ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষের অমিত সম্ভাবনা

[এটি মূলত ড. তারিক রমাদানের একটি লেকচার “Min Al-Qalb – Reflections From The Heart”-এর নির্বাচিত অংশের অনুবাদ]

রাসূল সা. ছিলেন মুখতার তথা বাছাইকৃত, মুস্তফা তথা নির্বাচিত, হাবিব তথা প্রিয়পাত্র। আল্লাহ তায়ালা তাকে বাছাই করে ধীরে ধীরে ইসলামের মর্মবাণী শিখিয়েছেন। ফলে তিনি তা হৃদয়ে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন। তা ছিল মূলত মুক্তির বাণী। আপনি যদি ইসলামের মুক্তির ধারণা উপলব্ধি করতে না পারেন, তবে ইসলামকে সঠিকভাবে বুঝতে পারবেন না। আমাদের বুঝতে হবে মুক্তি কোথা থেকে এবং কী অর্জন এর মাধ্যমে।

আমাদের প্রথম যে বিষয়টি বুঝতে হবে, রাসূল সা. ছিলেন উম্মি নবী। উম্মি নবী বলতে আমাদের নিকট সাধারণ উপলব্ধি হলো, রাসূল সা. লিখতে ও পড়তে জানতেন না।

রাসুলের সা. বয়স যখন চল্লিশে পদার্পণ করে, জিবরাইল আমীন প্রথম ওহি নিয়ে আসেন। এর পূর্ব পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুস্থির ছিলেন না। তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন না। তিনি তাঁর সমাজ নিয়ে সুখি ছিলেন না; সমাজের মূর্তি পূজা নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন না, সমাজের লোকজনের উত্তর নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন না। তিনি সত্যের অনুসন্ধানে ব্যকুল ছিলেন এবং সঠিক উত্তর খুঁজে ফিরছিলেন।

তিনি যখন হেরা গুহায় অবস্থান করছিলেন জিবরাইল আ. তার কাছে নেমে আসেন।

জিবরাইল তাকে বলেন, পড়ো!

তিনি বলেন, আমি পড়তে জানি না।

জিবরাইল পুনরাবৃত্তি করেন, পড়ো!

তিনি আবার বলেন, আমি পড়তে জানি না।

অতঃপর তৃতীয়বারে জিব্রাইল আ. বলেন, “পড়ো তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।”

এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় আমরা এ আয়াত পড়ি, কিন্তু এর মর্মার্থ উপলব্ধি করি না, দ্রুত অতিক্রম করে যাই।

ইসলাম প্রথমে যে কাজটি করলো- রাসূলকে সা. তাঁর মন ও হৃদয় পাঠ করা শেখালো। অর্থাৎ তিনি এমন কিছু পারেন, যা তিনি পারেন না বলে মনে করতেন।

বস্তুত, একজন মানুষ হিসেবে তিনি ধারণা করেছিলেন, তিনি পড়তে জানেন না, তিনি দক্ষ নন। জিবরাইল আ. যখন বারবার পড়তে বলছিলেন, তখন রাসূল সা. বলছিলেন, আমি পড়তে পারি না, আমি পড়তে পারি না। অতঃপর, জিবরাইল আ. বলেন, পড়ুন আপনার প্রভুর নামে।

লক্ষ করুন, ইসলাম প্রথমে যে কাজটি করেছে তাহলো ওহির জ্ঞানের মাধ্যমে নিজ সম্পর্কে উপলব্ধি পরিবর্তন করলো।

আপনি যে জিনিসটি ভাবছেন একা করতে পারবেন না, কিন্তু আল্লাহ তা’য়ালার সহায়তায় তা করতে পারবেন। এটাই বিশ্বাসের শক্তি। আপনি এটা করতে পারবেন; আল্লাহ তায়ালার নামে শুরু করে, তাঁর সাহায্যের মাধ্যমে।

ইসলামের প্রথম মেসেজ হলো, নিজের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা; হৃদয়ের মাধ্যমে। আপনার পক্ষে যেটা অসম্ভব মনে হচ্ছে, আল্লাহর সহায়তায় তা সম্পাদন করা সম্ভব হবে। এভাবে ইসলাম নিজের প্রতি দৃষ্টিপাত করতে শেখায়। বস্তুত, ইসলাম নিজের দুর্বলতার মাধ্যমে নিজেকে উপলব্ধি করতে শেখায় না বরং নিজের শক্তিমত্তার মাধ্যমে নিজেকে উপলব্ধির শিক্ষা দেয়। নিজের পটেনশিয়ালটির মাধ্যমে নিজেকে চিনতে শেখায়।

আমরা আমাদের শিশুদেরকে ভুল পদ্ধতিতে শেখাই। আমরা প্রথমে শেখাই নিজেকে ছোট করতে, নিজের দুর্বলতার মাধ্যমে নিজেকে চিনতে। ইসলামের শিক্ষা তা নয়। ইসলামের যথার্থ শিক্ষা- যা পুত্রের প্রতি লোকমানের আ. উপদেশের মধ্যে প্রস্ফুটিত হয়েছে- তিনি তাঁর ছেলেকে বলেন, আল্লাহ তা’য়ালার শুকরিয়া আদায় করো, আল্লাহ তা’য়ালাকে ধন্যবাদ প্রদান করো।

ধন্যবাদ দিয়ে শুরু করা, শুকরিয়া, কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের মাধ্যমে শুরু করার মানে কী?

এর মানে হলো, আল্লাহ তা’য়ালা যা প্রদান করেছেন তার জন্য আল্লাহ তা’য়ালার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করো, যা দেননি তার জন্য আফসোস করো না।

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *