ইসলামে দাস-দাসীর অধিকার
দাসপ্রথা সম্পর্কে বলতে হলে প্রথমে আমাদের জানা দরকার কখন থেকে দাসপ্রথা চলে আসছে। প্রাচীন গ্রীক রোমান ইতিহাস থেকে জানা যায়, দাসপ্রথা সে সময়েও চালু ছিলো। সেই সময় দাসদের উপর নির্মম অত্যাচার করা হতো। অমানবিক নির্যাতন থেকে ইসলাম দাসদের বের করে নিয়ে এসেছে। বর্তমানে দাসপ্রথা বিলুপ্ত হয়ে গেলেও এ বিষয়ের আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ। মহানবী মুহাম্মদ (সা) এর সময়কালে দাসদের অবস্থা কীরূপ ছিল, তা নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করাই এই লেখার উদ্দেশ্য।
সমাজে দাস-দাসী সরবরাহের উৎস কী?
প্রধানত ৪টি উপায়ে স্বাধীন মানুষদের দাস বানানো হতো –
১. জোরপূর্বক কাউকে ধরে এনে বাজারে দাস-দাসী হিসাবে বিক্রি করে দেওয়া,
২. যুদ্ধবন্দিদের দাস-দাসী বানানো,
৩. অভাবের তাড়নায় স্বাধীন ব্যক্তির স্বেচ্ছায় দাসত্ব বরণ করা এবং
৪. দাস বা দাসী উপহার হিসাবে অথবা ক্রয়সূত্রে হস্তগত করা।
ইসলাম কাউকে জোরপূর্বক ধরে এনে দাসে পরিণত করানো এবং স্বেচ্ছায় দাসত্ব বরণ করাকে অনুমোদন করে না। আর যুদ্ধবন্দিদের দাসরূপে গ্রহণ করা, উপহার হিসেবে কাউকে দাস প্রদান করা ও দাস-দাসীর ক্রয়-বিক্রয়কে জায়েজ করছে।
যুদ্ধক্ষেত্র হতে যুদ্ধবন্দি হিসেবে যাদের ধরে আনা হয় তাদের কী করা যেতে পারে?
যুদ্ধবন্দিদের হয় বন্দি বিনিময় করা যেতে পারে। অথবা তাদের হত্যা করা যেতে পারে। নয়তো সমাজে দাস হিসেবে তাদেরকে গ্রহণ করা যেতে পারে। অথবা মুক্তিপণ নিয়ে তাদের মুক্তি দেয়া যেতে পারে। কিংবা মুক্তিপণ ছাড়াই শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসাবে তাদেরকে মুক্তি দেওয়া যেতে পারে। কিংবা জেলখানায় সশ্রম বা বিনাশ্রমে আটক রাখা যেতে পারে।
যুদ্ধের সময় পুরুষদের সাথে যেসব নারী ও শিশু এসেছিল তাদেরকেও যুদ্ধবন্দি হিসেবে ধরে আনা হয়। ক্ষেত্রবিশেষে তাদের দাসে পরিণত করা হয়। কারণ জিহাদের সময় মহিলা সাহাবীরা যেমন তাদের পুরুষদেরকে যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করত, তেমনি শত্রুপক্ষেও নারীরা তাদের যোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করতো। আটক করে রাখা না হলে বন্দি হিসেবে আসা নারীরা পুনরায় ফিরে গিয়ে যুদ্ধের জন্য তাদের পুরুষদের উসকে দেয়ার আশংকা ছিলো।
দাসী ও মালিকের সম্পর্ক কি বৈবাহিক সম্পর্ক, নাকি ব্যভিচারের সম্পর্ক?
