ইসলামিক ফাইন্যান্স: কল্পকথা বনাম বাস্তবতা
এডিটর’স নোট: অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রিসার্চ ফেলো শায়খ ড. মোহাম্মদ আকরাম নদভী হাদীস শাস্ত্রে নারী ইসলামী স্কলারদের অবদান নিয়ে সাড়া জাগানো গবেষণার জন্য সুপরিচিত। ২০০৬ সালে অক্সফোর্ডে প্রতিষ্ঠিত আল-সালাম ইনস্টিটিউটের তিনি সহ-প্রতিষ্ঠাতা। Islamic Finance: A Myth or A Reality? শীর্ষক নিবন্ধে তিনি বিদ্যমান ইসলামিক ফাইন্যান্সের তাত্ত্বিক ভিত্তির সংকটগুলো তুলে ধরেছেন। সিএসসিএস-এর পাঠকদের জন্য নিবন্ধটির সংক্ষেপিত অনুবাদ করেছেন মাসউদুল আলম।
*****
গত প্রায় তিন দশকের পরিক্রমায় ইসলামিক ফাইন্যান্স একটা বিশাল ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে গড়ে উঠেছে। এই অর্থনৈতিক পদ্ধতি অনুমোদিত হিসেবে গ্রহণ করার ব্যাপারে অনেক সাধারণ মুসলমানই দ্বিধাগ্রস্ত। আমার দৃষ্টিতে এর যুক্তিসঙ্গত কিছু কারণও রয়েছে। ইসলামিক ফাইন্যান্সিয়াল সিস্টেমের আওতায় ব্যাংক ও বিনিয়োগকারী কোম্পানিগুলো পরিচালিত হওয়া কিংবা এসব প্রতিষ্ঠান কর্তৃক মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সর্বস্তরের গ্রাহকদের আকৃষ্ট ও সন্তুষ্ট করতে পারাই শেষ কথা নয়।
অর্থ (money) কিছুটা বিমূর্ত ও প্রতীকী হলেও এটা বাস্তব ও সুনির্দিষ্ট ব্যাপারও বটে। এটা শুধু সঞ্চয় ও মূল্যের বস্তুগত চিহ্নই (sign) নয়, বরং বিভিন্ন ধরনের পণ্য ও সেবা মূল্যের বিনিময় ও বণ্টনের উপায়ও বটে। তাই বলা যায়, সকল মানবীয় সম্পর্কের মধ্যেই এর উপস্থিতি রয়েছে। এটি যে কোনো ধরনের পণ্য ও সেবা বিনিময়ের সাথে কোনো না কোনোভাবে সংযুক্ত।
তাই মুসলমানদের নিজেদের মধ্যে ও চারপাশে যে অর্থের প্রবাহ এবং যে অর্থের মাধ্যমে লেনদেনগুলো সংঘটিত হচ্ছে, তা গ্রহণযোগ্য ও নিরাপদ কিনা – সেটা জানাই ইসলামের দৃষ্টিতে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো কাজ গ্রহণযোগ্য কিনা, তা জানার জন্য আমাদেরকে খোলা মনে চিন্তা করা দরকার। এ বিষয়ে আমরা আরো একটা পদক্ষেপ নিতে পারি। সেটা হলো, এ ধরনের কাজ কতদূর পর্যন্ত সম্পন্ন করা সম্ভব, তা যাচাই করা।
দুনিয়াতে আমরা তিনটি পৃথক ব্যবস্থা দেখতে পাই। এগুলো পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়, বরং অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এরমধ্যে সর্ববৃহৎ ব্যবস্থাটি সমগ্র সৃষ্টিজগৎ তথা জড় ও জীব, মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী, মুসলিম ও অমুসলিম নির্বিশেষে সবকিছুর সমন্বয়ে পরিচালিত। আমরা এটাকে ‘প্রাকৃতিক ব্যবস্থা’ বলতে পারি। সময় এবং কালও এই ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত। আমরাসহ সবকিছুই এর মধ্যেই রয়েছে। এটা কারো ইচ্ছা বা অনিচ্ছার ব্যাপার নয়। পাশ্চাত্যের আধুনিকতাবাদীরা একে প্রকৃতির নিয়ম হিসেবে অভিহিত করে।
এই ‘প্রাকৃতিক ব্যবস্থা’র অধীনে ঐশ্বরিক বিধিনিষেধ সংবলিত একটা ‘ধর্মীয় ব্যবস্থা’ আছে। আল্লাহ প্রেরিত নবী-রাসূলগণের মাধ্যমে মানবজাতি এটি লাভ করেছে। এই ব্যবস্থাটি বিশেষ করে মানুষের ইচ্ছাশক্তির সাথে সম্পর্কিত এবং এটি মানুষের সচেতন, স্বেচ্ছাপ্রবৃত্ত ও ঐকান্তিক আনুগত্য দাবি করে।
