মহিলারা মসজিদে গেলে ফেতনা কমবে: ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর

প্রশ্নঃ আমাদের মাষ্টারপাড়া জামে মসজিদে মহিলাদের জুমআর নামাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রায় ৬ মাস চলছে। এটা নিয়ে অনেক বাধা আসছে। তাই কোরআন ও হাদিস দিয়ে আলোচনার জন্য অনুরোধ করছি।

উত্তরঃ রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘লা তামনায়ু ইমা আল্লাহি মাসাজিদাল্লাহ’ আল্লাহর মহিলা বান্দারা আল্লাহর ঘরে যেতে চাইলে বাধা দিবে না। কিন্তু ‘বুয়ুতু হুন্না খাইরুল্লা হুন্না’ তাদের জন্য বাড়িতে নামাজ পড়া ভালো। এটা হলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য প্রযোজ্য। আর ঈদের মাঠে মেয়েদেরকে যেতে উনি নির্দেশ দিয়েছেন।

পরবর্তী জামানার উলামায়ে কেরাম, ফুকাহায়ে কেরাম মেয়েদের মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়ায় যদি ফেতনার ভয় থাকে তাহলে নিষেধ করেছেন। মাকরূহ বলেছেন। মেয়েদের মসজিদে যাওয়া জায়েজ, মুবাহ কাজ অথবা উত্তম কাজ। এর বেশি না।

আর ফিতনা …। ফিতনা দুই রকম। একটা হলো, ঐ মেয়েটাই নামাজের নামে যেয়ে কোন অশালীন কাজ করবে। আর দ্বিতীয়টা হলো মেয়েটা অ-শালীন কিছু না করলেও মেয়েটা বাইরে যাওয়ার কারণে কোনো বখাটে যুবক তার সাথে অশালীন আচরণ করবে। এটা ফিতনা।

যদি এই রকম আশঙ্কা থাকে তাহলে মেয়েরা মসজিদে যাবে না। গেলে মাকরূহ হবে। এটা পূর্ববতী আলেম, ইমাম, ফকিহগণ বলেছেন। বর্তমান জমানায় উলামায়ে কেরামের দুই মত। উভয় দলের প্রত্যেকেই যা বলেছেন তা আল্লাহর দ্বীনের মহব্বতের কারণেই বলেছেন। সাধারণভাবে উলামায়ে কেরাম মেয়েদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করেন। কারণ হলো ফিতনার আশঙ্কা।

আর আরেক শ্রেণীর আলেম নারীদের মসজিদে যাওয়াকে বৈধ বলেন। অনুমোদন দেন। আমরা মনে করি, যারা যেটা বলেছেন সেটি নেক নিয়তেই বলেছেন। তবে সবার সাথে একমত হওয়া সম্ভব হচ্ছে না। দুটো বিষয় আমি এখানে বিবেচনা করার জন্য আপনাদেরকে অনুরোধ করছি।

একটা হলো রসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবীদের সুন্নত। আরেকটা হলো বর্তমান সামাজিক অবস্থা।

রাসুলুল্লাহ (সা.) মেয়েদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করেননি। কেউ নিষেধ করলে তাঁকে বাধা দিয়েছেন। আমরা অনেকে মনে করি আয়েশা (রা.) নিষেধ করেছেন, ওমর (রা.) নিষেধ করেছেন। এগুলো কোনটাই ঠিক না। ওমর (রা.) যেদিন শহীদ হন, ঐ দিন ফজরের নামাজে মহিলাদের অংশে তার স্ত্রী (আতীকা রাদিআল্লাহু আনহা) উপস্থিত ছিলেন। তাইলে উনি কি শহীদ হওয়ার পর কবর থেকে নিষেধ করেছেন?