এই প্রশ্নের উত্তরে প্রথমে জানা দরকার বিবাহের মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী? বিবাহের মৌলিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে প্রথমত সামাজিক স্বীকৃতি, বংশধারা, ভরনপোষণ রয়েছে। এছাড়া আরো রয়েছে বিয়ের সাক্ষী, মোহরানা, তালাক দেওয়ার ব্যবস্থা।
ইসলামের দৃষ্টিতে একজন মালিকের অধীনে দাস-দাসীদেরকে তার পরিবারের সদস্যদের মর্যাদা দিতে হবে। থাকা, খাওয়া, পরা সবকিছুতেই একজন দাস তার মালিকের পরিবারের সদস্যদের মতো অধিকার পাবে। কিন্তু সে তার মালিকের এলাকা ছেড়ে স্বাধীনভাবে কোথাও যেতে পারেবে না। অর্থাৎ তাদের কোনো ব্যক্তি স্বাধীনতা থাকবে না।
এমতাবস্থায় মানুষের সহজাত প্রয়োজন থাকার কারণে তাদেরকে যৌনতার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দিতে হবে, অথবা যৌনতাকে পেশা হিসেবে নেয়ার অনুমতি দিতে হবে, আর নয়তো দাসদের বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। দাস-দাসীদের সহজাত প্রবৃত্তিকে দমন করার কথাও গ্রহণযোগ্য নয়।
দাসীরা যুদ্ধবন্দী হিসেবে এলেই তাদেরকে সকলে ভোগ করতে পারবে, বিষয়টা এমন নয়। পুরুষ মালিক হয় দাসীকে অন্য দাসের সাথে বিয়ে দিবে, না হয় মালিক নিজেই তাকে বিয়ে করবে, কিংবা অন্য কোনো স্বাধীন ব্যাক্তির সাথে বিয়ে দিবে। বৈবাহিক সম্পর্কের বাহিরে মালিক ও দাসী যৌন সম্পর্ক করতে পারবে না। যদি তা করে তবে তা যিনার শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে বিবেচিত হবে।
দাস ও দাসীর বিয়ে দিলে তাদের সন্তানও একজন দাস হবে। তবে স্বাধীন ব্যক্তি ও দাসীর মধ্যে বিয়ের পর যে সন্তান হবে সে সন্তান স্বাধীন হবে। দাসী ও স্বাধীন ব্যক্তির বিয়েতে দাসীর মালিককে মোহরানা দিতে হবে। কোনো কোনো মাজহাব অনুযায়ী এই মোহরানা দাসী পাবে। আবার কোনো কোনো মাজহাব অনুযায়ী দাসীর মালিকই তা পাবে, দাসী পাবে না। দাসী ও মালিকের বিয়েতে মালিককে কোনো মোহরানা দিতে হবে না এবং তাদের সন্তান স্বাধীন হবে।
স্ত্রী হিসাবে স্বাধীন মহিলার যেসব অধিকার তা দাসীর জন্য প্রযোজ্য নয়। দাসীর কোনো ব্যক্তি স্বাধীনতা নেই। তাই একজন দাসী চাইলেই তালাক নিতে বা দিতে পারবে না। তবে তারা যদি তাদের মুক্তির জন্য মালিকের সাথে চুক্তি করে, তবে মালিকেকে সেই চুক্তি মানতে হবে।
দাসী ও মালিকের বিয়ের পর দাসীর গর্ভে মালিকের সন্তান জন্মালে মালিকের মৃত্যুর পর দাসী স্বাধীন হয়ে যাবে। এবং সন্তান জন্মের পর তাকে কেনাবেচা করা যাবে না।
মালিক ও দাসীর বিয়ে না হলে মালিকের সামনে কি দাসীর পর্দা করা ফরজ?
না। মালিকের সামনে দাসীর কোনো পর্দা নেই। তারা পর্দা করতে চাইলেও করতে পারবে না। এটি তাদের ব্যক্তিত্বের এক ধরনের অবনমন। এদের জীবনকে বর্তমানকালের অন্তরীণ জীবনের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার অধিকার বলতে যে মৌলিক মানবিক অধিকারকে বুঝায়, এর বাইরে অন্তরীণ অবস্থায় পূর্ণতাদানকারী মানবিক অধিকারগুলো ক্ষুন্ন হয়। দাস-দাসীদের ক্ষেত্রেও তেমনটা ঘটে। ইসলাম দাসীদেরকে মালিকের পরিবারে অর্ন্তভুক্ত করার মাধ্যমে অধিকতর মানবিক আচরণ করেছে ।
ইসলাম দাসপ্রথাকে কেন সমর্থন করে?