সবশেষে রয়েছে ঐশ্বরিক নির্দেশনা সংবলিত ‘ইসলামী ব্যবস্থা’। এই ব্যবস্থা নির্দিষ্টভাবে মুসলমানদেরকে ঐশীগ্রন্থ ও রাসূলের (সা) শিক্ষা অনুযায়ী একটি নির্ধারিত পথে চলতে এবং অন্য সমস্ত পথ পরিহার করে চলতে বলে।
এই তিনটি ব্যবস্থা একটি একক বিশ্বের অধীনে একইসাথে বিদ্যমান। ব্যক্তি বা সমাজের জন্য ‘প্রায়োগিক’, ‘দরকারী’, ‘যুক্তিসম্মত’ বা ‘উপকারী’ কোনো কিছু, যা অমুসলিমরা গড়ে তুলেছে, তা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক হবেই, এমন নয়। মুসলমানরা অমুসলিমদের কোনো পদ্ধতির সাথে অভ্যস্ত হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে তারা কোনো বিষয়ে কীভাবে সিদ্ধান্ত নেবে? এটা সহজ কোনো প্রশ্ন নয়। মনে করুন, কোনো নির্দিষ্ট আর্থিক পদ্ধতি বা লেনদেন অনৈসলামী হওয়ার কারণে আমরা তা বর্জন করতে যাচ্ছি। যেহেতু এর উৎপত্তি ‘পশ্চিমা’ বা ইসলাম-বহির্ভূত উৎস থেকে – নিছক এই যুক্তিতে আমরা তা বর্জন করতে পারি না। অবশ্যই এরচেয়ে ভালো কোনো যুক্তি আমাদের থাকতে হবে।
ইসলামী ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য দরকারী নিয়মনীতি প্রতিষ্ঠা করার মানে এই নয়, আমরা প্রাকৃতিক ব্যবস্থায় বিদ্যমান শর্তগুলো থেকে রেহাই পেয়ে যাবো। তাই, এইসব ইসলামী নিয়মনীতি অবশ্যই প্রশস্ততার মানদণ্ডে প্রয়োগ করতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, বাধ্যগত পরিস্থিতিতে সাধারণভাবে নিষিদ্ধ ব্যাপারও উক্ত পরিস্থিতি বলবৎ থাকা সাপেক্ষে অনুমোদনযোগ্য। এ ধরনের অনুমোদন সাময়িক সময়ের জন্য এবং এটা একটা ব্যতিক্রম। সাধারণভাবে ইসলামে নিষিদ্ধ কোনো কিছুতে সন্তুষ্ট না থাকার জন্য মুসলমানদেরকে বলা হয়েছে। কেউ এ ধরনের ইচ্ছা পোষণ না করার একমাত্র নির্ভরযোগ্য প্রমাণ হলো, বাধ্যগত পরিস্থিতিতে পতিত কোনো মুসলমান সেখান থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবে।
যেহেতু দুনিয়া জুড়ে মুসলমানরা খুবই দুর্বল, তাই তাদের নিজেদের মতো কিছু করার সুযোগ নেই – এই যুক্তিতেও যদি আমাদেরকে বিদ্যমান আর্থিক পদ্ধতি বা লেনদেনগুলোকে মেনে নিতে হয়, তারপরেও বৈধতা দেয়ার উদ্দেশ্যে এগুলোকে ‘ইসলামিক ফাইন্যান্স’ হিসেবে অভিহিত করার মাধ্যমে কিংবা অন্য কোনো উপায়ে গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল অর্ডারের কাছে নিজেকে সমর্পণ করে দিতে আমরা বাধ্য নই।
ইসলামিক ফাইন্যান্স এবং আর্থিক পদ্ধতিগুলোর কাছে আমরা প্রত্যাশা করতে পারি, তারা নিজেদের যাচাই করে দেখবে কিংবা নতুন কোনো পদ্ধতি উদ্ভাবন করবে; যার মাধ্যমে মুসলমানরা অন্তত আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ ব্যাপারগুলো এড়িয়ে চলতে পারে। আর সর্বোচ্চ এটুকু আশা করতে পারি, যেন এর মাধ্যমে আল্লাহ কর্তৃক অনুমোদিত ব্যাপারগুলো আরো সহজ ও সুবিধাজনকভাবে সম্পন্ন করা সম্ভবপর হয়। এটা নিছক কোনো কথার কথা নয়। মুসলমানরা যে ধরনের লেনদেনকে নিষিদ্ধ বলে বিশ্বাস করে, সেগুলোকে ইসলামী অর্থনীতিবিদরা বৈধ হিসেবে চালিয়ে দেয়ার কোনো না কোনো উপায় উদ্ভাবন করলেও তারা তা গ্রহণ করবে না।
ইসলাম কীভাবে এ সংক্রান্ত প্রশ্নের ফায়সালা করে?