উনার স্ত্রী নিয়মিত মসজিদে যেতেন। বোখারীর হাদিস বলছি। তিনি বলতেন, “তুমি মসজিদে যাও। তুমি জানো না এটা আমি অপছন্দ করি?” তাঁর স্ত্রী বলতেন, “আপনার যদি পছন্দ না হয়, আমাকে নিষেধ করেন”।

কারণ নারীদের মসজিদে যাওয়া ফরজ বা ওয়াজিব না। সাধারণ বৈধ কাজ। আর স্বামীর নির্দেশ পালন করা ফরজ। স্বামী যদি ফরজ কাজ করতে নিষেধ করে তাহলে মানা যাবে না। কিন্তু নফল ইবাদতে নিষেধ করলে তা মানতে হবে।

(উক্ত হাদীসের পরবর্তী অংশ) “তাইলে আপনি আমাকে বলেন, ‘যেও না’। (সেক্ষেত্রে) আমি আর যাব না”।

ওমর (রা.) বলেন, “আমি তো তোমাকে তা বলতে পারব না। কারণ মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, মেয়েরা মসজিদে যেতে চাইলে তাদের নিষেধ করো না। আমি ওমর তোমাকে কীভাবে নিষেধ করব? কিন্তু আমি এটাকে মাকরূহ জানি- আনা আকরামাহু’। তাঁর স্ত্রী বললেন, ‘আপনার মাকরূহ নিয়ে আপনি থাকেন। আপনি নিষেধ না করলে আমি যাব”।

ওমর (রা.) মাকরূহ জেনেছেন বলে তাঁর স্ত্রী মসজিদে যাওয়া বন্ধ করেননি। এই কথা গুলো ওমর (রা.) এর কথা।

এবার ওমর (রা.) এর ছেলের কথায় আসেন – আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)। তিনি একদিন কথায় কথায় বলেছিলেন, “রাসুলুল্লাহ (সা.) মেয়েদেরকে মসজিদে যেতে বাধা দিতে নিষেধ করেছেন’। তার এক ছেলে বললো, ‘আমি আমার বউকে মসজিদে যেতে দিব না। মসজিদে যেয়ে আড্ডা দেয়’। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) এক ধাক্কা মেরে ছেলেটাকে ফেলে দিলেন। বললেন, ‘আমি বলছি নবী (সা.) এর কথা। আর নবীজির কথার বিরুদ্ধে গিয়ে তুমি বলছ মসজিদে যেতে দিবে না? তোমার সাথে আমি আর জীবনে কথাই বলব না।”

ওমর (রা.) যখন তারাবীর জামাত করলেন, তখন মেয়েদের জন্য পৃথক জামাত করলেন। তারাবীর জামাত শুরু-ই হয়েছিল মেয়েদের নিয়ে। উবাই ইবনে কাব (রা.) রাসুল (সা.) এর কাছে এসে বললেন, “ইয়া রাসুলুল্লাহ, ‘আজকে আমি একটা কাজ করে ফেলছি। আপনাকে না বলে’।

তো কি কাজ করে ফেলছো? রাসুলুল্লাহ (স.) জিজ্ঞাসা করলেন।

বাড়িতে বউ ছেলেমেয়ে, পরিবারের মেয়েরা বলল, ‘আপনি হাফেজ মানুষ। আমরা তো হাফেজ না। রোজা রাখি। কিন্তু তাহাজ্জুত, কিয়ামুল লাইল পড়তে চাই । আমরা তো কুরআন বেশি জানি না। আপনি একটু ইমাম হয়ে কুরআন পড়েন। আমরা মুক্তাদী হয়ে শুনি’।

‘তা আমি বউ, মেয়েদেরকে নিয়ে রাত্রে তাহাজ্জুদ পড়ছি। কিয়ামুল লাইল পড়ছি আট রাকাত”।

