এবং সার্বভৌম শক্তিকে বুঝায়। তিনি জগতের আদি কারণ এবং সর্বগুণাধার। তিনি বিবর্তনকারক (evoluter); কাজেই জগতের গতি অধঃদিকে নয়– ঊর্ধ্বদিকে। তিনি সর্বশক্তিমান; কাজেই মানবীয় শক্তিতে বিশ্বাস স্থাপন নিন্দনীয় নয়– কারণ মানুষ তার শক্তিতে শক্তিমান হতে পারে। তিনি সার্বভৌম। জগতের সমস্ত মালিকানা একমাত্র তাঁরই। মানুষ তাঁর গুণে গুণান্বিত হয়ে দুনিয়াকে বৃহৎ থেকে বৃহত্তর স্তরে উন্নীত করতে পারে। তবে দুনিয়ার মালিকানা একমাত্র আল্লাহর, তাই ভোগের বেলা আল্লাহর অন্যান্য বান্দার সঙ্গে সমান অংশে ভোগ করতে হবে। দুনিয়ার সকল সম্পদই মানুষ রক্ষক (Custodian) হিসেবে ভোগ করতে পারবে– তাতে মানুষের কোনো মালিকানা আসতে পারে না।
এ ধারণা গ্রহণ করার ফলে বৈজ্ঞানিক জগতের সঙ্গে ধর্মীয় ও নৈতিক জগতের মানগুলোর সমন্বয় সম্ভবপর হয়। কারণ, এতে বৈজ্ঞানিক জগতের সর্বপ্রধান সূত্র কার্যকারণের নীতি (Principle of causality) অক্ষুণ্ণ রেখেও নৈতিক ও ধর্মীয় মানগুলো সংরক্ষণের সুব্যবস্থা হয়। ইন্দ্রিয়জ জ্ঞানে বা ব্যবহারিক জ্ঞানে আল্লাহর সৃষ্টি জগতে আপাতত অণু-পরমাণুর খেলা দৃষ্ট হলেও যুক্তি ও স্বজ্ঞার মাধ্যমে সে অণু-পরমাণুর সত্যিকার স্বরূপ সম্বন্ধে সঠিক ধারণা করা সম্ভব। ইন্দ্রিয়জ জ্ঞানের পর্যায়ে না হলেও নৈতিক বা ধর্মীয় জীবনের অভিজ্ঞতাকে মায়া-মরীচিকা বলে উড়িয়ে দেবার কোনো সঙ্গত কারণ নেই। জ্ঞানের বিভিন্ন স্তরে তাদের সত্যতা আমাদের বাধ্য হয়েই স্বীকার করতে হয়।
জ্ঞানের ক্ষেত্রেও জ্ঞাতা ও জ্ঞায়ের সম্বন্ধ বা জ্ঞানের সীমা নিয়ে বাদানুবাদের হয় অবসান। এ দুনিয়া ও মানুষ উভয়েরই মূল আল্লাহ, তাই তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্বন্ধ সহজে হতে পারে। মানুষ আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, তাই তার পক্ষে বিশ্বজ্ঞান বা অনন্ত জ্ঞানের অধিকারী হওয়া সম্ভবপর। এতে মানবজীবনে দেখা দেয় এক চরম আশাবাদ (Optimism)।
জ্ঞানের পদ্ধতি
আল্লাহ সম্বন্ধে এ ধারণা কোন জ্ঞানপ্রসূত? এ ধারণা কি ব্যবহারিক জ্ঞানলব্ধ (Experiential Knowledge), না যুক্তি থেকে উদ্ভূত, না স্বজ্ঞাজাত? আল্লাহ সম্বন্ধে এ ধারণার মূলে রয়েছে মানবজ্ঞানের সকল পদ্ধতির সমাবেশ। সুদূর অতীত থেকেই মানুষ এ বিশ্বের উৎপত্তি সম্বন্ধে নানাভাবে চিন্তা করেছে। দুনিয়ার বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে ও পৌরাণিক কাহিনীতে মানুষের সে প্রচেষ্টার ইতহাস পাওয়া যায়। আল্লাহর ধারণার পশ্চাতে রয়েছে এক বিবর্তনের ইতিহাস। বিভিন্ন যুগে আল্লাহ সম্বন্ধে মানুষ বিভিন্ন ধারণা পোষণ করে জীবনের পূর্ণ ব্যাখ্যায় অসমর্থ হয়ে অবশেষে তাকে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করতে বাধ্য হয়।