এ প্রশ্নের সমাধান করতে গিয়ে লোকেরা প্রায়ই ইসলামের প্রামাণ্য উৎস তথা কোরআন ও সুন্নাহ এবং এই উৎসের আলোকে মুসলিম স্কলারদের গৃহীত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত (rulings) – এতদুভয়ের মধ্যে তালগোল পাকিয়ে ফেলে। সাধারণ মুসলমানরা যখন ইসলামের প্রাথমিক উৎসের সাথে পরবর্তীতে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো মিলাতে চায়, তখন এই বিভ্রান্তি মারাত্মক জটিলতা তৈরি করে। এটা তাত্ত্বিকভাবেও হতে পারে, আবার বাস্তবেও হতে পারে। আলোচনার সুবিধার্থে কোরআন-হাদীসের আলোকে পরবর্তীকালে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোকে (rulings) আমি ‘ডকট্রিন’ হিসেবে অভিহিত করবো। আর কোরআন-হাদীস তথা ইসলামের প্রাথমিক উৎসকে ‘গাইডেন্স’ হিসেবে অভিহিত করবো।
এখন আমরা বলতে পারি, ডকট্রিন হচ্ছে ইসলামের আইনী ও সাংস্কৃতিক এমন এক ধরনের ট্র্যাডিশন, যা আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। আমরা এ ডকট্রিনগুলো অধ্যয়ন করি, এগুলোর প্রতি সম্মান দেখাই, এসব থেকে শিক্ষাগ্রহণ করি। এরচেয়ে ভালো কিছু জানা না থাকলে আমরা আমাদের সামর্থ্যের সর্বোচ্চ হিসেবে এগুলো মেনে চলি। অথচ আল্লাহ তায়ালা তাঁর অনুগত বান্দাদেরকে পরকালে যে পুরস্কার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেটা আমাদের অনুসৃত ডকট্রিনের ভিত্তিতে নয়, বরং নিশ্চিতভাবেই তা নির্ভর করবে প্রাথমিক উৎসে বিদ্যমান গাইডেন্স অনুসরণের উপর। অবশ্য, প্রায় সময় সাধারণ মুসলমানরা সরাসরি গাইডেন্সকে মেনে চলার ক্ষেত্রে ডকট্রিন অনুসরণ করাকেই সবচেয়ে ভালো উপায় বলে মনে করে। ‘ইলম’ (জ্ঞান) ও ‘তাকওয়া’র (খোদাভীতি) ঘাটতি এর কারণ।
কোরআন ও সুন্নাহর মধ্যে গাইডেন্স যেভাবে রয়েছে, তা মূলত দুই প্রকার। এক প্রকার হচ্ছে সুনির্দিষ্ট, পরিষ্কার ও বোধগম্য নির্দেশনা, যেমন – এটি করো কিংবা ওটা করো না। অন্য প্রকার হচ্ছে কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য বা কল্যাণ লাভের জন্য নির্দেশ বা উৎসাহব্যাঞ্জক নির্দেশনা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এগুলো হচ্ছে সদগুণ তথা মূল্যবোধ সংক্রান্ত ব্যাপার। যেমন – সৎ, সহৃদয়, স্বচ্ছ, ন্যায়পরায়ণ ও বিনয়ী হওয়া ইত্যাদি। এই সদগুণগুলো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রথম প্রকারের নির্দেশনার সাথে সম্পর্কিত। এইসব সদগুণের সামষ্টিক ফলাফল তথা সর্বোচ্চ সদগুণ হলো ‘ইবাদত’। মূলত এ জন্যই মানবজাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