রাসুল (সা.) কোনো আপত্তি করলেন না। তিনি এই কাজটাকে অনুমোদন করলেন।

ওসমান (রা.) এর জামানায়ও মেয়েদের তারাবীর নামাজ জামাতে পড়ার ব্যবস্থা ছিল। পরবর্তী যুগে নৈতিক অবক্ষয় ঘটেছে। ওলামায়ে কেরাম বলেছেন মেয়েদের ফেতনার ভয় থাকলে মসজিদে যাবে না। এটা খুব ঠিক কথা উনারা বলেছেন। হতে পারে নামাজের নামে মেয়েরা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। যেয়ে, একটা চিঠি দিয়ে আসল। একজনের সাথে একটু গোপনে প্রেম করে আসল। সে ধরনের পরিস্থিতিতে নামাজের নামে বাইরে গিয়ে মেয়েটা নষ্ট হয়ে গেল। অথবা মেয়েটা গেল আর একটা বখাটে তাকে উত্ত্যক্ত করল। এরফলে মেয়েটা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হল। এই ধরনের পরিবেশ থাকলে মেয়েরা নামাজের জন্য মসজিদে যাবে না। একটা নফল বা মুস্তাহাব তথা জায়েজ কাজ করার জন্য মেয়েরা এতটা ঝুঁকি নেবে না।

কিন্তু বর্তমান অবস্থা কেমন?

আলেমরা নিষেধ করেন যে ফিতনা হবে। আমার মাঝেমধ্যে মজা লাগে। বর্তমানে আবার সকল হুজুর, সকল ওয়াজ মাহফিলে বলে, ‘মেয়েদের পর্দার সাথে ওয়াজ শুনার ব্যবস্থা আছে’। কেউ বলেন না যে ফেতনা হবে।

আর যে ফেতনার কথা বলা হয় ওয়াজ-মাহফিলে আসলে ঐ ফেতনাই হয়। আমার জানা আছে, ওয়াজ-মাহফিলের নামে এসে সবাই ওয়াজ শুনলেও মাঠের একপাশে একটা ছেলে আর মেয়ে গল্প করছে, এ’রকম ঘটে। বরং মসজিদে যাওয়ার চেয়ে ওয়াজে এটা বেশি হয়। ওয়াজ মানেই একটা মেলা। আর ওয়াজ মাহফিলের চেয়ে মেলায় কিন্তু লোকজন বেশি থাকে।

এখন ওয়াজের নামে এসে ছেলেমেয়েরা আড্ডা দেয়, এই কারণে কোনো হুজুর কি বলেছেন, ‘ওয়াজ-মাহফিলে মেয়েদের ওয়াজ শোনার ব্যবস্থা করা নাজায়েজ?’ না, কেউ বলে নাই। মসজিদে গেলে তুলনামূলকভাবে ততটা ফেতনা হয় না। ফেতনা যা কিছু হয় সবচেয়ে বেশি হয় বাড়ির ভেতরে, রাস্তা-ঘাটে, বিশ্ববিদ্যালয়ে, কলেজে। বাস, ট্রেন, গাড়িতে ধর্ষনের মতো দুর্ঘটনার কথা শোনা যায়। কিন্তু মেয়েদের মসজিদে যাওয়ার কারণে ফেতনা বেড়েছে, এমনটা আজ পর্যন্ত শুনেছেন?

এজন্য আমরা বিশ্বাস করি রাসুল (সা.) যে মডেল দিয়েছেন সেটাই গ্রহনযোগ্য একমাত্র মডেল। সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে ফেতনার ভয় থাকলে মেয়েরা মসজিদে যাবে না। মেয়েদের মসজিদে যাওয়া জরুরী কিছু না। মেয়েদের ঘরে নামাজ পড়া উত্তম।

তবে মুসলমানদের জন্য প্রতিটি মসজিদে মেয়েদের জন্য ব্যবস্থা করা সুন্নত। মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত মসজিদে মেয়েরা যেতে পারবে না, এই রকম কথা কেউ বলেননি।

হানাফি মাজহাব, শাফেঈ মাজহাব, হাম্বলী মাজহাব, মালেকী মাজহাব – প্রত্যেক মাজহাবের প্রত্যেক ফেকাহের কিতাবে আছে যে মেয়েরা মসজিদে গেলে কীভাবে কাতার হবে। প্রথমে পুরুষদের কাতার, এরপর শিশু-কিশোরদের কাতার, এরপর হিজড়াদের কাতার, এরপর মেয়েদের কাতার। মসজিদে যদি যাওয়াই না যাবে তাহলে কাতারের মাসআলা কেন?