ইসলাম সবগুলো ধারণারই সময়-উপযোগিতা স্বীকার করে। আল্লাহ সম্বন্ধে পূর্ববর্তী ধারণাগুলো আংশিক হওয়ায় সেগুলোর পক্ষে জীবনের সামগ্রিক অভিজ্ঞতার ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয় না। তাই পরবর্তীকালে সেগুলো পরিত্যক্ত হয়। আল্লাহ এক পূর্ণ বিকশিত ধারণা। এ ধারণার পশ্চাতে রয়েছে দুনিয়ার মননশীলতার ধারাবাহিক ছাপ। এর বিবর্তনের ইতিহাসে পাওয়া যায়– প্রয়োগ, যুক্তি ও স্বজ্ঞার স্পষ্ট নিদর্শন। হজরত মোহাম্মদ (দ.) প্রবর্তিত ইসলাম ধর্মের বিশেষত্ব এই যে, এখানেই আল্লাহকে ধারণা করা হয়েছে পূর্ণরূপে। পরবর্তী ধারণাগুলোতে, আল্লাহতে সার্বভৌমত্ব অর্পিত হয়নি; ফলে সেসব ধর্মকে ভিত্তি করে কোনো সমাজ বা রাষ্ট্র গঠন করা সম্ভব হয়নি। হজরত মোহাম্মদ (দ.) প্রবর্তিত পূর্ণাঙ্গ ইসলামের মধ্যে আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করার ফলে মানবিক স্বাধীনতা আংশিকভাবে অক্ষুণ্ণ রেখে সাম্যবাদমূলক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হওয়া সম্ভবপর।
আল্লাহ সম্বন্ধে এ পূর্ণ ধারণা লাভ করেন হজরত মোহাম্মদ (দ.) প্রত্যাদেশের (revelation) মাধ্যমে। প্রত্যাদেশ স্বজ্ঞার (Intuition) এক বৃহত্তর সংস্করণ। জ্ঞান বা প্রয়োগকে প্রত্যাদেশ অস্বীকার করে না, বরং অনুপ্রেরণা দান করে। কোরান শরীফে মানবীয় শক্তি প্রয়োগের জন্য তাগিদ দেওয়া হয়েছে। স্বজ্ঞা বা প্রত্যাদেশ কোনো ভুঁইফোড় জ্ঞান নয়। মানবজাতির মননশীলতার ধারা তাতে প্রবহমান। যুগ-যুগান্তের চিন্তাধারার আলোচনা করলে দেখা যায়, আমাদের জ্ঞানের ক্ষেত্রে স্বজ্ঞা, প্রয়োগ ও যুক্তি ওতপ্রোতভাবে বিরাজমান। আমরা কতগুলো স্বতঃসিদ্ধ (Axioms and postulates)-কে স্বীকার করে আমাদের অভিজ্ঞতাকে সুসম্বন্ধ করি। আবার অভিজ্ঞতা সুসম্বন্ধ (Synthesized) হলে পরবর্তীকালে স্বজ্ঞার মাধ্যমে আমরা নতুন নতুন তথ্য আবিষ্কার করি। আল্লাহর ধারণা বর্তমানে প্রত্যাদেশ বা স্বজ্ঞালব্ধ হলেও তাতে প্রয়োগ ও যুক্তির অবদান রয়েছে প্রচুর। নানাবিধ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ভুলভ্রান্তির মধ্য দিয়ে মানুষের নবী হজরত মোহাম্মদ মোস্তফার (দ.) স্বজ্ঞার মাধ্যমে মানুষ এ ধারণায় এসে পৌঁছেছে।
আল্লাহর ধারণা অন্ধবিশ্বাস নয়। এ ধারণার ইতিহাসের আলোচনা করলেই স্পষ্ট প্রতীয়মান– মানবজীবনের মধ্যে সংহতি সৃষ্টির জন্য এ ধারণা ছিল অপরিহার্য।
বর্তমান যুগ ও ইসলামী সমাজ