একজন গরিব লোকের কথা চিন্তা করুন, যার কাছে দুটি সাইকেল আছে। একটি তিনি নিয়মিত ব্যবহার করেন। আরেকটি অলস পড়ে থাকে। তিনি পড়ে থাকা সাইকেলটি ছয় মাসের জন্য ভাড়ায় খাটানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। ফলে এটি তার উপার্জনের একটি উৎসে পরিণত হলো। ভাড়ায় খাটানোর মাধ্যমে তিনি কিছু ঝুঁকি গ্রহণ করেছেন। যেমন – ভাড়া চলাকালীন সময়ে সাইকেলটি ব্যবহারের ফলে এর স্বাভাবিক ক্ষয় হবে এবং স্থায়িত্ব কমে যাবে। হয়তো সাইকেলটি স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে যাবে ইত্যাদি। তিনি যে পদ্ধতিতে ভাড়া বাবদ অর্থ আয় করছেন, তা বৈধ।
এবার একজন ধনী লোকের কথা চিন্তা করুন, যার প্রচুর টাকা-পয়সা আছে। এর এক অংশ তিনি দৈনন্দিন কাজে ব্যয় করেন। বাকি অংশ উদ্বৃত্ত পড়ে থাকে। তিনি তার এই বাড়তি অর্থ ছয় মাসের জন্য ভাড়ায় খাটানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। ব্যবহারের ফলে অর্থের স্থায়িত্ব তেমন না কমলেও সময়ের ব্যবধানে এর ক্রয়ক্ষমতার হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। তাছাড়া অর্থ একেবারেই ফেরত না আসা কিংবা নির্ধারিত সময়ে ফেরত না আসার ঝুঁকিও রয়েছে। এ ধরনের আরো ঝুঁকি থাকতে পারে।
অর্থ ভাড়ায় খাটানোর ক্ষেত্রে এইসব ঝুঁকি থাকা সত্বেও এর মাধ্যমে উপার্জন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই ধরনের কাজের নিন্দা করতে গিয়ে কোরআনে নজীরবিহীনভাবে কঠোর ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। যেসব ব্যক্তি ‘রিবা’ গ্রহণ করে, তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা) পক্ষ থেকে যুদ্ধ ঘোষণার হুশিয়ারি দেয়া হয়েছে। তাই বলা যেতে পারে, এই কাজের শাস্তি শুধু পরকালেই হবে, এমন নয়।
যে উদাহরণটি দেয়া হলো, সেখানে অর্থ ভাড়া দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অর্থাৎ – সুদের বিনিময়ে অর্থ ঋণ দেয়া। এটা সহজেই বুঝা যায়। তবে আধুনিক ব্যাংকগুলো নিছক তা করে না। ব্যাংক সরাসরি নিজের মালিকানা কিংবা আমানতকারীদের প্রতিনিধি হিসেবে যে অর্থের নিয়ন্ত্রণ লাভ করে, তাকে নিছক ইন্টারেস্টের বিনিময়ে ঋণ দেয়া বলা যায় না। বরং, ব্যাংকগুলো আমানত সংগ্রহ কিংবা অন্য কোনোভাবে যে অর্থের মালিকানা অর্জন করে নাই, সে ধরনের অর্থ সুদের বিনিময়ে ঋণপ্রদানের মাধ্যমে তারা ‘অর্থ তৈরি’ও (create money) করে। প্রতিটি অপরিশোধিত ঋণ এবং এর সুদ (তা পাওয়ার আগেই) ব্যাংকের সম্পদ হিসেবে হিসাবের খাতায় নথিভুক্ত করা হয়। ধরে নেয়া হয়, এগুলো নিষ্পত্তিযোগ্য সংরক্ষিত অর্থ (disposable reserve of money)। ফলে এই অর্থ আবারো ঋণ হিসেবে বিতরণযোগ্য। এই ব্যাপারটা বার বার ঘটতে থাকে। রাষ্ট্রশক্তির সকল পর্যায় থেকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে এই পদ্ধিতিতে ঋণ প্রদানের দায়িত্ব নিতে নির্দেশ দেয়া হয়। কারণ, রাষ্ট্রের কাছে এই পরিমাণ অর্থ নেই। তাই ঋণের বিনিময়ে চার্জ গ্রহণ করার কথাও রাষ্ট্র বলে।