হ্যাঁ, মেয়েদের ঘরে পড়া উত্তম। ঠিক আছে। কিন্তু যে মেয়েগুলো বাজারে আছে, গার্মেন্টসে আছে, বাইরে আছে, আজান দিয়েছে। ওরা কী করবে? রাস্তায় নামাজ পড়বে? কাজা করবে? বলেন তো কাজেকর্মে বাইরে আসা নারীদের নামাজের ব্যাপারে হুজুরদের মাসআলা কী? কাজা করা জায়েজ? এখন যদি কোন হুজুর বলেন, যেহেতু মেয়েটা ঘরে না থেকে বাজারে গেছে ওর আর নামাজ পড়ার অধিকার-ই নেই, তাহলে কেমন হবে?

তাহলে যে পুরুষটা দাঁড়ি ছেঁচেছে, তারও নামাজ পড়ার অধিকার নেই? যে পুরুষটা মদ খায়, তারও নামাজ পড়ার অধিকার নেই? যে পুরুষটা সুদ খায়…? এই রকম মাসআলা কি আছে?

মেয়েরা মসজিদে যাবেই না, মসজিদে তাদের জন্য কোনো ব্যবস্থা-ই থাকবে না, এমনটা কিন্তু কখনো ঘটেনি। আমরা বাংলাদেশীরা এই উদ্ভট সিস্টেম চালু করেছি।

মেয়েদের জন্য নামাজের ব্যবস্থা থাকবে – এটাই রাসুল(সা.), সাহাবী, তাবেয়ী….দের সুন্নত। আপনারা ‘মুসন্নাফে ইবনে আবি শাইবা’ পড়েন। সাহাবী-তাবেঈনদের যুগেও মেয়েরা মসজিদে যেত, মসজিদের অভ্যন্তরে ইতেক্বাফ করত। জায়েজ নাজায়েজের মাসআলা ছিল। কেউ বলেছে জায়েজ, কেউ বলেছে নাজায়েজ, কেউ বলেছে অনর্থক। কিন্তু টোটাল সিস্টেম কখনো বন্ধ হয়নি।

আমরাও বলব, ‘মেয়েদের জন্য ওয়াক্তিয়া নামাজ অবশ্যই ঘরে পড়া উত্তম’। তবে কোন মেয়ে যদি বাজারে যায়, মাঠে যায়, সেখানে নামাজ তাদেরকে অবশ্যই পড়তে হবে। সেক্ষেত্রে তারা হাটে, মাঠে, ঘাটে কিংবা রাস্তায় নামাজ পড়বে? নাকি, মসজিদে তাদের জন্য যায়গা থাকা উচিত?

বিশ্বাস করেন, মসজিদে দানের টাকা মেয়েরাই বেশি দেয়।

দশ বারো বছর আগের কথা। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে (মানে, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে) মেয়েরা দাবি করলো, জুমআর নামাজে তাদের জন্য নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। অনেকে আপত্তি করলেন। বললেন, ফেতনা হবে। মাসআলা আমার কাছে আসল। আমি তখন জুনিয়র টিচার। আমি বললাম, “ফেতনার ভয় থাকলে মসজিদে যাওয়া যাবে না। আমি এ ব্যাপারে শতভাগ একমত। কিন্তু আমাদের ছাত্রীরা মসজিদে গেলে ফেতনা বাড়বে নাকি কমবে সেটা নিয়ে আসুন আমরা একটু বিবেচনা করি।