ইসলামকে বলা হয় পূর্ণাঙ্গ ‘দীন’। মানবজীবনের বিকাশের পক্ষে সমস্ত অনুকূল ধারণা বা নির্দেশ তাতে রয়েছে। তবুও ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র বেশি দিন টিকে থাকেনি। হজরত মোহমদ মোস্তফা (দ.) মদিনাতে হিজরত করার পর থেকে দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর ফারুকের (রা) শাসনকাল পর্যন্ত ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র উল্কার গতিতে অগ্রসর হয়। পরবর্তী দুই খলিফার শাসনকালে তা স্তব্ধ হয়ে পড়ে। খোলাফায়ে রাশেদিনের পরে প্রতিবিপ্লবের (counter revolution) ফলে তার স্রোত উল্টো দিকে বইতে থাকে।
প্রশ্ন উঠতে পারে, মানবজীবনের সম্পূর্ণ অনুকূল এ আদর্শ সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা ভেঙ্গে গেল কেন? জগৎ সভ্যতার এত পরিবর্তিত অবস্থার মধ্যে আবার তাকে ফিরিয়ে আনা কি সম্ভবপর? এ সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা না করে সংক্ষেপে বলা যায়, ইসলামী সমাজের ভাঙনের কারণ হলো তার অগ্রবর্তিতা। ইসলাম যে জীবনদর্শনের আলোকে জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল– তখনকার দিনের অনুন্নত যাযাবর পশুচারিক পর্যায়ের বেদুঈন এবং গোত্রের অহমিকাবোধে উম্মক্ত তথাকথিত অভিজাত আরব বণিকগণ তা সম্যক উপলদ্ধি করতে পারেনি। তাই তারা আবার সমসাময়িক বিকল্প (Perverse) সমাজের অনুকরণ শুরু করে।
কোনো মতবাদের সাময়িক ব্যর্থতাই তার চরম ব্যর্থতা নয়। তার অন্তর্নিহিত সম্পদ অক্ষুণ্ণ থাকলে– পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তার মূল্য লোপ পায় না। জগৎ সভ্যতার নানা পরিবর্তনের মধ্যে এ সত্যটি বিশেষভাবে প্রমাণিত হচ্ছে– মানুষের জীবনে চলেছে এক মহাপরীক্ষা। পরীক্ষার পর পরীক্ষা (expeiment) করে চলেছে– মানুষ কিন্তু কোনো সমাজ বা সভ্যতার কাঠামোতেই বেশি দিন স্বস্তি লাভ করতে পারেনি। তার কারণস্বরূপ বলা হয়– পরিবর্তিত অবস্থায় মানুষের উৎপাদন ব্যবস্থা পরিবর্তিত হয় সত্যি, কিন্তু তার প্রকৃতির কোনো তারতম্য হয় না। মানুষ তার উৎপাদন ব্যবস্থার কাঠামোতে (structure) আপনার ঠাঁই করে নেবার চেষ্টা করে হচ্ছে ব্যর্থ। সামন্ত-প্রভুদের আধিপত্যের সময় উৎপাদনের সমস্ত শক্তি ছিল তাদের হাতে। সে উৎপাদন ব্যবস্থার ফলে একদল দাঁড়াল ভূমিদাস (serf) হয়ে। এ অস্বাভাবিক ব্যবস্থাকে মানুষ তার স্বাভাবিক পরিণতি মনে করেই তাতে আপনার ঠাঁই করে নিল। পুঁজিবাদের প্রাধান্যের সময় উৎপাদনের শক্তি পুঁজিপতির করায়ত্ত হলে মানুষ মাথা পেতে সে ব্যবস্থাকে স্বীকার করে নিল। উৎপাদন-ব্যবস্থার পরিবর্তনকে মানুষ তার আসল সত্তার পরিবর্তন মনে করে ভুল করে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে।