অথচ এটা সত্য, এই অপরিশোধিত ঋণ ব্যাংকগুলো ফেরত নাও পেতে পারে। ফলে যারা ব্যাংকে টাকা জমা রেখেছে, তাদের জন্যও টাকা ফেরত না পাওয়ার আশংকা তৈরি হয়। সাধারণত এ ধরনের পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র আমানতকারীদের পরিবর্তে ব্যাংকের স্বার্থই রক্ষা করে। সরকার আমানত রক্ষার নিশ্চয়তা প্রদানের দাবি করে। কিন্তু আদতে তারা আমানতকারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া আতঙ্কের পরিণতি থেকে ব্যাংককে রক্ষা করে। আতঙ্কের কারণে সবাই ব্যাংকের নিকট সঞ্চিত অর্থ ফেরত চায়। কিন্তু গ্রাহকের অর্থ নিরাপদ রাখার বাধ্যবাধকতা থাকা সত্বেও বাস্তবে কোনো ব্যাংকের কাছেই একসাথে সবাইকে তাদের গচ্ছিত অর্থ ফেরত দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত অর্থ থাকে না। ব্যাংকের পক্ষে সরকার গ্রাহকের আমানতের যে নিশ্চয়তা প্রদানের দাবি করে, সে অনুযায়ী দুনিয়ার কোন সরকার এ ধরনের পরিস্থিতিতে সকল অর্থ ফেরত দেয়?
‘রিবা’র নিষেধাজ্ঞা হলো কোরআন ও সুন্নাহর নির্দিষ্ট, পরিষ্কার ও বাস্তব একটা নির্দেশনার উদাহরণ। প্রতারণা ও ছলচাতুরী ইত্যাদি পরিহার করে দয়া ও কল্যাণকামিতার নিদর্শন হিসেবে পক্ষপাতহীন ও ন্যায্যভাবে লেনদেন করার জন্য এক ধরনের সর্বজনীন উৎসাহ প্রদানের সাথে এই নির্দেশনার সম্পর্ক রয়েছে। স্বাভাবিক মানবীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে নৈতিক মানদণ্ড প্রযোজ্য, অর্থনৈতিক আচরণ কোনোক্রমেই এর বহির্ভূত কোনো ব্যাপার নয়। ‘রিবা’র নিষেধাজ্ঞা জুয়া এবং ফটকাবাজির নিষেধাজ্ঞার সাথেও সম্পর্কিত। দুর্বলচেতা ও অপ্রাপ্তবয়স্ক – যারা নিজেদের কারবার সম্পর্কে ভালো বুঝে না কিংবা এগুলো চালানোর দক্ষতা নেই – এমন লোকদেরকে শোষণ করার নিষেধাজ্ঞার সাথেও এটি সম্পর্কিত হতে পারে।
আধুনিক সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিস্তৃত ধ্বংসাত্মক একচেটিয়াত্বের একটা উদাহরণ হলো – ব্যাংকগুলোকে ‘অর্থ তৈরি’ (যে অর্থের অস্তিত্ব বাস্তবে কোথাও নেই) এবং এই অর্থ ঋণ হিসেবে বিতরণের বিপরীতে চার্জ আরোপ করার ক্ষমতা প্রদান।
মুসলিম স্কলারগণ ‘গাইডেন্সে’র আলোকে যেসব ‘ডকট্রিন’ গড়ে তুলেছেন, সেগুলোর প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল ‘গাইডেন্স’কে উপস্থাপন করা, একে আরো সহজবোধ্য করে তোলা। বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের নানাবিধ স্থানীয় প্রথার কারণে বাস্তব জীবনের সদা-পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে গাইডেন্সকে বাস্তবায়ন করা ছিল এর উদ্দেশ্য। ‘গাইডেন্স’ থেকে এক ধরনের যৌক্তিক স্বাতন্ত্র্য ও স্বাধীনভাবে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক কিংবা আইন দর্শনের জন্য কাজ করতে ‘ডকট্রিন’ গড়ে তোলা হয়নি।
কিন্তু এটি করার আদৌ কী প্রয়োজন ছিল?