শুক্রবারে ছুটি থাকে। আমাদের ছাত্রছাত্রীরা জোড়ায় জোড়ায় গাছের ছায়ায় বসে গল্প করে। ওরা আমাদের বলল, স্যার, শুক্রবার দিন আমরা গল্পটা একটু কমিয়ে তাড়াতাড়ি হলে যাব। যেয়ে ওজু, গোসল করে মসজিদে যাব। আমরা ঘন্টা দুয়েক মসজিদে কাটাবো। এতে কি ফেতনা বাড়ল? নাকি, কমলো?

আচ্ছা, আমাদের কি কোনো ক্ষমতা আছে ঐ যে জোড়ায় জোড়ায় গাছতলায় বসে থাকা ছেলেমেয়েদের নিষেধ করব? ওরা সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে থাকলে ওদের নিষেধ করার ক্ষমতা আছে? আইন, সংবিধান, বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কি এই ক্ষমতা আমাদের দিয়েছে? ওরা ইচ্ছে করে বলেছে স্যার, আমরা আট/দশ ঘন্টা ফেতনা করতাম একটু কমিয়ে ঘন্টা তিনেক করতে চাই। এতে কি ফেতনা বাড়ল? না, কমলো?”

কাজেই আমাদের মাসলা বুঝতে হবে।

অবশ্যই ফেতনার ভয় থাকলে, অ-শালীনতার ভয় থাকলে, ইভ-টিজিংয়ের ভয় থাকলে মেয়েরা মসজিদে যাবে না। কিন্তু বর্তমানে মেয়েদের প্রেম করার জন্য কি মসজিদে যাওয়া লাগে? ঘরে বসে, মোবাইলেই তো সব হচ্ছে। বরং মসজিদে যতক্ষণ থাকবে ততক্ষণ একটু ভালো হওয়ার সম্ভবনা থাকে।

ফুরফুরার পীর আব্দুল হাই সিদ্দিকী ১৯৪০ সালে মেয়েদের জন্য মহিলা মাদরাসা, মহিলা স্কুল বানাইছেন। যখন বাংলার প্রায়সব আলেম মেয়েদের কোনো লেখাপড়াই না জায়েজ বলতেন, যখন কোনো মহিলা মাদরাসাও ছিল না। ফুরফুরার পীর আব্দুল কাহহার সিদ্দিকী ১৯৮০/৮২ সাল থেকে তাঁর নিজের মসজিদে মেয়েদের তারাবী এবং ঈদের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। এই ব্যবস্থা এখনো চালু আছে। এবং সারা বিশ্বেই এটি চলে।

মেয়েদের পর্দার সাথে দ্বীন পালন করার যে অধিকার, তা সংরক্ষণ করতে হবে। বাস্তবতা হলো, মেয়েরা মসজিদে এসে ভালো হয়। খারাপ হয় না। ফেতনা যতটা করে তারচেয়ে ঢের বেশি ছাড়ে।

আমি সৌদি আরব থেকে ’৯৮ সালে এসেছি। আমার নিজের বাড়ির মসজিদে তখন থেকেই মেয়েদের জন্য তারাবীর ব্যবস্থা ছিল। একটা ভাঙ্গা চালাঘরের ভেতরে। পরবর্তীতে আমরা তাদের জন্য জুমআর নামাজের ব্যবস্থাও করি।