মানুষকে আবার বুঝতে হবে– উৎপাদন অথবা বণ্টন জীবনের উদ্দেশ্য (goal) নয়, উপায় (means) মাত্র। জীবন বিকাশের জন্যই মানুষ উৎপাদন করে। যে উৎপাদন ব্যবস্থায় জীবন বিকাশের পথে অন্তরায়ের সৃষ্টি হয়, তা সর্বাবস্থায়ই পরিত্যাজ্য। তাই যে উৎপাদন ও ব্যবস্থাতেই আবার ফিরে যেতে হবে সে ব্যবস্থা রয়েছে ইসলামে। ইসলাম ব্যক্তিস্বাধীনতাকে স্বীকার করেও শোষণের কোনো পথ খোলা রাখেনি। ব্যক্তি তার রুচি অনুযায়ী রাষ্ট্রের কোনো ক্ষতি না করে ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগতভাবে উৎপাদন করতে পারবে, কিন্তু বণ্টনের বেলা তাকে তার প্রয়োজনের অতিরিক্ত সমস্তই আল্লাহর অপর বান্দাদের মধ্যে অকাতরে বিলিয়ে দিতে হবে।
মানবিক অধিকারের (Human rights) ক্রমবিকাশের ইতিহাসের আলোচনা করলে দেখা যায়, হাজার বছর পরে মৌলিক বলে মানুষের যেসব অধিকার স্বীকৃত হচ্ছে– হজরত মোহাম্মদ (দ.) প্রবর্তিত ইসলাম গোড়াতেই সে অধিকারগুলো স্বীকার করে নিয়েছে। কাজেই সময়ের প্রশ্ন তুলে যাঁরা ইসলামী সমাজ বা রাষ্ট্রের অনুপযোগিতার প্রশ্ন তোলেন– তাঁদের জ্ঞান অত্যন্ত পক্ষপাতমূলকই বলতে হবে।
অবরোহ পদ্ধতির (Deductive) ন্যায়শাস্ত্রে এখনও এরিস্টটলের ডিকটাম (Dictum de omni et nullo) ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়নি। মহাজ্ঞানী বুদ্ধদেবের বা কনফিউসিয়াসের মহাবাণী এখনও অসার্থক প্রমাণিত হয়নি। কাজেই তেরশ’ বৎসর পূর্বে প্রবর্তিত হয়েছিল বলে ইসলামী সমাজ আবার কায়েম হতে পারে না বলে যাঁরা সন্দেহ পোষণ করেন– তাঁদের সন্দেহের মূলে কোনো ভিত্তি নেই।
ইসলামের রাজনীতি
ইসলামী সমাজের (১) রাষ্ট্রনীতি, (২) অর্থনীতি, (৩) উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থা, (৪) শাসন ব্যবস্থা সম্বন্ধে পরিস্কার ধারণার অভাবে অনেকেই ইসলামী সমাজ সম্বন্ধে সঠিক ধারণা করতে পারে না।
(১) ইসলামী রাষ্ট্র গণতন্ত্রমূলক। তবে আধুনিক গণতন্ত্রে যেরূপ দ্বন্দ্ব রয়েছে, ইসলামী সমাজে সেরূপ দ্বন্দ্ব থাকতে পারে না। বর্তমানকালের পুঁজিবাদী গণতন্ত্রে একদিকে রয়েছে মানুষের প্রতিনিধি নির্বাচনের সুবিধা, অপরদিকে রয়েছে পুঁজিবাদী ধন-দৌলতের জোর যার ফলে পুঁজিপতিরা অবাধে গরিব-দুঃখীর নির্বাচনের অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করতে পারে। ইসলামে পুঁজি সৃষ্টির কোনো সুযোগ না থাকায় মানুষের নির্বাচনের অধিকার ক্ষুণ্ণ হতে পারে না। দ্বিতীয়ত, বর্তমানকালের গণতন্ত্রে যেরূপ জনপ্রিয়তা নির্বাচন বৈতরণী পার হওয়ার একমাত্র বাহন, ইসলাম সেরূপ জনপ্রিয়তার উপর গুরুত্ব আরোপ করে না। সত্যিকার মনুষ্যত্বের অধিকারী ব্যতীত, অন্য কোনো দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তি জনপ্রিয় হলে ইসলামী সমাজে প্রতিনিধি নির্বাচিত হতে পারে না। প্রার্থীর নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা থাকা চাই। এ গণতন্ত্রে নির্বাচনই সর্বপ্রধান নীতি হলেও অবস্থাভেদে নমিনেশন দ্বারা প্রতিনিধি নিয়োগ করা যায়। তবে সর্বাবস্থায়ই প্রতিনিধিকে সর্বসাধারণের সম্মতি গ্রহণ করতে হবে।