আমরা যদি যথাযথভাবে প্রশ্ন করতে পারি এবং এর উত্তর খুঁজে বের করতে পারি, তাহলে ডকট্রিনের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আমরা তাৎপর্যপূর্ণ ধারণা অর্জন করতে পারবো।
মানব সমাজের সর্বজনীন অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জানি, কোনো নিয়মকানুনকে পক্ষপাতমুক্তভাবে বাস্তবায়ন করতে চাইলে দুটি কাজ করতে হবে: ১) ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে একই রকমভাবে এটি প্রয়োগ করতে হবে, ২) প্রয়োগকৃত বিধানের যথেষ্ট নমনীয়তা (flexibility) থাকতে হবে। যাতে নির্দিষ্ট কোনো পরিবেশে এটি প্রয়োগের সুযোগ থাকে।
যদি কোনো নির্দিষ্ট ঘটনার পরিণতিকে উপেক্ষা করে আপনি বিধানটি প্রয়োগ করতে যান, তাহলে কোনো না কোনা মাত্রায় অবিচার করার ঝুঁকিতে পড়ে যাবেন। অন্যদিকে, ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে একই বিধান একই পদ্ধতিতে প্রয়োগ না করলে স্বেচ্ছাচারিতা ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগের ঝুঁকি থাকে। এই দুটি অবশ্য করণীয়ের মধ্যে সমন্বয়ের পথ খুঁজে বের করা খুবই কঠিন কাজ। তাই শুধু এই প্রচেষ্টার জন্যই মানুষকে আখেরাতে পুরস্কার দেয়া হবে। আর যদি উদ্ভাবিত উপায়টি সঠিক হয়, তাহলে দ্বিগুণ পুরস্কার রয়েছে।
কোরআন এবং সুন্নাহর কোনোটিতেই দার্শনিক, ধর্মতাত্ত্বিক, সমাজতাত্ত্বিক, রাজনৈতিক, আইনগত, অর্থনৈতিক কিংবা অন্য কোনো প্রকারের ডকট্রিন নেই। যদি থেকেও থাকে, তাহলে কোরআন ও সুন্নাহর সকল গাইডেন্সকে একত্রিত করলে দেখা যাবে, আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবনা ও যুক্তি খুব অল্প পরিমাণেই আছে। কোরআন-হাদীসের অধিকাংশ উপাদান মূলত বিভিন্ন ঘটনার বিবরণ। এরমধ্যে রয়েছে এক বা একাধিক ঘটনা, পরিস্থিতির বর্ণনা ও এর পরিণতি, কোনো নির্দিষ্ট সময়ের ঘটনার উপর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর পর্ব ইত্যাদি।
একবার একজন নারীর সাথে তার স্বামী ‘এমন এমন’ আচরণ করে। সেই নারী রাসূলের (সা) কাছে হুবুহু নালিশ করে দিলেন। তখন তিনি এ ব্যাপারে ‘এমন এমন’ কথা বললেন। আরেকবার, এক ব্যক্তি রমজান মাসে একটা পাপ কাজ করে ফেলেন। তিনি এর প্রায়শ্চিত্য করতে চাচ্ছিলেন। রাসূলের (সা) কাছে বলার পর তিনি বললেন, এটা করো। কিন্তু তিনি তা করতে পারলেন না। তখন রাসূল (সা) তাকে আরেকটা উপায় বললেন। তিনি তাও করতে পারলেন না। তারপর তাকে আরেকটা উপায় বলা হলো। তিনি তাও পারলেন না। অবশেষে, রাসূল (সা) তার জন্য একটা উপায় বের করলেন। একদিন মদীনার উপকণ্ঠে আগত এক বাণিজ্য কাফেলার উপর লোকেরা হুমড়ি খেয়ে পড়লো। তারা পণ্যের দাম জানতো। এটাও জানতো, ব্যবসায়ীরা শহরের বাজারে এসব পণ্য নিয়ে আসবে। কিন্তু তারা কম দামে কিনে মদীনায় পুনরায় বিক্রি করতে চাচ্ছিল। রাসূল (সা) এটা নিষিদ্ধ করলেন।