প্রথমত, ইসলামে দাসদের সাথে অধিক মানবিক আচরণ করেছে। ইসলাম দাসপ্রথা সমর্থনের প্রথম কারণ হলো, তৎকালীণ সময়ে বিভিন্ন যুদ্ধে দাসবন্দি হিসেবে মানুষকে নিয়ে আসা হতো। আর তাদের যদি সমাজে স্বাধীনভাবে বিচরণ করার জন্য ছেড়ে দেওয়া হতো, তাহলে গোটা সমাজে বিশ্বঙ্খলা সৃষ্টি হতো। সব জায়গায় অনৈতিকতা ছড়িয়ে পড়তো। তাই ইসলাম দাসদের ব্যাপারে সুষ্ঠু নিয়মকানুন আরোপ করায় অনৈতিকতার হাত থেকে সমাজ রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। মানুষকে নৈতিক অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করাই ছিল ইসলামের উদ্দেশ্য।
দ্বিতীয়ত, যুদ্ধবন্দিদেরকে যদি দাস-দাসী হিসেবে গ্রহণ না করা হয়, তাহলে তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব কে নেবে? তাদের থাকা, খাওয়া, পরা অর্থাৎ মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ হতো না। ইসলামের বিধান অনুযায়ী, তারা সমাজের মধ্যে মালিকের পরিবারের সদস্যদের মতোই থাকবে। মালিকের পরিবারের অর্ন্তভূক্ত হওয়ার মাধ্যমে তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করা সম্ভব। এতে করে রাষ্ট্রের উপর অতিরিক্ত চাপ লাঘব করা হলো।
তৃতীয়ত, দাসবন্দিদের যদি ছেড়ে দেওয়া হয় তবে তারা ফিরে গিয়ে প্রতিশোধ গ্রহণকল্পে পুনরায় যুদ্ধের পরিকল্পনা করতে পারে, যা বিজয়ী রাষ্ট্রের জন্যে হুমকি।
এই সকল কারণে ইসলাম দাসপ্রথাকে শর্তসাপেক্ষে সমর্থন করে।
মনিবের সামনে দাসির পর্দা থাকবে না বলতে?? এখানে পর্দা থাকবে না বলতে সতর ঢেকে রাখার যে সাধারন বিধান সেটা বজায় থাকবে কিনা?? নাকি মনিব তার ইচ্ছামত পোশাক পরাতে পারবে??
নাকি সাধারন যে সতর ঢেকে রাখার বিধান সেটা বজায় থাকবে??
উমর রাঃ কর্তৃক রাস্তায় দাসিকে মুখ ঢেকে রাখার জন্য প্রহারের বিষয়টা কি সঠিক??
দাসী কি মুনিবের সামনে পর্দা করতে পারবে? মুনিব কি তাহলে দাসীকে সম্পূর্ণ উলঙ্গ রাখবে?
দাসীর জন্য তার চেহারা ও চুল খোলা রাখা যাবে, তবে ফেতনা আশংকা থাকলে সম্পূর্ণ পর্দা করতে হবে..
দাসীর পর্দা নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত। তার মানে এই না যে তারা স্তন, পেট খোলা রাখবে। পুরুয়ের পর্দা যেমন নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত, কিন্তু পুরুষরা কিন্তু শুধু নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত পোশাক পরিধান করে না, সম্পূর্ণ পরে। দাসীর ক্ষেত্রেও ঠিক এরকম। দাসীদের জন্য মুখমন্ডল ঢাকা জায়েজ নেই।
দাসীর সাথে মনিবের যৌন সম্পর্ক বৈধ।