(২) এ সমাজের অর্থনীতি পরিচালিত হয় সর্বসাধারণের কল্যাণের প্রতি লক্ষ্যে রেখে। যুদ্ধলব্ধ বিত্ত (আল-গনীমাহ), জাকাত, সাদকাহ, জিজয়া, খেরাজ, আলকার, আল-উশর প্রভৃতি কর ধার্য করে এ রাষ্ট্রের আর্থিক সৌধ গড়ে তোলা হয়। তবু পরিবর্তিত অবস্থায় সেগুলোর পরিবর্তনও স্বীকার করে নেওয়া হয়।
(৩) উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থা– এ সমাজে উৎপাদন ব্যবস্থাতে কোনো শর্ত নেই। ব্যক্তি একক বা সংঘবদ্ধভাবে অন্যের সঙ্গে যুক্ত হয়ে উৎপাদন করতে পারবে– তবে তার প্রয়োজনের অতিরিক্ত সমস্ত উৎপাদিত দ্রব্য দশজনের কল্যাণের জন্য রাষ্ট্রের বা সমাজের হাতে তুলে দিতে হবে।[2]
(৪) শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের পার্থক্য ইসলাম গোড়া থেকেই স্বীকার করে। কোনো অবস্থায় ইসলামী সমাজ এ দু’বিভাগ একত্রিত হতে পারে না।
ইসলামী সমাজ উপরোক্ত বুনিয়াদগুলোর ভিত্তিতেই প্রতিষ্ঠিত হয়। মোদ্দাকথা, ইসলামী সমাজে আল্লাহ অত্যন্ত ব্যাপক (Very comprehensive) এক ধারণা। জ্ঞান, রাজনীতি, ধর্মনীতি বা জীবনের সকল ক্ষেত্রেই এটা এক স্বতঃসিদ্ধ। আল্লাহর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁহার রাজ্যকে উন্নত থেকে উন্নততর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া ইসলামপন্থীর কর্তব্য। সে কর্তব্যবোধে উদ্বুদ্ধ ইসলামী কর্মীর পক্ষে কয়েকটি বিষয় বিশেষভাবে অনুধাবনযোগ্য।
ইসলামের দৃষ্টিতে সমাজ, রাষ্ট্র ও সরকার
প্রথমে দেখতে হবে, সমাজ থেকেই রাষ্ট্র গঠিত হয়। সমাজের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নিলেই তা রাষ্ট্র হয়ে দাঁড়ায়। আবার রাষ্ট্র গঠিত হলে তার সত্তা সমাজ থেকে পৃথক ও সাশ্রয়ী হয়ে পড়ে। রাষ্ট্রের আধিপত্য সমাজকে বাধ্য হয়েই স্বীকার করে নিতে হয়, কিন্তু উল্টো দিকে সমাজের প্রাধান্য সকল ক্ষেত্রে রাষ্ট্র মেনে নেয় না। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সরকারের সৃষ্টি। সরকার অনেক সময় সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপ ধারণ করতে পারে। উদাহরণস্থলে বলা যায়– অবিভক্ত ভারতের মুসলিম সমাজ-মানসের যে রাজনৈতিক ভাবধারা বিকাশ লাভ করে, তারই ফলস্বরূপ পাকিস্থান জন্মলাভ করে। পাকিস্থান রাষ্ট্রও এক ছিল না। রাষ্ট্রের একটা স্বতন্ত্র সত্তা রয়েছে। পাকিস্থান সরকার রাষ্ট্রের পরিচালনার জন্য যন্ত্র ছিল মাত্র। তবু সরকারের সত্তাও ভিন্ন। যেসব দেশে সমাজ, রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে না, সেখানে সমাজ ও সরকারের মধ্যে যে কোনো একটি ভুলের ফলে দেশের সর্বনাশ হতে পারে। সমাজ থেকে রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রের অধীনে সরকার গঠিত হলেও তাদের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব থাকা প্রয়োজনীয়। যে কোনো অবস্থায় একটিতে অপরটির মধ্যে বিলীন হতে দেওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। ইসলামী আদর্শে তাই এগুলো অক্ষুণ্ণ থাকতে বাধ্য। একই আদর্শের প্রেরণায় সমাজ, রাষ্ট্র বা সরকার গঠিত হলেও তাদের পৃথক স্থিতি সর্বাবস্থায় রক্ষণীয়। ইসলামী সমাজে তাই কোনোদিনই একটিতে অপরটি বিলীন হয়ে যায়নি।
ইসলামী আন্দোলন ও অমুসলিম
এই যে ইসলামী আদর্শ, তার জন্যই চাই ইসলামী আন্দোলন। দুনিয়ার বুকে সত্যিকার ইসলামী সমাজ, রাষ্ট্র বা সরকার গঠন করার জন্যই ইসলামী আন্দোলনের প্রয়োজন। প্রশ্ন ওঠে, এ আন্দোলনে ভিন্ন ধর্মালম্বী লোক যোগ দিতে পারে কি না?
‘ইসলাম’ প্রচলিত অর্থে ‘ধর্ম’ নয়– অর্থাৎ শুধুমাত্র বিশ্বাস বা আচার-অনুষ্ঠানের ব্যবস্থামাত্র নয়। ইসলাম এক বিশিষ্ট দীন বা জীবন সংস্থা (Code of life)। এতে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানবজীবনকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, তার রয়েছে স্পষ্ট নির্দেশ। সে নির্দেশগুলো মানবজীবনের সত্যিকার রূপের আলোকে গঠিত হয়েছে। যাতে মানব জীবনের পূর্ণ বিকাশ হয়, তার জন্য আল্লাহর ধারণাকে গ্রহণ করে তা থেকে deduction স্বরূপ কতকগুলো নীতি করা হয়েছে নিধারণ। রাজনৈতিক মতবাদ সে ধারণারই একটা অংশবিশেষ। আল্লাহর সার্বভৌমত্ব এবং মানুষের প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে গঠিত হয় ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র। এ সূত্র আল্লাহর ধারণার একটা অংশ মাত্র। যারা এ ধারণায় বিশ্বাসী নয়, তাদের পক্ষে ইসলামী আন্দোলনে যোগ দেওয়া অসম্ভব। কিন্তু যারা কেবল আল্লার সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী, ইসলামের অন্য কোনো রীতিনীতিতে বিশ্বাসী নয়, তাদের পক্ষে ইসলামী আন্দোলনে যোগদান করাতে কোনো প্রতিবন্ধক নেই। হজরত মোহাম্মদ মোস্তফা (দ.) প্রবর্তিত ইসলামী আন্দোলনের সূচনাতে আবিসিনিয়ার রাজা নজ্জাসী (Negies) প্রত্যক্ষে ইসলাম গ্রহণ না করলেও পরোক্ষে নানাভাবে এ আন্দোলনকে সাহায্যে করেছেন। তাকে অকুণ্ঠিত চিত্তে ইসলামী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীরূপে গণ্য করা যেতে পারে। মিসর, সিরিয়া, ইরাক প্রভৃতি দেশ বিজয়ের মূলে মুসলিমদের শৌর্যবীর্য কার্যকরী হলেও কথিত দেশগুলোর জনসাধারণের আগ্রহও কম শক্তিশালী ছিল না। ইসলামী সমাজ তখন দেখা দিয়েছিল মানবতার মুক্তির আহবান নিয়ে। তখনকার দিনের সমাজতন্ত্রের চাপে নিষ্পিষ্ট মানবতা ইসলামী শাসনের ছায়ায় মুক্তি পেতে ছিল