এইসব উদাহরণ থেকে সদগুণ, ন্যায়পরায়ণতা, দয়া, সমাজে নারীর ভূমিকা, রাষ্ট্রপ্রধানের ভূমিকা, মুক্ত বাজারের ভূমিকা ইত্যাদির সংজ্ঞা দূরে থাক, ফরমাল কোনো আলোচনায় পর্যন্ত আমরা পৌঁছতে পারি না। আমরা এগুলো থেকে কিছু দৃষ্টান্ত পাই মাত্র। যেমন – ন্যায়পরায়ণতা ও সদাচারণের দৃষ্টান্ত, একজন নারী কী করতে পারে বা বলতে পারে, যার ভিত্তিতে রাসূল (সা) মতামত দেন, রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তিনি কী করেছিলেন, যাদেরকে তিনি বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব দিয়েছিলেন তাদের দায়িত্বপালন ও পরিচালনা সম্পর্কে তিনি কী সমালোচনা বা প্রশংসা করেছেন, তার নজরে পড়া কোনো বিষয়, কোনো ধরনের ক্রয়-বিক্রয়, কোনো ধরনের চুক্তি ইত্যাদি ব্যাপারে তিনি কী ধরনের অর্থনৈতিক আচরণ করেছেন – এসব দৃষ্টান্ত আমরা পাই।
এইসব দৃষ্টান্তে বিচার-ফায়সালার ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা আমরা পর্যবেক্ষণ করি। কারো কোনো আচরণ বা কথা গ্রহণযোগ্য নয় বলে সরাসরি নিন্দা জ্ঞাপন যেমন করা হয়েছে। আবার কখনো কখনো কোনো বিষয়কে উপেক্ষা করা হয়েছে, যাকে ঠিক প্রত্যাখ্যানও বলা যায় না। একইভাবে এর কিছু ইতিবাচক দিকও রয়েছে। উৎসাহ দেয়ার জন্য নানা বৈচিত্র্যময় পদ্ধতির অনুমোদন ছিল। কোনো সাহাবীর কথা বা কাজকে উৎসাহ দিতে শর্তসাপেক্ষে অনুমোদন দেয়া হতো, যেন তিনি আরো ভালো করতে পারেন। কোনো এক পরিস্থিতিতে একটি ব্যাপারকে খুব কঠোরভাবে মূল্যায়ন করা হতো। আবার ভিন্ন পরিস্থিতিতে একে উদারভাবে দেখা হতো। কারণ, মূল্যায়ন করার ক্ষেত্রে লোকদের ভিন্ন ভিন্ন সামর্থ্য কিংবা ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিকে বিবেচনা করা হয়েছে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। কঠোর নিয়মানুবর্তিতা এবং উদার নমনীয়তা – এই দুই ধরনের দৃষ্টান্ত আমরা সুন্নাহর মধ্যে পাই।
গাইডেন্সের অর্থ ও মর্মবাণীর উপর জোর দেয়ার পরিবর্তে আলেমগণ গাইডেন্স থেকে প্রাপ্ত মতামতের (rulings) অর্থ ও মর্মবাণীর উপর অধিক জোর দিয়েছেন। মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যমান বাহ্যিক জটিলতাগুলো মোকাবেলা করার পরিবর্তে তারা নিজেদের ‘অন্তর্গত’ জটিলতাগুলো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। পরবর্তীতে গড়ে ওঠা মতামতগুলোর (rulings) অসামঞ্জস্যতা দূর করা এবং এগুলো ঠিকঠাক করার চেষ্টা তারা করেছেন। তারা সাধারণ আইনী ধারার উপর ভিত্তি করে কোনো বিশেষ আইনী মতামতকে (rulings) সাধারণীকরণের (unify) চেষ্টা করেছে। যেন এইসব অসামঞ্জস্যতার বাস্তবসম্মত যে কারণ ছিল, তা উপেক্ষিত হয়েছিল। অতএব এটা বলা যায়, ইসলামের আইনী মতামতগুলোর প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ সংক্রান্ত পরবর্তীকালের কাজগুলোর ভিত্তিতে নানা মাজহাব বা ডকট্রিন গড়ে উঠেছে।
আমি আশা করছি, এতক্ষণের আলোচনা থেকে আপনি দুটি বিষয় বুঝতে পারছেন, যা আমাদেরকে সাম্প্রতিক কালের ইসলামিক ফাইন্যান্স সম্পর্কে একটা ভারসাম্যপূর্ণ মূল্যায়ন করতে সহায়তা করবে। প্রথমটি হলো, অতীতের মুসলমানরা তাদের দৈনন্দিন জীবনে যেসব সমস্যা ও মতবিরোধের সম্মুখীন হয়েছে, সেগুলো নিয়ে তৎকালীন মুসলিম স্কলারদের জবাব থেকে আমরা দুটি সাধারণ বিষয় চিহ্নিত করতে পারি – প্রাথমিক যুগের বৈশিষ্ট্য এবং পরবর্তীকালের বৈশিষ্ট্য।
