ইসলামী সংস্কার একটি বাস্তবতা: তারিক রমাদান
কানাডিয়ান সাংবাদিক ও বিশ্লেষক Graeme Wood বিবিসি নিউজনাইটে ISIS-এর উত্থানকে ইসলামের আধুনিককালের সংস্কার হিসেবে অভিহিত করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর তারিক রমাদান দুই মিনিটের একটি বক্তব্য দেন। চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি ব্ক্তব্যটি প্রচারিত হওয়ার পর লক্ষ লক্ষ মানুষ এটি শুনেছেন। শুক্রবারের অবসরে বসে এটি অনুবাদ করে ফেললাম।
ইসলামী সংস্কার নিয়ে কথা বলা এখন অপাত্রে দানের মতো ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। খ্রিষ্টান চশমা দিয়ে ইসলামকে বুঝার চেষ্টা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা উচিত। দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বাস্তবতা।
কেউ বলতেই পারে, ISIS-এর উত্থান হলো ইসলামী সংস্কারের একটি নমুনা। মার্টিন লুথারের মতো তারাও র্যাডিক্যাল, তারাও ধর্মীয় এস্টাবলিশমেন্টকে স্বীকার করে না। কিন্তু এই তুলনা ঐতিহাসিক ও ধর্মতাত্ত্বিক বাস্তবতার সাথে মিলে না। ঐতিহাসিক সত্য হলো, লুথার ক্যাথলিক চার্চের বিরুদ্ধে র্যাডিক্যাল ছিলেন, পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন জ্ঞানী স্কলার। অন্যদিকে, ইসলামে কোনো চার্চব্যবস্থাই নেই, আর ISIS-এর নেতারও কোনো ধর্মীয় বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। শিয়া-সুন্নীসহ সকল মুসলমান ঐক্যবদ্ধভাবে তাদেরকে প্রত্য্যাখান করেছে। ISIS ইসলামের যে শিক্ষা, তার সংস্কার সাধন করেনি, বরং এর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
তাই সত্যিকার অর্থে আমাদের জানা প্রয়োজন, ইসলামের ভেতর এখন কী ঘটে চলছে?
মুসলিম সমাজে এখন একটি নীরব সংস্কার প্রক্রিয়া, একটি বুদ্ধিবৃত্তিক বিপ্লব চলছে। সহিংস ঘটনা না হওয়ায় আমাদের সংবাদপত্রগুলোতে এই সংস্কার কাজ শিরোনাম হিসেবে ওঠে আসে না। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তা ঘটছে না। দুনিয়া জুড়ে মুসলমানরা এখন আরব ও এশিয়ান পুরুষতন্ত্র এবং একইসাথে পাশ্চাত্যের সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করার চেষ্টা করছে। এই সংস্কার একটি বিশাল ঐতিহাসিক কর্মযজ্ঞ এবং এটি সম্পন্ন করতে বেশ সময়ের দরকার। হয়তো এটি উদার মূল্যবোধ সম্পর্কিত পাশ্চাত্য ধারণার অনুগামী হবে না। ইসলাম বরং তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের আলোকেই সংস্কার সাধন করবে।
পাশ্চাত্য উদার, আর ইসলাম কট্টর এবং একটি অপরটির সম্পূর্ণ বিপরীত– এ ধরনের অনুমান খুবই বিপদজনক ও সরলীকরণ মাত্র। বরং এর বাইরে একটি তৃতীয় ধারা তৈরির ব্যাপারে আমাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। এছাড়া ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা, সমতা এবং মানবিক মর্যাদা সংক্রান্ত মূল্যবোধগুলো চর্চার ক্ষেত্রে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আমাদেরকে অবশ্যই সামাজিক অবিচার, বর্ণবাদ এবং জেন্ডার বৈষম্য সম্মিলিতভাবে মোকাবেলা করতে হবে এবং অভিবাসী ও শরনার্থীদের জন্য আরো সম্মানজনক পথ খুঁজে বের করতে হবে। এসব অর্জন করতে হলে পাশ্চাত্যকে যেমন তার হামবড়াভাব কমাতে হবে এবং তেমনি মুসলমানদেরকেও হতে হবে আরো উদার।
বেশ কয়েক দিন ধরে সিএসসিএস বিডি ওয়েবসাইটটি লক্ষ্য করছি। আধুনিকতা ইসলামের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করতে কাজ করছে বলে আমার মনে হয় সেন্টারটি। কিন্তু রাসুল স. এর জীবনীর পর্বভিত্তিক কিছু পোস্ট দেখলাম। তাতে ইসলামী স্কলারদের চেয়ে পাশ্চাত্যের গবেষকদের গুরুত্ব বেশি দেয়া হয়েছে। এটা মোটেও কাম্য নয়। কারণ পাশ্চাত্য অমুসলিম গবেষকরা কখনো এই আয়াতের অন্তভুক্ত নয়, ”ওয়াজকুরু নি’মাতিল্লাহি ইজকুংতুম আ’দায়ান ফাআল্লঅফা বাইনা কুলুবিকুম ফাসবাহতুম বি নি’মাতিহি ইখওয়ানান”। গোটা বিশ্বের মুমিনরা একটি দেহের ন্যায়- এটা তাদের বুঝবার কথা নয়, সুতরাং বিশ্বনবী স. এর জীবন বিশ্লেষণ নিয়ে খেলা করা হচ্ছে। প্লিজ এটা বন্ধ হোক।
আপনি যে বিষয়টির অবতারণা করেছেন, এই পোস্টের মন্তব্য সেকশন সেটি নিয়ে আলোচনার সঠিক জায়গা নয়। তারপরও যেহেতু প্রসঙ্গটি তুলেছেন, তাই বলি, এটি সিএসসিএস-এর নিজস্ব ডকুমেন্টারি নয়। যারা ডকুমেন্টারিটি তৈরি করেছে, তাদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিলো পাশ্চাত্যের দর্শক। পাশ্চাত্যের লোকজনের প্রশ্ন ও ধারণা মাথায় রেখে তারা এটি বানিয়েছে।
যাদের মনে ইসলাম সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন নেই, রাসূল (সা) সম্পর্কে যারা পুরোপুরি কনভিন্সড, তাদের জন্য এই ডকুমেন্টারিটি এড়িয়ে যাওয়াই উত্তম। কিন্তু যাদের মনে নানান প্রশ্ন, সন্দেহ, সংশয় রয়েছে, তাদের এসব জিজ্ঞাসা মেটানোর জন্য এই ডকুমেন্টারি। সুতরাং আপনি বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিলেও পারেন।
সেটাইতো হওয়ার কথা। আপনাকে ধন্যবাদ মাসউদ ভাই…..