উদ্বুদ্ধ। ইসলামী আন্দোলনকে সর্বহারা জনসাধারণই এগিয়ে দিয়েছে। বর্তমানকালে শোষিত, নিপীড়িত জনসাধারণ যদি আবার আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও মানুষের প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে সমাজ বা রাষ্ট্র গঠন করার মহান দায়িত্বে অগ্রসর হয়, তাহলে তাদের ইসলামী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে কোনো আপত্তি থাকতে পারে না– অতএব আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও মানুষের প্রতিনিধিত্বে বিশ্বাসী যে কোনো ব্যক্তিই তাতে অংশগ্রহণ করতে পারে।
ইসলাম ও জেহাদ
সে আন্দোলনকে সফল করতে হলে বিপ্লবের প্রয়োজন। সে বিপ্লব নরহত্যার বিপ্লব নয়, সে বিপ্লব আদতে আত্মিক বিপ্লব– অবস্থাভেদে তা রক্তবিপ্লবের রূপও নিতে পারে। মানুষ তার সত্যিকার জীবন বিকাশের জন্য যদি কায়মনোবাক্যে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও মানবতার প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে রাষ্ট্র গঠন করতে প্রস্তুত হয়, তবেই এ বিপ্লব সার্থক হতে পারে। তার জন্য চাই আদর্শের উপর আস্থা এবং চারিত্রিক দৃঢ়তা। তা পেতে হলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সৃষ্টি করতে হবে আদর্শ কর্মী। সে কর্মীদের সামনে রয়েছে মস্ত বড় জেহাদ। অন্যায়-অবিচার ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে জেহাদ করার প্রস্তুতি হিসেবে নিজের সঙ্গেও করতে হবে জেহাদ। আপনাকে সম্পূর্ণ তৈরি না করে জেহাদে নামলে শত্রুর সঙ্গে এঁটে ওঠা যাবে না।
এ শত্রু কারা? যারা এ আন্দোলনকে পিষে মারতে চায়, তারা। জেহাদের অর্থ ভিন্ন মতাবলম্বী লোকের উপর আঘাত হানা নয়। যারা আল্লাহর রাজ্যে ভেদাভেদের প্রবর্তন করে, আল্লাহর নেয়ামত যারা দু’হাতে লুটে নেয়, মানুষের মানবিক অধিকারগুলো যারা স্বীকার করে না, মানুষকে যারা সৃষ্টির সেরা বলে স্বীকার করে না, তারাই ইসলামবিরোধী– তাদের সঙ্গেই করতে হবে জেহাদ। ইসলামবিরোধী তথাকথিত মুসলিমের বিরুদ্ধে জেহাদ ইসলামের ইতিহাসে নতুন নয়। এজিদের বিরুদ্ধে ইমাম হোসেনের (রা) বা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে শেখ আহমদ সরহিন্দীর জেহাদ প্রকৃষ্টতম জেহাদ। তার জন্য দুনিয়ার সকল মোমেনকে সংঘবদ্ধভাবে কাজে নামতে হবে, ইসলামী আন্দোলনের তাই আসল কথা– Momens of the world, unite– দুনিয়ার মোমেনরা এক হও।
নোট:
[1] প্রবন্ধটিকে এর রচনাকাল অর্থাৎ পাকিস্তান রাষ্ট্রের পটভূমিতে বিবেচনা করতে হবে।
[2] এই অভিমতটি নিতান্তই লেখকের ব্যক্তিগত। নিবন্ধটি যেখান থেকে নেয়া হয়েছে, সে বইয়েরই আরেকটি নিবন্ধ ‘কম্যুনিজম বনাম সমাজ ব্যবস্থা’র আলোকে এই মন্তব্যকে বিবেচনা করতে হবে।