প্রাথমিক যুগে কোরআন ও সুন্নাহর গাইডেন্সের প্রতি খুব শক্ত কমিটমেন্ট ছিল। এই দুই উৎসের চূড়ান্ত কর্তৃত্ব বজায় ছিল। লোকেরা তখন কোরআন ও হাদীস মুখস্ত করতো, হানাফী কিংবা শাফেয়ী মাজহাবের বই মুখস্ত করতো না।
পরবর্তীকালের আলেমগণ প্রধানত তাদের অনুসৃত মাজহাবের মতামতগুলোর উপর জোর দিয়েছেন। নিছক আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে তারা মূল উৎসের প্রসঙ্গ টেনেছেন। এটি এক ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক স্থূলতা। তারা মাজহাবীয় মতামতগুলোর স্পষ্টতা ও সামঞ্জস্যতা তৈরি করতে নানা ধরনের যুক্তি খাড়া করেছেন।
এর পরিণতি বিভিন্ন পরিভাষার বিশেষ সংজ্ঞা তৈরি, যেমন – ‘রিবা’র সংজ্ঞা এবং ডকট্রিনগুলোর বিস্তৃতি, যেমন – সমাজে নারীর ভূমিকা, মূল্য নির্ধারণ করা বা না করা সংক্রান্ত শাসকের কর্তৃত্ব ইত্যাদি। বাস্তবক্ষেত্রে, এইসব ডকট্রিন ও সংজ্ঞাগুলো প্রয়োগের স্বার্থে এগুলোর সামঞ্জস্যতা বা গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে আলেমগণ নিষ্ঠার সাথে কাজ করেছেন। এতে করে সংশ্লিষ্ট বিষয়টি স্বয়ং সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। পরবর্তীকালে, লোকেরা শুধু এইসব রুলিং সম্পর্কে প্রচলিত রীতি মেনে চলেছে কিংবা এইসব রুলিংয়ের পেছনের যুক্তি ঠিক আছে কিনা, তাই দেখেছে।
ফলে চূড়ান্ত গাইডেন্সের সাথে সম্পর্কিত সর্বজনীন বক্তব্যের উপর লোকেরা মনোনিবেশ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এতে করে ইসলামী সমাজ আরো বেশি ন্যায়ভিত্তিক, পক্ষপাতমুক্ত কিংবা সামগ্রিকভাবে অধিকতর শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ হয়ে ওঠতে না পারলেও ইসলামী রুলিংগুলোর প্রয়োগ অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে রুলিংগুলোর এবং সম্ভবত যে সমাজে এগুলোর প্রয়োগ হয়েছে সেসব সমাজের ইসলামী বৈশিষ্ট্য নিছক প্রতীকী ব্যাপারে পরিণত হয়েছে।
যাইহোক, আমার কথা হলো – ইসলামিক ফাইন্যান্সের অধীন সম্পাদিত অধিকাংশ লেনদেনের চুক্তি ও পদ্ধতিগুলো নিছক আক্ষরিক ও প্রতীকীভাবে ইসলামিক। কোরআন ও সুন্নাহর গাইডেন্স অনুসারে প্রস্তাবিত সমাধানটি একমাত্র অনুমোদনযোগ্য বিষয় কিনা, যে প্রেক্ষাপটে এই ধরনের চুক্তিগুলো করা হয়েছে তা আদৌ কার্যকর আছে কিনা – সেগুলো যাচাই না করেই পরবর্তী যুগের ক্লাসিক্যাল ফিকাহয় ব্যবহৃত পরিভাষা এবং রুলিংগুলোর ভিত্তিতে তারা আইনী প্রস্তাবনা ও কাঠামো গড়ে তুলেছে।
তবে এই আলোচনায় আমাদেরকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, যে বাধ্যগত পরিস্থিতিতে (burdens of necessity) স্বাধীন মত বেছে নেয়া ও কাজ করার সুযোগ থাকে না, তেমন অবস্থায় ইসলামের গাইডেন্স এক ধরনের ছাড় দেয়। যাতে করে লোকেরা খাপ খাইয়ে নিতে পারে ও এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের চেষ্টা করতে পারে এবং তাদের জীবনযাপন ও বিবেকের উপর আরোপিত বোঝা লাঘবের জন্য আল্লাহর সাহায্য চাইতে পারে।