এখন মসজিদের দোতলার পুরোটাই মেয়েদের সেকশন। অনেকে অনেক কথা বলেছেন। এখনো বলেন। তবে আপনারা আমাদের গোবিন্দপুর গ্রামে যেয়ে দেখবেন। আমার বেগম সাহেবাই প্রথম প্রথম খুব রাগ করতেন। বলতেন, “এই মেয়েরা মসজিদে আসে তারাবী পড়তে। এরা বোরকা পড়তে জানে না। পর্দা করতে জানে না। খালি অকবক করে। এই সব মেয়েদের ধরে ধরে আপনি মসজিদে নামাজ পড়িয়ে মুসল্লি বানাচ্ছেন? দুনিয়ার আকাম করেছেন।” আমি নিরব থেকেছি। আমার স্ত্রী দুই তিন বছর পরে এ’ব্যাপারে আমাকে বলেন, “না, যারা দুই বছর ধরে আসছে সবাই এখন মাশাআল্লাহ সুন্দর পর্দা করা শিখেছে।”

আমাদের গোবিন্দপুর গ্রামে যেয়ে দেখবেন, যারা নিয়মিত মসজিদে যায়, তারা পহেলা বৈশাখের জন্য অস্থির হয় না। তারা ঈদের দিনে অশালীন পোশাকে বেরোতে চায় না। তাদের পারিবারে শান্তি বেড়েছে। স্বামী-স্ত্রী মধ্যে ঝগড়া কমে গেছে। তাদের ভেতরে অনেক তাকওয়া তৈরী হইছে।

মেয়েদেরকে তো দ্বীন শেখার সুযোগ দিতে হবে। এই পর্যাযে এসে হুজুররা বলবেন, ‘স্ত্রীদেরকে স্বামীরাই শেখাবে’। হ্যাঁ, স্বামী শেখাবে, এটা হতে পারে। স্বামী তার স্ত্রীকে দ্বীন শেখাতে যে পারে না তা নয়। এটি যে কেউ করেও না, সেটা না।

এ’ব্যপারে আসল কথা হলো, এটা ইসলামের নির্দেশ নয়। ইসলামে কোথাও বলা হয়নি, স্বামী স্বীয় স্ত্রীকে দ্বীন শেখাবে। পিতা-মাতা সন্তানকে শেখাবে, এটা ঠিক আছে। স্বামী-স্ত্রীকে দ্বীন শেখার পরিবেশে নিয়ে যাবে।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) ঘরে এসেছেন। তাঁর স্ত্রী তাঁকে বলেছেন, “আমি নবীজিকে (সা.) ওয়াজ করতে শুনলাম। তিনি দান করতে বলেছেন। আমি তো বড়লোক।”

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এর স্ত্রী বড়লোক ছিলেন। আর আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) ফকির। মক্কা থেকে হিজরত করে এসেছেন। টাকাপয়সা কিছুই নাই। তাহলে বউ কি করে বড়লোক হলেন? বউ কুটির শিল্পের কর্ম করতেন। অনেক টাকা জমিয়েছেন। সোনার গয়না কিনেছেন। বাংলাদেশে যদি হত, যে কোনো কৌশলে স্বামী ওগুলো নিয়ে নিত। কিন্তু সাহাবীরা তো তা ছিলেন না।

এখন আমাদের মহিলারা কাজ করেন না। অথবা স্বামীর উপর নির্ভর করেন। সাহাবী মহিলারা কর্ম করতেন। আবার যদি মহিলারা কর্ম করে আয় উপার্জন করেন স্বামীরা ভাগ বসাচ্ছেন। সাহাবীরা তা করতেন না।

যয়নব (রা.) বলেছেন, “আমার তো টাকা আছে। তুমি তো ফকির, গরিব। এখন আমি দান করব। তোমাকে দান করলে সওয়াব হবে কিনা নবিজীর কাছ থেকে শুনে আসো? তাইলে আমি তোমাকে দিব। না হলে অন্য গরীবদেরকে দিব।”

তখন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা,) বললেন, ‘আমি শুনে আসব কেন? তুমি গিয়ে শুনে আসো’।

 

(অনুলিখকের সংযোজন: আমরা জানি, গরিব স্বামীকে দান করার জন্য রাসুলুল্লাহ (স.) স্ত্রীদেরকে অনুমতি দিয়েছেন।)

এ ধরনের আরো লেখা